সারাদেশ

আসল ভোট গণভবনে হয়ে গেছে: রেজা কিবরিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট: গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার দক্ষিণ রসুলপুর গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির উঠানে নৌকা প্রতীকের পোস্টার টানানো ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় তাদের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। 

ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে। একই সাথে ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বাড়িতে ভাঙচুর করাসহ পরিবারের সদস্যদের মারধরেরও অভিযোগ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী  লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজসহ তিনজন নামীয় ও অজ্ঞাত আরও ৪ থেকে ৫ জনের বিরুদ্ধে ফুলছড়ি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। অভিযোগের একটি কপি এসেছে বার্তা২৪.কম এর হাতে।

অভিযোগ দায়ের হওয়ার বিষয়টি বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন ফুলছড়ি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিফুজ্জামান বসুনিয়া। তিনি বলেন, ‘এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযুক্ত অপর দুজন হলেন উপজেলার দক্ষিণ রসুলপুর গ্রামের মৃত মেছের উদ্দিনের ছেলে লিটন মিয়া (৪২)। তিনি বিএনপি নেতা মিলন ও হামিদ মেম্বারের ছোট ভাই বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অপরজন একই এলাকার আনছার আলীর পুত্র আলামিন ইসলাম বাবু।

ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে মো. বাবলু মিয়ার দায়ের করা ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিবারটি জন্মগতভাবেই আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং বর্তমানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা গাইবান্ধা-৫ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপনের সমর্থক। নির্বাচনে তার পরিবারসহ সকলেই নৌকার পক্ষে কাজ করছে। প্রচারণার অংশ হিসেবে তার (বাবলু) বাড়ির উঠানে নৌকার পোস্টার টানানো হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে সম্প্রতি জিএম সেলিম পারভেজ বাবলু মিয়াকে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানা রাব্বী বুবলীর প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে বলেন। তাতে রাজি না হওয়ায় সভাপতি সেলিম পারভেজ তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করবে বলে হুমকি দেয়। 

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার (২১ডিসেম্বর) বিকেলে ফুলছড়ির বালাশীঘাটের নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি অভিযুক্ত লিটন মিয়া ও আলামিন ইসলাম বাবুসহ অজ্ঞাত কয়েকজন ওই বাড়িতে প্রবেশ করে বাবলু মিয়াকে না পেয়ে বিভিন্ন অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এসময় বাবলুর মা (বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী) বেবি বেওয়াকে মারধর করে শ্লীলতাহানী ঘটানোর চেষ্টা করে।

অভিযোগে আরও  উল্লেখ করা হয়,  রাত সাড়ে দশটার দিকে অভিযুক্তরা দ্বিতীয় দফায় আবারও বাবলুর বসতবাড়ি সংলগ্ন জমিতে বাবলুকে একা পেয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারধর করে। পরে চিৎকারে তার স্ত্রী বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করে শ্লীলতাহানী করা হয়।

শুধু তাই নয়, অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এসময় বাবলুর ছেলের মোবাইলে ‘জিতবে এবার নৌকা’ গান শুনতে পেয়ে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্তরা বাড়ির গেট ভেঙ্গে প্রবেশ করে তাদের রান্না করা খাবার লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে নষ্ট করে দেয়। নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার কোনো গান না বাজানোসহ নৌকার প্রচার-প্রচারণা অংশ না নিতেও হুমকে দেয় লিটন। অন্যথায় তিনিও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করার হুমকি দেয়। পরদিন অভিযুক্তদের হাতে জীবনণাশসহ অপুরনীয় ক্ষতির আশঙ্কায় ভিন্ন পথ ধরে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যায় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী (৬৫) বেবি বেওয়া বলেন লিটন নেশা করে এসে আমাকে গালিগালাজ, মারধর করেছে। আমাদেরকে রাব্বীর বেটির (বুবলী) মিটিংয়ে ডাকে যাইনা জন্য এই বয়সে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হয়েই মার খেতে হচ্ছে। ভাতা বন্ধ করে দিলে কি খাব, আমি এর বিচার চাই।

অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বাবলু মিয়া বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। সব সময়ই নৌকায় ভোট দিয়েছি। আমরা নৌকার খাই। কিন্তু তারা (অভিযুক্তরা) স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিটিংয়ে আমাদেরকে ডাকে। নৌকায় ভোট দিলে সেলিম পারভেজ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে দিতে চেয়েছে। আমার বাড়িতে এসে লিটন নৌকর পোষ্টার আগুনে পুড়িয়েছে। লিটন, বাবুসহ অন্যরাও আমাদেরকে মারধর করেছে এবং লিটনও ভাতা বন্ধ করবে বলে হুমকি দিয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা আ.লীগের সভাপতি জি এম সেলিম পারভেজের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *