"দ্বাদশ সংসদ সুযোগ: টেকসই উন্নয়নের জন্য নাগরিকদের সুপারিশ" শীর্ষক গোলটেবিল অনুষ্ঠিত
ডেস্ক রিপোর্ট: ১৯ জানুয়ারি ৮ জন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান যুক্তরাষ্ট্রের জুতা আমদানিকারকদের সংগঠনের কাছে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশে যে সকল কারখানায় তারা তাদের যে পণ্য প্রস্তুত করে সেই সকল কারখানায় যেন শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা হয়। তারা প্রস্তাবিত ১১৪ ডলার সর্বনিম্ন মজুরিকে অনেক কম বলে অভিহিত করেন এবং জুতা প্রস্তুতকারী মার্কিন সংগঠকদের কাছে প্রস্তাব পেশ করেন তারা যেন বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে চাপ দেয় শ্রমিকদের মজুরি ২০৮ ডলার বা ২৩ হাজার টাকা করার জন্য।
যদিও কংগ্রেসম্যানদের প্রস্তাবের সাথে এটাও বলে যে মার্কিন জুতা আমদানিকারকরা যেন বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যর দাম বাড়ায়, যেন কারখানাগুলো ২০৮ ডলারের ন্যূনতম মজুরি শ্রমিকদের দিতে পারে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যূনতম মজুরির তুলনা:
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর সম্প্রতি প্রকাশিত HIES (The Household Income and Expenditure Survey) রিপোর্টে দেখা যায় বাংলাদেশে শহরে গড় আয় ৪৫,৭৫৭ টাকা, আর সম্প্রতি প্রস্তাবিত গার্মেন্টসে সর্বনিম্ন মজুরি ১২,৫০০ টাকা।
আমেরিকায় গড় আয় মাসে ৫৩৪৭.৪৯ ডলার আর সর্বনিম্ন মজুরি ৭.২৫ ডলার প্রতিঘণ্টা। যদিও বড় শহরগুলো যেমন নিউইয়র্ক বা ওয়াশিংটনে ঘণ্টায় ১৭ ডলার পর্যন্ত সর্বনিম্ন মজুরি পাওয়া যায়, আর বেতন হিসাবে বড় শহরগুলোতে আয় ১০ হাজার ডলারের উপরে থাকে, তারপরেও আমরা পরিসংখ্যানের হিসাবের জন্য আমেরিকায় সর্বনিম্ন মজুরি ৭.২৫ ডলার আর বেতন ৫,৩৪৭.৪৯ ধরে নিচ্ছি।
পার ক্যাপিটা আয়ের হার
সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাংকের ডাটা অনুযায়ী বাংলাদেশের পার ক্যাপিটা ইনকাম ৬৮৪০ ডলার, আর আমেরিকার পার ক্যাপিটা ইনকাম ৭০,৪৮০ ডলার। পার ক্যাপিটা হিসাবে যদি বাংলাদেশ আর আমেরিকার আয়ের তুলনা করা হয়, তাহলে দেখা যায় আমেরিকায় একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি পার ক্যাপিটা আয়ের ২০.৭৩% মাত্র। আর সদ্য ঘোষিত হওয়া বাংলাদেশের ১২,৫০০ টাকার সর্ব নিম্ন মজুরিকে ডলারে কনভার্ট করে যদি পার ক্যাপিটা ইনকামের সাথে তুলনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন মজুরি পার ক্যাপিটা ইনকামের ২০.১২%। অর্থাৎ আমেরিকার অর্থনীতির নিরিখে সর্বনিম্ন মজুরির হার এর সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরিখে সর্বনিম্ন মজুরির মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। পার্থক্যটা মাত্র ০.৬১%।
অথচ আমেরিকার ৮ কংগ্রেসম্যান যেই চিঠি লিখেছে, সেখানে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন মাসিক মজুরি ২০৮ ডলার করার দাবি জানিয়েছে। সেটা হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হিসাবে সর্বনিম্ন মজুরির শতকরা হার দাঁড়াবে ৩৬.৪৯%। আমেরিকার মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশে যদি শ্রমিকরা পার ক্যাপিটা ইনকামের ২০.৭৩% মজুরি পায় বছরে, তাহলে কীভাবে বাংলাদেশের মতো স্বল্প আয়ের দেশের শ্রমিকদের জন্য পার ক্যাপিটার ৩৬.৪৯% মজুরি প্রস্তাব করে?
এটা কোন যুক্তিযুক্ত কথা না। এটা হচ্ছে জোর করে চাপিয়ে দেয়া, এর মধ্যে কোন নীতি নাই আদর্শ নাই, আছে অবদমনের চেষ্টা।
খরচের তুলনা
NUEMBO নামে একটি সাইট আছে, যারা প্রতিটা দেশের জীবন ধারণের জন্য সকল প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম পর্যালোচনা করে। ডিসেম্বর ২০২৩-এ তাদের আপডেটেড ডাটা অনুযায়ী দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লিভিং ইনডেক্স তুলনায় ভারতের দিল্লি বা বাংলাদেশের ঢাকার লিভিং ইনডেক্স খুবই কম। এ তো গেলো তাদের করা একটি কম্পারিজন। কিন্তু বাংলাদেশের করা HIES এর জরিপে করা বর্তমানের প্রতিটা পরিবারের খরচের যে ১৩টা খাত উল্লেখ করা হয়েছে, তার সাথে আদি আমেরিকার একটা শহরের খরচের খাতগুলো তুলনা করা হয় তাহলে কেমন হতে পারে?
দুই দেশের খরচের খাতের হিসাবগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের হিসাবে দুই দেশেরই খরচের কিছু তারতম্য আছে। আমেরিকায় খাদ্যদ্রব্য, চিকিৎসা ও পণ্য কম মূল্যে পাওয়া যায়, কারণ তাদের বেতন বা মজুরি থেকে ২০-৩৫% পর্যন্ত ইনকাম ট্যাক্স কেটে নেওয়া হয় যার বিনিময়ে নাগরিক সুবিধাদি দেওয়া হয় কম মূল্যে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে ১০% মানুষও ইনকাম ট্যাক্স দেয় না, বেতনের পুরা টাকাই তারা উপভোগ করে, বিনিময়ে বেশি মূল্যে সেবা ও খাদ্য ক্রয় করে থাকে। এই অতিরিক্ত ট্যাক্স প্রদানের কারণে যদিও আমেরিকায় একটি পরিবারের খরচ ও চিকিৎসা খরচ বাংলাদেশে অর্ধেক, কিন্তু আবাসন খরচে আমেরিকায় আমাদের তুলনায় দ্বিগুণ খরচ করতে হয়।
নিম্ন আয় বা ট্যাক্স প্রদান না করলে কী হয়?
আমেরিকায় যারা ৭.২৫ ডলারের সর্বনিম্ন মজুরিতে কাজ করে, এই খরচের অনুপাত তাদের জন্য দুর্বিষহ জীবনের সামিল। আবার যারা ট্যাক্স দেয় না, তাদের প্রায় দেড়গুণ দামে খাদ্য পণ্য কিনতে হয়। চিকিৎসার কথা তো ট্যাক্স না দেয়া মানুষের পক্ষে কল্পনা করা মোটেও সম্ভব না।
উপরের উপাত্ত ছিল আমেরিকার মধ্যবিত্ত মানের একটি শহরের খরচের হিসাব। কিন্তু বড় শহরগুলো যেমন নিউইয়র্ক বা ওয়াশিংটনে, গড় আয়ের মানুষের পক্ষে জীবন ধারণ করা সম্ভব না। যদি অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের জন্য গড় আয় হয় ৫৩৪৭ ডলার, তাহলে বড় শহরগুলোতে মাসে ১০ হাজার ডলার আয়ের নিচে কারো পক্ষে জীবন ধারণ করা সম্ভব না।
NUMBEO সাইটের তথ্যমতে টেক্সাস আর ঢাকার সূচকের পার্থক্য নিম্নরূপ:
সব সূচকেই বাংলাদেশে সুবিধাজনক অবস্থা থাকলেও, শুধু ক্রয় ক্ষমতায় বাংলাদেশ আমেরিকার মধ্যম আয়ের অঙ্গ রাজ্যের চেয়ে নিচে আছে।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।