আন্তর্জাতিক

মালয়েশিয়ায় ‘অভিবাসী শ্রমিক’ আতঙ্ক, পুলিশের অভিযান!

ডেস্ক রিপোর্ট: সম্প্রতি অনথিভুক্ত অভিবাসী কর্মীদের বিরুদ্ধে বার বার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে মালয়েশিয়ায়। এতে করে দীর্ঘদিন থেকে স্বল্প বেতনের অভিবাসী কর্মীর ওপর মালয়েশিয়ার যে নির্ভরশীলতা এবং বহিরাগতদের প্রতি ভয় (জেনোফোবিয়া) দুই মিলে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশটিতে।

বৃহস্পতিবারের (২৩ ডিসেম্বর) জালান তুন তান সিউ সিনে অভিযানের পর এক হাজার ১০০ এর বেশি অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, এই এলাকায় বাংলাদেশিদের ব্যবসা এবং শ্রমিকদের আধিপত্য রয়েছে। জালান তুন তান সিউ সিনকে ‘মিনি ঢাকা’ বলে অভিহিত করেছেন স্থানীয়রা।

এই অভিযানে রয়্যাল মালয়েশিয়ান পুলিশের এক হাজারেরও বেশি কর্মকর্তাকে দেখা গেছে। এই পুলিশ সদস্যরা সাধারণত মালয়েশিয়ায় বিদ্রোহীদের দমন এবং সন্ত্রাসবাদ দমাতে কাজ করে। তাদের অভিবাসী কর্মীদের প্রাসঙ্গিক নথি পরীক্ষার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে।

জালান তুন তান সিউ সিনে বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই অভিবাসীদের মালিকানাধীন। এখানে রেস্তোরাঁ, টেলিকমিউনিকেশন স্টোর এবং রেমিট্যান্স অফিস রয়েছে। যেগুলোর অধিকাংশের মালিক বাংলাদেশিরা। এছাড়া এই এলাকার বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজও করেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা।

বর্তমানে ক্রিসমাসের ছুটি চলছে। এরপরও বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবারের অভিযানের পর অনেকে ভয়ে রয়েছেন, বলে জানান বাংলাদেশি ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান। তিনি দীর্ঘদিন থেকে এই এলাকায় লাগেজের ব্যবসা করে আসছেন।

অভিযান পরিচালনা করায় মালয়েশিয়ার নেটিজেনদের কাজ থেকে বেশ প্রশংসা পেয়েছে পুলিশ। নেটিজেনরা বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের ‘অহংকারী ও স্থানীয়দের মতো আধিপত্য বিস্তার’ করার চেষ্টা করে বলে সমালোচনা করেছেন।

করোনা মহামারির শুরু পর ২০২০ সালের মে মাসে জালান তুন তান সিউ সিনে অভিযান চালিয়ে কয়েকশ অবৈধ শ্রমিক আটক করা হয়েছিল। এবার অভিযানে ওই সময়ের থেকে বেশি শ্রমিক আটক করা হয়েছে।

অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন আদ্রিয়ান পেরেইরা। তিনি বলেছেন, অভিবাসীদের প্রতি কিছু মালয়েশিয়ানদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব দেখে তিনি আতঙ্কিত। এমন আচরণকে তিনি সমাজের ব্যর্থতা বলে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণরূপে অবাঞ্ছিত, অত্যন্ত খারাপ, বর্ণবাদী এবং জেনোফোবিক (বিদেশির ভয় পাওয়া) কর্মকাণ্ড। আমাদের মানসিকতা এবং বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছু ভুল রয়েছে।

এদিকে, দেশটির সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন নাগরিকের দেশে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন বৈধ অভিবাসী শ্রমিক বসবাস করছে।

জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটিতে অবৈধ শ্রমিক রয়েছে ১ দশমিক ২ থেকে ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন। যা মালয়েশিয়াকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অভিবাসী-গ্রহণকারী দেশে পরিণত করেছে।

এক্স-এর একটি পোস্টে দেশটির অর্থমন্ত্রী রাফিজি রামলি বলেন, অভিবাসী কর্মীদের ওপর মালয়েশিয়ার ব্যাপক নির্ভরতা ‘কাঠামোগত ব্যর্থতা’। সেই সঙ্গে স্থানীয়দের দিয়ে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরিকল্পনা বিমুখ বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, এর প্রভাব কেবল স্থানীয়দের চাকরির সুযোগের ওপর নয় বরং মুদ্রা প্রবাহের ওপরও পড়েছে। এই শ্রমিকরা যখন প্রতি মাসে তাদের বেতন বাড়ি পাঠায় তখন এই মুদ্রা প্রবাহ দেখা যায়।

রাফিজি আরও বলেন, এটি মালয়েশিয়ান রিংগিতের মূল্যকেও প্রভাবিত করেছে।

অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, যখন আমরা নিয়োগকারীদের জিজ্ঞাসা করি, তারা বলেন- বেতনের কারণে স্থানীয়রা কিছু শিল্পে কাজ করতে চান না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা অবৈধ শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *