সারাদেশ

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে বিএনপি: কাদের

ডেস্ক রিপোর্ট: ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয় বনানীতে ভিড় করতে শুরু করেছেন। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে প্রায় ১৫ জনের অধিক প্রার্থীকে দেখা গেছে। আরও অনেকেই নাকি আসার পথে রয়েছেন এমনই তথ্য জানিয়েছেন তারা।

তাদের মধ্যে ছিলেন পাবনা-১ আসনের প্রার্থী সরদার শাহজাহান, বগুড়া-১ আসনের মো. গোলাম মোস্তফা বাবু মন্ডল, বগুড়া-৬ আসনের আজিজ আহমেদ রুবেল, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মোক্তার হোসেন ও ফরিদপুর-১ আসনের আক্তারুজ্জামান খান।

নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে ঢাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে কোনো রাখঢাক না করে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের প্রার্থী মো. গোলাম মোস্তফা বাবু মন্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ফোন করেছিলাম পার্টির মহাসচিবকে, তিনি রিসিভ করেননি। আমি এসেছি চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলতে।পার্টি তহবিল দিলে নির্বাচন করবো, না হলে বসে যাবো। সরকারকে বৈধতা দেওয়ার এই নির্বাচনে আমি কেনো নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করবো। ভোট সেন্টার প্রতি ১ হাজার টাকা দিলেও দিনে প্রায় দেড় লাখ টাকা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, পার্টি ২৬ আসন নিয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। তখনেই অবস্থান পরিষ্কার হয়ে গেছে। সমঝোতা না হলে অন্য কথা ছিল। তখন আওয়ামী লীগের এন্টি ভোটে জিতে আসার সুযোগ ছিল। এই নির্বাচন নিয়ে চারবার নির্বাচন হবে, দুই বার উপজেলা পরিষদে ভোট করেছি। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাত্র ১ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছি। সমঝোতা করায় ভোটারদের নানান প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।

নোয়াখালী জেলার একটি আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এক প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আজকে অফিস করার কথা ছিল। সে কারণে অনেকেই আসা শুরু করেছিলেন। দুপুরের খবর হচ্ছে তারা আজকে আসছেন না, কালকে (২৬ ডিসেম্বর) অফিসে আসতে পারেন। তাই অনেকে রাতে ঢাকায় আসবেন বলে মনস্থির করেছেন।

তাদের ঢাকার আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাই। পার্টি নির্বাচনী তহবিল না দিলে সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো। সেখানে হয়তো ৫০ থেকে ৭০ জন প্রার্থী হাজির থাকতে পারেন। এমনকি এই সংখ্যা শতক পার হয়ে যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ভোট চাইতে গেলে লোকজন বলে আপনারা কেনো ভোট চান। জাতীয় পার্টিতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। ২৬ জনের বিজয় নিশ্চিত করতে গিয়ে আমাদের বলি দেওয়া হয়েছে। এখন নিজের টাকা খরচ করবো কেনো। পার্টি ফান্ড দিলে নির্বাচনে আছি, না হলে নেই। এখন সরে গেলে অর্থ লোকসান থেকে বেঁচে যাবো। মনোনয়নপত্র দাখিল করার পর প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত আমাদের বসিয়ে রাখা হয়েছিল। নির্বাচন যাবো কিনা সেই সিদ্ধান্ত ঝুলে রাখা হয়। এ কারণেও আমরা মাঠে পিছিয়ে পড়েছি।

ইতোমধ্যেই জাতীয় পার্টির ৩ জন প্রার্থী সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাকির হোসেন। জাতীয় পার্টির রায়গঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠে ছিলাম বেশ কয়েকটি নির্বাচনী অফিস করেছিলাম। নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার পর থেকে সব শেষ হয়ে গেছে। অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর শেষ মুহূর্তে ২৬ আসনের সমঝোতার কথা ইঙ্গিত করেছেন।

অন্যদিকে ২১ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের প্রার্থী আলাউদ্দিন মৃধা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি ও নাটোরের অন্যান্য আসনে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নতুনদের মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষের কথা জানান তিনি। মৌলভীবাজার জেলার একজন প্রার্থীও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির নির্বাচন মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সঙ্গে যারাই যোগাযোগ করছেন, তাদের কমন প্রশ্ন নির্বাচনী তহবিল দেওয়া হবে কিনা। নির্বাচনী তহবিল দেওয়া না হলে সরে যাওয়ার কথাও জানাচ্ছেন অনেকেই।

নির্বাচন মনিটরিং কমিটি সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বেশিরভাগ ফোন আসছে নির্বাচনী খরচের টাকা দেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে জানার জন্য। এখনও তহবিল বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পার্টি ফান্ড দেবে এটাও সিদ্ধান্ত হয়নি, আবার দেবে না এমন সিদ্ধান্তও হয়নি।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম জহির বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, হ্যাঁ এ কথা সঠিক কিছু প্রার্থী বনানী অফিসে আসছেন। তারা পার্টির সার্পোট পাওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নিতে চাচ্ছেন।

অনেক বড় একটি সংখ্যা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে যাচ্ছেন এমন কোনো খবর তার জানা নেই বলেও জানান।

১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ মুহূর্ত মুহূর্ত চলে নাটকীয়তা। শেষ মুহূর্তে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেয় জাপা। একই সময়ে আওয়ামী লীগ পৃথক সাংবাদিক সম্মেলন করে জাপাকে ২৬ আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। সিনিয়র নেতা এবং বর্তমান কয়েকজন এমপি সমঝোতার তালিকায় না থাকা, বিপরীতে জিএম কাদেরের সহধর্মিনীর ঢাকা-১৮ আসন পাওয়া নিয়ে সন্দেহ ও অবিশ্বাস বেড়েছে।

এমনিতেই জাপায় নেতৃত্ব সংকট প্রকট হচ্ছে। তারমধ্যে এসব প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নিষ্ক্রিয় হলে পার্টির জন্য বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। অনেক প্রার্থীই জাপার রাজনীতি না থাকার আভাস দিয়েছেন।

নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে জাতীয় পার্টি। ছেলে সাদ এরশাদের আসন নিয়ে টান দেওয়া এবং অনুসারীদের মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ায় গত ২৯ নভেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। দলটি ২৯৪ আসনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দিলেও ৬ জন প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। নির্বাচন কমিশন বাছাই শেষে ২৭২ আসনে জাপার প্রার্থীদের বৈধ ঘোষণা করে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে (১৭ ডিসেম্বর) কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। শেষ পর্যন্ত ২৬৫ আসনে প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পান বলে জাপা সূত্র জানিয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *