চট্টগ্রামে মূল্য তালিকা ছাড়া আলু বিক্রি, ৪ আড়তদারকে জরিমানা
ডেস্ক রিপোর্ট: আমরা কেউই বাজারকে বুঝি না: ড. শামসুল আলম
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, মোটাদাগে বলা যায় আমরা কেউই বাজারকে বুঝিনা। বাজারকে কার্যকর হতে দেই না, যে কারণে এই সংকট।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, বাজারকে বাধা দেই সেভাবে সহায়তা করি না। সরকারের মূল কাজ হচ্ছে কোয়ালিটি নিশ্চিত করা। বাজারকে বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। ক্লোন্ড স্টোরেজে ঢু-মেরে জরিমানা করলাম এটা করে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। কয়টা দোকানে যেতে পারবো!
তিনি বলেন, ক্লোন্ড স্টোরেজ কৃষকের আলু মজুদ রাখে, ওরা যদি মজুদ না রাখে তাহলে আলু পচে যাবে। মৌসুমে যখন আলু কম উৎপাদন হয়েছে তখনই আমদানি করা উচিত ছিল। বাজারের সরবরাহ ঠিক থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ব্যবসায়ীরা মুনাফা করতে চাইবে এটা তাদের চরিত্র। মুনাফা করার জন্যই তারা ব্যবসা করে। তবে তাদের মধ্যে কোন এথিকস নেই। বাজারগুলোকে কার্যকর করতে মনিটরিং জোরদার করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই আমলা।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ থেকে অর্থ নেই এ কথা ঠিক, তবে প্রকল্প হয় বাংলাদেশের জাতীয় প্রয়োজন ও বাস্তবতার আলোকে। দাতাদের প্রেসক্রিপশনে কোন প্রকল্প নেওয়া হয় না। বাংলাদেশ এখন সবদিক দিয়ে এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ দেশীয় বিশেষজ্ঞদের গাইডলাইনে করা হয়েছে। বিদেশি টিম থাকলেও মূল কাজটি দেশীয় বিশেষজ্ঞরাই করেছেন। জাতীয় প্রয়োজন ও বাস্তবতা অনুযায়ী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
শামসুল আলম বলেন, ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে অতিবন্যা রোধ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হতদরিদ্র নির্মূল করা। প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনে ৫০ হাজার লোক ঘরবাড়ি হারায়। ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় স্বল্পমেয়াদী ২০৩০ সাল পর্যন্ত এবং মধ্যমেয়াদী ২০৫০ সাল পর্যন্ত কর্মসূচি রয়েছে। মধ্যবর্তী মূল্যায়ন করে বাস্তবতার ভিত্তিতে পরিবর্তন আসতে পারে। এতে ৮০টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে। ২০২৫ সালের পর থেকে আড়াই শতাংশ হারে ব্যয় হবে। বাংলাদেশের মোট বিনিয়োগের ৮৭ শতাংশ বেসরকারি খাতে অবদান রয়েছে। সে কারণে এখানে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি বর্ষাকালে বাংলাদেশে নৌপথের দৈঘ্য হয় ২৪ হাজার কিলোমিটার। আর শুষ্ক মৌসুমে সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটারে নেমে আসে। আমরা যদি এটাকে ধরে রাখতে পারতাম, তাহলে পরিবহন খরচ কমে আসতো।
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের লক্ষ্য নয়। বন্যার পানির মাধ্যমে পলিমাটি আমাদের জমির উর্বরতা বাড়িয়ে দেয়। বছরে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন টন পলি বহন করে। নদীগুলোর নাব্যতা বৃদ্ধি করে অতিবন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। একই সঙ্গে নদীর প্রকৃত অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়ে বিপুল পরিমাণ জমি উদ্ধার করা সম্ভব। যমুনা নদীতে কোথাও কোথাও ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রস্ততা রয়েছে। এখানে যদি ৬ কিলোমিটারও কমানো যায় তাহলে বিপুল জমি বের হবে।
সত্তরের দশক থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রার গড় বের করেছি। ১৯৭১ এর দশকে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি, ২০১৬ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি। অন্যদিকে সত্তর দশকে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ছিল ৬০২ দশমিক ৩৩ মিলিমিটার। আর ২০১৬ সালে ৪০৮ দশমিক ৮৩ মিলিমিটার।
তিনি বলেন, বিশ্বে ১০টি ব-দ্বীপ দেশ রয়েছে। বাংলাদেশ প্রথম শতবছরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এটি জাতীয় দলিল হিসেবে কাজ করবে। এককভাবে বলতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শিতার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্লানের কারণে প্রশ্ন তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে মিডিয়াকর্মীদের প্রশ্ন তোলা উচিত। তাদের সোচ্চার থাকা উচিত। যাতে কেউ এর ব্যত্যয় না করতে পারে। এটা করতে না পারলে ধান উৎপাদন ১২ থেকে ১৭ শতাংশ এবং গম উৎপাদন ১২ থেকে ৬১ শতাংশ কমে যেতে পারে। গড় কৃষি উৎপাদন ৩১ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সুফী জাকির হোসেন, পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রকৌশল) মো. নজরুল ইসলাম, পরিচালক একেএম আজিজুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সেক্রেটারীয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।