সারাদেশ

‘ভোট কিন্তু হয়ে গেছে ২৬ তারিখে এটা মানেন?’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দলের দু’টি পক্ষ। নেতাকর্মীদের উস্কে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। জনসম্মুখে বিভিন্ন রকম বেফাঁস কথাবার্তা বলছেন তার গ্রুপের নেতারা। নৌকা প্রতীক পাওয়ার দিনই বাগমারায় ভোট হয়ে গেছে বলে প্রার্থী নিজেই প্রকাশ্যে বলেছেন। একজন নেতা বলেছেন, ‘ফেরেশতা এসে ভোট দিলেও এনামুল (স্বতন্ত্র প্রার্থী) পাস করবে না।’
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাগমারার মাড়িয়া ইউনিয়নের শিকদারী এলাকায় নির্বাচনী এক পথসভায় প্রকাশ্যে এসব বক্তব্য দেয়া হয়। নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আবুল কালাম আজাদ তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান এমপি এনামুল হক এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

বৃহস্পতিবার শিকদারী পেট্রোল পাম্পের সামনে নির্বাচনী পথসভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আপনারা এখানে কোনো আপত্তি করবেন না; ভোট  দেবেন, ভোট কিন্তু হয়ে গেছে ২৬ তারিখে- এটা মানেন? ২৬ তারিখে যখন নৌকা আবুল কালাম আজাদ পেয়েছে, তখন বাগমারাতে ভোট হয়ে গেছে। ২৬ তারিখে যে আনন্দ বাগমারাতে হয়েছে, এক ভাই বলেছে, এ আনন্দ ঈদেও হয় না।’
মাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘আপনারা ভয় পাবেন না। এনামুল হক কোনোদিন ভোটে পাস করবে না।

যদি স্বয়ং আল্লাহর ফেরেশতা এসে ভোট দেয়, তাও পাস করবে না। উনার অপরাধের শেষ নাই।’

 

পথসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সোবহান চৌধুরীর ছেলে মাজেদুর রহমান মিঠু বলেন, ‘মনোনয়নপত্র ডিক্লারেশনের আগে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল বিভিন্ন জনসভায় বিভিন্ন পার্টি অফিসে আওয়ামী লীগ যারা করে, সকলকে তিনি শপথ করিয়েছিলেন, ‘আপনারা সকলেই নৌকার বাইরে যাবেন না, নৌকা প্রতীকে সিল দেবেন।’ এ অঙ্গীকার এ ওয়াদা উনি নিজেও করেছিলেন, সবাইকে দিয়ে করিয়েছিলেন। আজ উনি নিজেই সেই ওয়াদা ভঙ্গকারী।

মিঠু উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রশ্ন করেন, ওয়াদা ভঙ্গকারীকে কী বলা হয় ভাইয়েরা? উপস্থিত সবাই উত্তর দেন, ‘মুনাফিক।’ এ সময় মিঠু বলেন, সরাসরি তিনি (এনামুল) জাহান্নামে যাবেন। উনি একজন জাহেল, মিথ্যাবাদী। এমপি এনামুল হক কোটি কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

এর আগে ১লা ডিসেম্বর দেয়া এক বক্তব্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৮ই ডিসেম্বরের পর ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপিকে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। পরে এসব বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ই ডিসেম্বর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদকে শোকজ করে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া গত ২২শে ডিসেম্বর গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেঁউখালী গ্রামে এনামুল হকের সমর্থকদের ওপর হামলা করার অভিযোগ ওঠে আজাদ গ্রুপের বিরুদ্ধে। হামলায় এমপি এনামুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী আতাউর রহমানসহ ৪ জন আহত হন বলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ।

এ বিষয়ে এমপি এনামুল হক বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেন নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, কাঁচি প্রতীকের লোকজন উস্কানি দিচ্ছে। টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন এমপি এনামুল। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর এনামুলের ‘পাপের প্রায়শ্চিত’ হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *