সারাদেশ

মেট্রোরেলের সব স্টেশন চালু হচ্ছে আজ

ডেস্ক রিপোর্ট: সিলেটকে বলা হয় দ্বিতীয় লন্ডন। আবার বলা হয় প্রকৃতিকন্যা ও পূণ্যভূমির রাজধানী। তাই এ অঞ্চলের মানুষের রয়েছে আলাদা একটা সুনাম ও খ্যাতি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সিলেটি মানুষ। ফলে ভিনদেশিদের কাছেও এই অঞ্চলের পরিচিতি রয়েছে অনেক। এখানকার মানুষের প্রতি অন্য জেলা বা দেশের মানুষেরও রয়েছে আলাদা একটা মায়া।আর সেই মায়া কখন যে ভালোবাসায় পরিণত হয়ে যায় বলা মুশকিল।

কথায় আছে প্রেম মানে না কোনো জাতি-ধর্ম, শত্রু-মিত্র কিছুই। শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে কেউ ছুটে আসে প্রেমিকের কাছে আর কেউবা ছুটে যান প্রেমিকার জন্য। ভিনদেশী তরুণ ও তরুণীরা প্রেমের টানে নিজ দেশ ত্যাগ করে ছুটে আসছেন বাংলাদেশে। কেউবা অবৈধপন্থায় আসা যাওয়ায় আটক হতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেট বিভাগও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতিবছরেই এরকম ঘটনা প্রায় শোনা যায়। চলতি বছর শেষ হতে বাকি আর একদিন। এরমধ্যে সিলেট থেকে কোনো তরুণ প্রেমিকার জন্য ভিন দেশে না গেলেও ভিনদেশি তরুণীরা ছুটে এসেছেন সিলেটে।

তাদের কেউবা এসেছেন কাটা তারের সীমানা অতিক্রম করে আর কেউ নদী-সমুদ্র পাড়ি দিয়ে নিজ দেশ ছেড়ে চলে এসেছেন সিলেটে। একজন বা দুজন নয়। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে এই বছরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত মোট ৪ জন বিদেশি প্রেমিকা ছুটে এসেছেন সিলেটে। আর প্রেমিকের জন্য সিলেট ছেড়ে ভারতে গিয়েছেন এক তরুণী।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

জানা যায়, সিলেটে আসা ৪ তরুণীর মধ্যে রয়েছেন জার্মানির এক শিক্ষিকা, মালয়েশিয়ান এক তরুণী, ভারতের দুই তরুণী সিলেট ও সুনামগঞ্জে আসে, আর মৌলভীবাজার থেকে ভারতে যান এক তরুণী।

প্রেমের টানে জার্মান তরুণী সিলেটে:

গত ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের বিশ্বনাথে প্রেমের টানে জার্মানি থেকে এক তরুণী ছুটে আসেন। এরপর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন প্রেমিকের সাথে।

জার্মান তরুণীর নাম মারিয়া। তার প্রেমিক বিশ্বনাথ পৌরসভার শ্রীধরপুর গ্রামের আরিছ আলীর ছেলে আব্রাহাম হাসান নাঈম। গত ৫ জানুয়ারি জাঁকজমক আয়োজনে বিয়ে হয় তাদের।

নাঈমের চাচাতো ভাই আবদুল বাতিন জানান, মারিয়া জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এ ছাড়া পিএইচডিও করছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, তার চাচাতো ভাই নাঈমের সঙ্গে মারিয়ার পরিচয় হয় বিশ্বনাথের এক ব্যক্তির মাধ্যমে। সামাজিক মাধ্যমে ধীরে ধীরে নাঈম ও মারিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। একপর্যায়ে উভয়ের পরিবার তাদের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মারিয়া জার্মানি যেতে আমন্ত্রণ জানান নাঈমকে। তবে নাঈম মারিয়াকে বাংলাদেশে আসতে বলেন। এরপর গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন মারিয়া। বড়সড় আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) মুসলিম রীতিতে তাদের বিয়ে হয়।

মালয়েশিয়া থেকে প্রেমের টানে হবিগঞ্জে মালয়েশিয়ান তরুণী :

মালয়েশিয়া থেকে প্রেমের টানে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আসেন নূর ফাতিম। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি।

নূর ফাতিমের সঙ্গে হবিগঞ্জের একটি আদালতে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয় বানিয়াচং উপজেলার কবিরপুর গ্রামের আবদুর রকিব খান রাজার। এরমধ্য দিয়ে চার বছরের প্রণয়ের সম্পর্ককে পরিণয়ে রূপ দিলেন এই যুগল।

সে সময় ফাতিম অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেছিলেন, বাংলাদেশ আমার ভালো লেগেছে। এখানকার পরিবেশ, আতিথেয়েতা ও সবার ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। খাবারের মধ্যে এখানকার মাংসের কারি ও দই খুব ভালো লেগেছে।

বর আব্দুর রকিম খান রাজা জানিয়েছিলেন, তিনি ২০১৬ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া যান। এরপর ফাতিমের সঙ্গে তার পরিচয়। গত চার বছর ধরে তারা প্রেম করেছেন। কয়েকদিন আগে দুই পরিবারের অভিভাবকদের সম্মতিতে বাংলাদেশে আসেন।

প্রেমের টানে সিলেটে দুই ভারতীয় তরুণী:

চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ও ১৯ জুলাই ভারত থেকে দুই তরুণী প্রেমের টানে চলে আসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে। ৯ ফেব্রুয়ারি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার গোয়াবাড়ী মুজিবনগর এলাকা থেকে নাইকো দাস (১৯) ভারতীয় এক তরুণীকে আটক করে বিজিবি। তিনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডাউকী নতুন বস্তি গ্রামের গোপাল দাসের মেয়ে।

নাইকো জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে উপজেলার নিজপাট উজানীনগর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলের সঙ্গে পরিচয় তার। পরিচয়ের একপর্যায়ে আলাউদ্দিনের ছেলের পরামর্শে তিনি বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি বাংলাদেশে আসেন।

একই বছরের ১৯ জুলাই মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। একজন বাংলাদেশের, অন্যজন ভারতের। তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়। পরিচয় থেকে চুটিয়ে প্রেম। কিন্তু প্রেমের পুর্নতায় বাধা ছিল পরিবার, জাতীয়তা ও ভৌগলিক সীমানা। তিন বছরের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। পরিবারকে বুঝিয়ে পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে কাঁটাতারের সীমানা পেরিয়ে সুনামগঞ্জে প্রেমিকের বাড়িতে আসে প্রেমিকা।

আলেচিত এই প্রেমিকযুগল হলেন- ভারতের আসাম প্রদেশের শোনিতপুর বালিডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল কাচিম শেখের কন্যা কারিশমা শেখ ও বাঙালি প্রেমিক সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের চরগাঁও গ্রামের আলফাজ উদ্দিনের কলেজ পড়ুয়া ছেলে আশরাফুল আলম (২২)। আশরাফুল বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দীগেন্দ্র বর্মণ সরকারি ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

প্রেমের টানে ভারত গেলেন মৌলভীবাজারের গৃহবধূ:

গত ২৯ অক্টোবর বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, ভারতীয় এক যুবকের প্রেমের টানে সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরায় প্রবেশ করেন ফাতেমা নুসরাত নামে ২৪ বছর বয়সি এক গৃহবধূ। বেশ কিছুদিন ওই ভারতীয় প্রেমিকের সাথে ঘরও করেন। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

ফাতেমা নুসরাত মৌলভীবাজারের বাসিন্দা। তার স্বামীর নাম আব্দুল মুমিন। তিন বছরের এক সন্তান রয়েছে তাদের।

এদিকে, পেশায় একজন গ্রাম্য কবিরাজ চিকিৎসক ৩৪ বছর বয়সী নুর জালাল ওরফে সাদ্দামের বাসা আসাম-ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী এলাকার উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর মহকুমার পূর্ব ফুলবাড়ী গ্রামে। নিজের পেশাগত কাজেই মাঝে মধ্যেই তাকে বাংলাদেশে যেতে হতো। আর সেখানেই দুই মাস আগে তার সাথে পরিচয় হয় ফাতেমার, পরে সেই সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে।

পুলিশের কাছে নুসরাত জানায় বাংলাদেশে গেলেই মৌলভীবাজারে তার শ্বশুর বাড়িতে যেতেন নূর জালাল এবং প্রায় প্রতিদিনই তাদের দুজনের মধ্যে সাক্ষাৎ হতো। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক যখন গাঢ় হয়, উভয়ই উভয়কে বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন তারা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় ফাতেমার আগের বিয়ে। স্বাভাবিকভাবে ফাতেমা সিদ্ধান্ত নেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে প্রেমিকের হাত ধরে ভারতে পালিয়ে এসে বিয়ে করবেন এবং সেখানেই নতুন সংসার করবেন।

ভারতীয় প্রেমিকের হাত ধরেই বাংলাদেশ থেকে ভারতের ত্রিপুরায় নূর জালালের পূর্ব ফুলবাড়ী গ্রামের বাড়িতে এসে ওঠেন ফাতেমা। গত প্রায় ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে সেখানেই ছিলেন বসবাস করছিলেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হতে সময় নেয়নি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *