সারাদেশ

পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ, আটক ২ শতাধিক

ডেস্ক রিপোর্ট: আর মাত্র কয়েকঘণ্টা অপেক্ষা। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন ঘোষণার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে এক অধ্যায়ের নতুন সূচনা ঘটবে। উদ্বোধনের পরই গাড়ি ছুটবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত সেই গর্বের স্থাপনা টানেলের ভেতর দিয়ে। এখন শুধু মাত্র অপেক্ষা একটি সূর্যোদয়ের।

প্রধানমন্ত্রী পতেঙ্গা প্রান্তে টানেল উদ্বোধন করে আনোয়ারা প্রান্তে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিয়ে ভাষণ দেবেন। ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ। দলীয় নেতাকর্মীসহ আনোয়ারাবাসির এখন অপেক্ষা, কবে সকাল হবে।

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে কর্ণফুলীর শাহ আমানত সেতু থেকে আনোয়ারা সভাস্থল পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, সেতুসহ সড়কের দু’পাশে থেকে শুরু করে সমাবেশ স্থল পর্যন্ত নিজ নিজ নামে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও বিলবোর্ড প্রদর্শন করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা।

সড়কগুলোতে লেগেছে নতুন রং, ডিভাইডারে দেখা মিলছে নানা ধরনের ফুল গাছ। মনে হবে যেন নতুন কোনো শহর। পথে পথে মাইকি করে সমাবেশে যোগ দিতে আহ্বান করতেও দেখা গেছে।

আনোয়ারার প্রধান সড়কে লাগোয়া চৌমুহন বাজার। বাজারটির মাঝ দিয়ে চলে গেছে কেইপিজেড সড়ক। গাড়িতে চড়ে ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই সকড়টির ডানে চোখে পড়বে সেই কেইপিজেড মাঠ। যেখানে ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটিয়ে ঐতিহাসিক সমাবেশ করতে চায় আয়োজকরা।

কেইপিজেড মাঠে সমাবেশের সময় সর্বসাধারণ প্রবেশ করতে দক্ষিণ পাশে দুটি বড় সড় ফটক তৈরি করা হয়েছে। মাঠের উত্তর পাশে তথা মঞ্চে টানেলের ছবি দিয়ে সজ্জিত একটি বিশেষ ফটক তৈরি করা হয়। যেটি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশ মঞ্চে প্রবেশ করার কথা রয়েছে।

জাকারিয়া নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘এখানে আগে কোনোদিন এত বড় মঞ্চ করতে দেখিনি। সবাই বলছে তাই দেখতে আসছি। প্রধানমন্ত্রী আসবে এটা আমাদের এলাকার জন্য সুখবর। তার আগমন উপলক্ষে অনেক উন্নয়ন হয়েছে এলাকার।’

এদিকে প্রধানন্ত্রীর আগমকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে উৎসবে আমেজ দেখা গেছে। আশেপাশে এলাকা থেকে শুরু করে বাজারের চা’য়ের দোকানগুলোতে চলছে নানা আলোচনা; কবে প্রধানমন্ত্রী আসবেন, কি বলবেন।

চৌমুহনী বাজারে রেজাউল নামে এক চা দোকানি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে দোকানে প্রধানমন্ত্রীর আগম নিয়ে আলোচনা চলছেই। কেমনে আসবেন, কী করবেন এসব।’

নৌকার আদলে মঞ্চ ও প্রস্তুতি:

আনোয়ারার কেইপিজেড মাঠের উত্তর পাশে নৌকার আদলে করা হয়েছে সমাবেশ মঞ্চ। ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪৮ ফুট প্রস্থের মঞ্চটি উচ্চতা ৮ ফুট। প্রায় ৫০০ জনের বসার ধারণক্ষমতা থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পদধারী নেতা ও জনপ্রতিনিধি মিলে ৩০০ জনের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জনসভায় নেতাকর্মীদের বহন করা বাস রাখার জন্য কেইপিজেডের অব্যবহৃত চারটি মাঠ সংস্কার করে পার্কিং জোন করা হয়েছে। এ ছাড়া জনসভায় সাউন্ড সিস্টেমে সার্ভিস দেবে ঐতিহাসিক ‘কলরেডি’। জনসভাস্থলসহ মাঠের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকবে কলরেডির ২০০ মাইক।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে। নেত্রীকে একনজর দেখতে মুখিয়ে আছেন সবাই। জেলার বাইরে থেকে অনেকে আগেভাগে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন। শনিবার সকাল সকাল কর্ণফুলী উপজেলার কেইপিজেড মাঠে জনসভায় যোগ দেবেন তারা।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ১০ লাখ জনসমাগমের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সাধারণ মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনি বার্তা দিতে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। জনসাধারণকে বোঝানো হচ্ছে, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়ন নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে শেখ হাসিনার সরকার। তৃতীয় মেয়াদের ক্ষমতার শেষে একেবারে নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল উপহার দিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ইয়াসিন হিরু বলেন, ‘টানেল এখানকার মানুষের ভাগ্য বলদে দিচ্ছে। এটি আমাদের যাতায়াতে আমূল পরিবর্তন আনবে। টানেলের প্রথম উপকারভোগী হবেন আনোয়ারার লোকজন। শনিবার জনসভায় এলাকার সবাই উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাবেন।’

আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে এক গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে। আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম হয়ে মহেশখালী, টেকনাফ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এক অর্থনৈতিক বলয় গড়ে তুলছেন। বঙ্গবন্ধু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কক্সবাজার রেললাইন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর আধুনিকায়ন, কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নয়ন, সাবরাং বিশেষায়িত ট্যুরিজম জোন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন প্রকল্প এটিকে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নীত করছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক বলয়ের স্বর্ণদুয়ার উন্মোচন করবেন। বীর চট্টলার জনতা প্রধানমন্ত্রীর আগমনে উদ্বেলিত, উৎফুল্ল।’

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘সমাবেশে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ এক লাখ লোক সমাগমের ঘোষণা দিয়েছে। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দিলেও প্রতি উপজেলা থেকে অন্তত ১০ হাজার করে নেতাকর্মীকে জনসভায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এর বাইরে মূল জমায়েত করবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। টানেলের মতো মেগা প্রকল্প উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবারের জনসভায় আমরা মিলে তাকে কৃতজ্ঞতা জানাব।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলসহ মোট ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাতটি প্রকল্প রয়েছে। অনেকগুলোর কাজই প্রায় শেষ হয়েছে। যেগুলো হয়নি সেগুলো আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে।’

প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফর সূচি:

টানেল উদ্বোধন উপলক্ষ্যে শনিবার চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে তিনি গণভবন থেকে তেঁজগাও বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখান থেকে ৯টা ৪৫ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি। ১০টা ৫৫ মিনিটে হেলিকপ্টার চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমিতে পৌঁছাবে। বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করবেন। এরপর টানেল দিয়ে আনোয়ারা পৌঁছে ১২টায় সমাবেশে যোগ দেবেন তিনি। দুপুর ২টায় জনসভা শেষ করে আবার টানেল হয়ে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি এসে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যত নিরাপত্তা:

টানেল উদ্বোধন ও জনসভা ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারায়। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জনসভাস্থলসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা ঘিরে রেখেছে। সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন।

চট্টগ্রাম বন্দর জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শাকিলা সুলতানা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাদা পোশাকের গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তায় প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি বাইরের জেলা থেকেও এখানে পুলিশ আসবে। ট্রাফিকের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের যেন কোনো ভোগান্তি না হয় সেজন্য ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তার প্রশ্নে যে-সব বিষয় জড়িত প্রত্যেকটি বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা কোনো ছাড় দেব না। আমরা চাই নিরাপত্তার পাশাপাশি এখানে জনসমাবেশ স্থলে আগত জনগণ যেন উৎসবমুখর পরিবেশ পায়।’

সড়কে বিধিনিষেধ:
শনিবার শাহ আমানত বিমানবন্দর এবং টানেল ও সি-বিচসহ বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন ও সর্বসাধারণের চলাচলের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ভিভিআইপি/ডিআইপিগণ চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এবং টানেল ওসি-বিচ এলাকায় সড়ক পথে চলাচল করবেন। ভিভিআইপি/ডিআইপি’গণের নিরাপত্তা ও সড়ক পথে নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এদিন ভোর ৫ টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত যানবাহন ও সর্বসাধারণের চলাচলের উপর নিম্নরূপ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

বিধিনিষেধ: নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং-কাঠগড় হয়ে কোনো যানবাহন সি-বিচ বা এয়ারপোর্ট গমন করতে পারবে না। এয়ারপোর্টগামী সকল সম্মানিত জনসাধারণকে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বাম দিকে মোড় নিয়ে বোট ক্লাব হয়ে যাতায়াত করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বিমান বন্দর মোড় ক্রস করে বাটারফ্লাই পার্ক হয়ে টানেল ও সি-বিচ এলাকায় গমন করা যাবে না। ফৌজদারহাট আউটার লিংক রোডে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। সর্বসাধারণের সুবিধার্থে বন্দরগামী যানবাহন আউটার লিংক রোড পরিহার করে ‘সিটি গেইট- একে খান- সাগরিকা রোড ক্রসিং- বড়পুল- নিমতলা’ হয়ে চলাচল করবে। ২৭ অক্টোবর সকাল ৬ টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কেউ সি-বিচ এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না।

সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) স্পিনা রাণী প্রামাণিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পাদনে সিএমপির পক্ষ থেকে এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ নির্দেশনা সংশ্লিষ্টদের মেনে চলার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সকলের সহযোগিতা কামনা করছে।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *