সারাদেশ

আসন-সীমানা ফাঁদে উন্নয়ন বঞ্চিত মাগুরার ৪ ইউনিয়ন

ডেস্ক রিপোর্ট: আসন-সীমানা ফাঁদে উন্নয়ন বঞ্চিত মাগুরার ৪ ইউনিয়ন

ছবি: বার্তা২৪.কম

মাগুরা থেকে: দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার কৃষি নির্ভর জেলা মাগুরা। এ জেলার ৪টি উপজেলা মিলে দুইটি সংসদীয় আসন গঠিত। জেলার শ্রীপুর ও মাগুরা সদর নিয়ে ১ আসন গঠিত হলেও এই আসনের আওতায় আসেনি সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর, গোপালগ্রাম, কুচিয়ামোড়া, বেরইল পলিতা ইউনিয়ন।

মাগুরা সদরের ইউনিয়ন হয়ে সংসদীয় আসন-২ এর এরিয়ায় পড়ায় কপাল পুড়েছে এসব ইউনিয়নের মানুষের। দীর্ঘ সময় এই আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থাকলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এসব এলাকায়। ভঙ্গুর দশা রাস্তাঘাট, ও গ্রামীণ অবকাঠামোর।

স্থানীয়রা জানান, দুই আসনের আওতায় হওয়ায় জেলার সদরের কর্তৃপক্ষের উন্নয়ন মুলক কাজের আওতায় আসেনা সদর উপজেলার ৪ ইউনিয়ন। এদিকে জেলার সদর কর্তৃপক্ষের অপেক্ষায় কাজ করে না সংসদ সদস্যও। ফলে দীর্ঘ সময় উন্নয়ন বঞ্চিত চার ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ মানুষ।

সরজমিন ইউনিয়নগুলো ঘুরে দেখ গেছে, কাচা রাস্তাগুলোর বেহাল দশা। ইটের সলিং রাস্তাগুলো হয়ে পড়েছে চলাচলের অনুপযোগী। এছাড়া গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এসব ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পুকুরপাড় বাঁধসহ ইউ টার্নও। শুষ্ক মৌসুমে কিছুটা চলাচল করা গেলেও বর্ষাকালে একদমই চলা যায় না ইউনিয়নগুলোর বেশ কিছু সড়ক দিয়ে। ফলে দিনের পর দিন দুর্বিষহ কষ্টে দিন পার করছে এসব এলাকার মানুষ। ফলে আসন জটিলতার নিরসন করে এলাকার রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের তাগিদ সকলের।

ছবি: বার্তা২৪.কম বিরল পলিতা ইউনিয়নের মমিনুর রহমান বলেন, এমপিরা ভোট নিতে আসে কথা দেয় আর চলে যায়। কথা কেউ রাখে না। আমরা মাগুরার হয়ে মোহাম্মদপুরের এমপির আওতায় আছি। এ জন্য আমাদের কোনো উন্নয়ন হয় না। আমাদের কপাল খারাপ।

শত্রুজিৎপুর ইউনিয়নের সোলেমান আলী বলেন, আমাদের ইউনিয়নসহ অন্য আরও বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন যাওয়ার প্রধান সড়ক নরাইল মাগুরা সড়ক, যেটার অবস্থা একদমই খারাপ। কেউ কাজ করে না এটাতে। এলাকার রাস্তাগুলোতে তো চলাচল করা মুশকিল। সব মিলে আমরাসহ আরও ৩ টা ইউনিয়নের মানুষ বঞ্চিত।

শরীফ নামের আরেকজন বলেন, আসন এরিয়া জটিলতায় কপাল পুড়ছে আমাদের। আমরা চাই আমাদের মাগুরা সদরের আওতায় নিয়ে, এলাকার উন্নয়ন করুক। অথবা যেই এমপি হোক যেন ভালোভাবে এলাকার কাজ করে এটাই চাওয়া।

ছবি: বার্তা২৪.কম বেরইল পলিতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এম এনামুল হক রাজা বলেন, এমপি এলাকায় কোনো কাজ করতে চান না। আমার ইউনিয়নের রাস্তা ঘাটের অবস্থা অনেক খারাপ। অনেক চেষ্টা করেও বরাদ্দ অনুদান মেলাতে পারি না৷ আমাদের চলাচলের প্রধান সড়ক নড়াইল মাগুরা সড়কের ৭-৮ কিলোমিটার রাস্তা একদম চলাচলের অনুপযোগী। আসন জটিলতা একটা বড় কারণ এখানে।

ছবি: বার্তা২৪.কম এ বিষয়ে মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে মাগুরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আ.ন.ম. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ৪ ইউনিয়নের বেশ কিছু রাস্তা প্রজেক্টের আওতায় আছে। বরাদ্দ আসলে এসব এলাকায় রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন করা হবে। ইতিমধ্যে একটি বড় বরাদ্দ আছে সেই বরাদ্দের আওতায় নেশ কথা কিছু কাজের প্রস্তুতি চলছে।

কুষ্টিয়ায় এমপির বাড়ির সামনে বোমা নিক্ষেপ

এমপির বাড়ির সামনে বোমা নিক্ষেপ

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন (কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা) সংসদ সদস্য সৈয়দা রাশিদা বেগমের কুষ্টিয়ার মিরপুরের বাড়ির সামনের মার্কেটের ছাদে হাতবোমা নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।

সোমবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মিরপুর নতুন বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সৈয়দা রাশিদা বেগমের কুষ্টিয়ার মিরপুর নতুন বাজার এলাকায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির সামনের মার্কেটের ছাদে হাত বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় বিকট আওয়াজে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা হাবিবউল্লাহ এঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমরা পরিদর্শন করেছি। কী কারণে এ হামলা এটি এখনো জানা যায়নি। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করছে। ’

;

আন্তর্জাতিক ৬ রুটে পাখা মেলছে নভোএয়ার

৬টি আন্তর্জাতিক রুটে পাখা মেলছে নভোএয়ার

এ বছরের প্রথমার্ধ থেকে আন্তর্জাতিক রুট সম্প্রসারণে যাচ্ছে বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ার। নভোএয়ার ৬টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এ লক্ষ্যে তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও শুরু করেছে।

এরই অংশ হিসেবে নতুন উড়োজাহাজ কেনা, পরিকল্পনায় থাকা আন্তর্জাতিক রুটগুলোর মার্কেট স্টাডি করাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে এয়ারলাইন্সটি।

নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিসরে যাত্রী সেবার পরিধি বাড়ানোর অংশ হিসেবে আমরা মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই দিকে রুট সম্প্রসারণে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, বছরব্যাপী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটে পাখা মেলবে নভোএয়ার। সারা বছর ধরেই নভোএয়ার একে একে ৬টি রুটে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর কাজ চলবে।

জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুর এবং মধ্যপ্রাচ্যের শারজা, দুবাই ও মাস্কাটে ফ্লাইটগুলো চালু করা হবে।

আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করতে নভোএয়ার তিনটি এয়ারবাস ৩২১ উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করছে। এর মধ্যে দুটি উড়োজাহাজ অতি সত্বর হাতে আসছে। এছাড়া বহরে থাকা ৭টি এটিআর৭২ উড়োজাহাজ তো রয়েছে।

মফিজুর রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটসমূহে যাত্রী সংখ্যা অনেক কমেছে। শুধু বরিশাল, যশোরই নয়, অন্যান্য গন্তব্যে যাত্রী সংখ্যা কমেছে। গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় এই বছরের ডিসেম্বরে যাত্রী সংখ্যা কমেছে ৫৬ হাজার। যাত্রী কমার মূলে রয়েছে দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আকাশপথের ভাড়া কারণে।

নভোএয়ারের প্রধান বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে বাঁচাতে আবারো সরকারের প্রতি আকাশপথে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নতুবা আকাশপথের এই বাজারটি পুরোপুরি বিদেশিদের হাতে চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী ভারতের সরকারও দেশীয় এয়ারলাইন্সসমূহকে সক্ষম করতে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে, যাতে করে আকাশপথে বাজারে স্থানীয় এয়ারলাইন্সগুলোর আধিপত্য বজায় থাকে। বাংলাদেশেও ওই ধরনের সহায়তা দিলে দেশীয় এয়ারলাইন্স দেশের অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে।

নভোএয়ার বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রুটসমূহ ছাড়া ঢাকা-কলকাতা রুটে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এয়ারলাইন্সটি ২০১৩ সালে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালুর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে।

;

শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে বই উৎসবে তাহসিন

শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে বই উৎসবে তাহসিন

মানসিক শক্তির সামনে যে শারীরিক কোন প্রতিবন্ধকতাকে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তা-ই যেন প্রমাণ করে দেখাল চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী কাজী তাহসিন। হুইল চেয়ারে চড়ে বছরের প্রথম দিনে নতুন পাঠ্য বইয়ের ঘ্রাণ নিতে বোনের সঙ্গে বিদ্যালয়ে এসেছিল সে।

নতুন বই পেয়ে অদম্য তাহসিনের চেহারায় আনন্দের ঝলকানি। সহপাঠীদের সঙ্গে নতুন বই নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এই শিক্ষার্থী। হুইল চেয়ারে বসে বিজয়ের হাসিতে যেন জানান দিচ্ছিল প্রবল ইচ্ছাশক্তির কথা। সবুজ ফিতায় বাধা সবকটি নতুন বই কোলে ধরে যেন বলছিল-ইচ্ছা শক্তিই সব। প্রবল মনোবল থাকলে জয় করা যায় যেকোন বাধা।

আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে জন্মগ্রহণ করে তাহসিন। তবে সে অন্য দশটা শিশুর মতো সুস্থ শরীর পায়নি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বাধা ছিল প্রতি পদে পদে। কিন্তু প্রবল ইচ্ছার পথে কাঁটা হতে দাঁড়াতে পারেনি সেই সব বাধা। বাধার সব পাহাড় ডিঙিয়ে তাহসিন এখন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। লটারির ভাগ্যে সে সুযোগ পেয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র-ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এর আগে সে অষ্টম শ্রেণির পাঠ শেষ করে নগরের সাউথ পয়েন্ট নামের একটি বেসরকারি বিদ্যালয় থেকে।

দুই পায়ের অস্বাভাবিকত্বের কারণে হাঁটাচলা করতে পারে না তাহসিন। তবে তার সেই মন্থর জীবনে গতি এনে দিয়েছে ব্যটারিচালিত স্মার্ট হুইল চেয়ার। এই চেয়ারই এখন তার নিত্যসঙ্গী। বড় বোন কাজী তানিজনা হুইল চেয়ারে করে বোনকে নিয়ে এসেছিলেন বিদ্যালয়ে। নতুন বই নিয়ে ছোট বোনের উচ্ছ্বাস দেখে খুশিতে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি বড় বোনও।

সেই আবেগ সামলে কাজী তানজিনা বলেন, আমার বোন খুবই মেধাবী। আল্লাহ ওকে শারীরিকভাবে আমাদের মতো করে পাঠাননি, কিন্তু মেধার কমতি দেননি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাউথ পয়েন্ট স্কুলে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালেখা করেছে সে। এবার খাস্তগীর স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটা তার জন্য আরেকটা বড় পাওয়া। আশা করছি সে সামনের দিনগুলোতে স্কুলের নাম উজ্জ্বল করবে।

রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের বাসিন্দা কাজী মোহাম্মদ ইমরানের তিন মেয়ের মধ্যে তাহসিন সবার ছোট। ব্যবসায়ী ইমরান স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নগরীর জুবিলী রোডে বসবাস করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও অন্যদের চেয়ে মেধায় পিছিয়ে নেই তাহসিন।

তাই তাহসিনের পড়ালেখায়ও কমতি রাখেননি বাবা কাজী মোহাম্মদ ইমরান। তিনি বলেন, ছোটকাল থেকেই পড়ালেখার প্রতি তাহসিনের ছিল অদম্য ইচ্ছে। আমরাও তাই ওর জন্য সবরকম ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। কয়েকদিন আগে ভর্তির বিষয়ে ওর স্কুলে গিয়েছিলাম। তখন শিক্ষকরা ওকে বলেছিল, বিদ্যালয়ে বই উৎসব হবে। তুমি আসবে। সেই থেকে তাহসিন আজকের দিনটির কথা মনে করে ছিল। তাই যত কষ্টই হোক নিয়ে আসতেই হলো।

মেয়ের নতুন বই ছোঁয়ার আনন্দ দেখে উচ্ছ্বসিত বাবা কাজী মোহাম্মদ ইমরান। তিনি বলেন, নতুন বই পাওয়ার পর ওর যে আনন্দ তাতে মনে হচ্ছে কষ্ট করে ওকে এই উৎসবে নিয়ে আসা সার্থক হয়েছে। হুইল চেয়ারে বসে তাহসিন এক হাতে বুকে জড়িয়ে রেখেছে নতুন সবকটি বই। অন্য হাতে জানান দিচ্ছে স্বপ্নের কথা।

নতুন বই পেয়ে খুশিতে আত্মহারা তাহসিন। নতুন বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে তাহসিন মৃদু স্বরে বলে, নতুন বই পেয়েছি। খুবই ভাল লাগছে। সরকারকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের নতুন বই উপহার দেওয়ার জন্য। পড়ালেখা করে অনেক দূর যাওয়ার ইচ্ছা আমার। তাই স্বপ্ন পূরণে সকলের দোয়া ও ভালোবাসা চাই।

ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাহেদা বলেন, আজকের বই উৎসবে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়েও তাহসিন যেন বঞ্চিত না হয় সেজন্যই ওকে আমরা বিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছি। তার আগ্রহ দেখে আমরা অভিভূত। ওর ইচ্ছা শক্তি প্রবল। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তার কাছে কোন বাধাই না।

;

নতুন বইয়ের ঘ্রাণে, জুড়ায় শিশুর প্রাণ

নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, মাতল শিশু প্রাণ

মরিয়ম আক্তার আরিয়ার বয়স পাঁচ বছর পার হয়েছে কদিন আগেই। আরিয়ার মুখের বুলি ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মা তাকে ‘অ-আ’ শিখিয়েছেন। তবে স্কুল, নতুন বই, সহপাঠী এসব যেন আরিয়ার জীবনে প্রথম!

কিছুদিন আগেই স্কুলের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে আরিয়া। সেই থেকে অপেক্ষায় ছিল, কবে নতুন বই পাবে, কবে যাবে স্কুলে? পহেলা জানুয়ারি চলে এল আরিয়ার বহুল প্রতিক্ষার সেই দিন। এই দিনে যে স্কুলে বসেছিল বই উৎসব। সেই উৎসবে বাবার হাত ধরে এসেছিল আরিয়া, পেল প্রথম বইও।

সোমবার (১ জানুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে নগরীর হামজারবাগ রহমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হওয়া মেয়ে আরিয়াকে নিয়ে স্কুলে আসা বাবা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কথা হলে এসব জানান তিনি। এসময় দেখা যায়, নতুন বই পেয়ে ঘরে পৌঁছানোর আগে স্কুলের পাশে একটি টমটম গাড়িতে বসে মেয়েকে দেওয়া নতুন বই খুলে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে এদিক-ওদিক দেখাচ্ছিলেন বাবা মোহাম্মদ আলী।

মেয়েকে নতুন বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখাচ্ছেন বাবা মোহাম্মদ আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এবছর প্রথম আমার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। এর আগে তার মা তাকে ঘরে বিভিন্ন বর্ণমালা শিখিয়েছে। আজকে স্কুলে বই দেবে শুনে সকাল থেকে আমাকে তাড়া দিচ্ছে কবে স্কুল থেকে বই আনবে। আমাকেও সঙ্গে যেতে হবে। তাই আজকে কাজে না গিয়ে মেয়ের সঙ্গে স্কুলে আসলাম। আজকে তার প্রথম স্কুলে আসা, নতুন বই পাওয়াও প্রথম। ঘরে যাওয়ার আগে বই দেখবে কি কি আছে, ভেতরে এসব দেখবে। কি আর করা, মেয়ের আনন্দে আমিও আনন্দিত। বই খুলে খুলে দেখাচ্ছি।’

মেয়েকে নতুন বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখাচ্ছেন বাবা আর আরিয়া বলল, ‘এত বড় বই আগে পাইনি। নতুন নতুন বই পেয়ে খুশি লাগছে। বাবা আমাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। আজকে রাত থেকে আমি পড়া শুরু করব।’

নতুন বই পেয়ে শুধু ছোট্ট আরিয়াই আনন্দিত নয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিকের সর্ব শিক্ষার্থীরাই যেন উচ্ছ্বসিত। তাদের মধ্যে আরেকজন রহমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সিদরাতুল মুনতাহা। অনুভূতি জানতে চাইলে সে বার্তা২৪.কম-কে বলে, ‘অনেক খুশি লাগছে। নতুন ক্যারিকুলামের বই পেয়েছি। কেমন হবে সেটি দেখার আগ্রহ অনেকদিন ধরে। আজকে হাতে পেয়েছি। বই ভালোভাবে যত্ন নেব, মনোযোগ দিয়ে পড়ব।’

নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, মাতল শিশু প্রাণ বছরের প্রথমদিনে বই উৎসবকে ঘিরে দিনভর উচ্ছ্বাস ছিল নগরীর প্রতিটি স্কুলে। শিশুদের বাঁধ ভাঙা আনন্দ ছুঁয়ে গেছে তাদের অভিভাবকদের। তারা বলছেন, বছরের প্রথম দিনে সন্তানের এমন আনন্দমাখা মুখ দেখে তারাও খুশি।

আরিফ হোসেন নামের এক অভিভাবক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বিনামূল্যে সবগুলো বই একসঙ্গে দিয়েছে এটা আসলেই আনন্দের বিষয়। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এটি একটি কষ্টের কাজ। একদিনে একসাথে এতগুলো বই দেওয়া এত সহজ না। এতদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় তারা একটু বেড়াতে পারছে। এখন আবার পড়া শুরু করবে। তবে নতুন কারিকুলাম হওয়ায় বুঝতে একটু সময় লাগবে।’

নগরীতে আলাদাভাবে বই উৎসব পালন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। আনন্দঘন আয়োজনে তারা বই তুলে দেয় শিক্ষার্থীদের হাতে।

ছবি: বার্তা২৪.কম চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিউল হক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এবার নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯০টি পেয়েছি। আর ইংরেজি ভার্সনের জন্য আমাদের চাহিদা ছিল ৮৩ হাজার ৮৫০ টি। আমরা সেটিও পেয়েছি। পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ দেওয়া ১ হাজার ৮১০টি বই পেয়েছি। মোট চাহিদা অনুযায়ী ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার বই আমরা পেয়েছি। আজকে এসব বই আনুষ্ঠানিকভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’

তবে এবার মাধ্যমিকের নতুন কারিকুলামের কারণে ২০ শতাংশ বই এখনো আসেনি। কয়েকদিনের মধ্যে তাও পৌঁছাবে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, `মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম হওয়ায় এ দুটি শ্রেণির বই পেতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। আমরা মোট ৮০ শতাংশ বই পেয়েছি। যাক আজকে উৎসবের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছি। আশা করছি, বাকি ২০ শতাংশ বই কিছু দিনের মধ্যে চলে আসবে।’

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *