সারাদেশ

প্রস্তুত আওয়ামী লীগের সমাবেশ মঞ্চ

ডেস্ক রিপোর্ট: আজ ২৮ অক্টোবর; রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ ও আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ। এই দুই দলের সমাবেশকে ঘিরেই সকল আলোচনা। দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে দল দুটোর সর্বাধিক গুরুত্ব স্বাভাবিক। তবে কেবল এ দুটো দলই নয়, একই দিনে জোটভুক্ত হয়ে অথবা এককভাবে পৃথক স্থানে সমাবেশ করবে অন্তত ৪৩টি রাজনৈতিক দল। দিনটি তাই সমাবেশের। অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কা যদিও আছে, তবে এটা অবাধ গণতন্ত্রের এক সুন্দর পরিবেশ। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের কথা বলতে একটা দিনকেই বেছে নিয়েছে। কাকতালীয় ঘটনা বলা যেতে পারত, তবে বলা যাচ্ছে না কারণ এখানে একের সঙ্গে অন্যের রয়েছে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ যোগ; দাবিদাওয়ার সঙ্গেও রয়েছে প্রভূত মিল। এরবাইরে আরও কিছু দলের নেতাদের অন্যের সমাবেশে অংশগ্রহণের ঘটনাও ঘটতে পারে আজ।

‘এক দফা’ দাবি বিএনপির, এবং সেটা সরকারের পদত্যাগ। এই দাবি নিয়ে দলটি নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে। আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের স্থান বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট। কারওয়ান বাজারে সমাবেশ করবে কর্নেল অলি আহমেদের দল এলডিপি, মালিবাগ মোড়ে সমাবেশ করবে ববি হাজ্জাজের দল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়ে সমাবেশ করবে নুরুল হক নুরের গণ অধিকার পরিষদ, পুরানা পল্টন কালভার্ট এলাকায় সমাবেশ করবে ড. রেজা কিবরিয়ার গণ অধিকার পরিষদ, মতিঝিল নটরডেম কলেজের উল্টো দিকে সমাবেশ করবে গণফোরাম ও পিপলস পার্টি এবং পুরানা পল্টন মোড়ে সমাবেশ করবে লেবার পার্টি। এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ, পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে সমাবেশ করবে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়ে সমাবেশ করবে ১২-দলীয় জোট।

আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি দলগুলোর দাবি প্রায় অভিন্ন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রীক। তাদের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সমাবেশের শিরোনাম শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ হলেও এটা প্রকৃত অর্থে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ করে বিএনপির পালটা কর্মসূচি। বিএনপি তাদের দাবিকে এক-দফায় অর্থাৎ সরকারের পদত্যাগের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চাইছে না। তাদের দাবির মূলের সরকারের পদত্যাগ এবং এরপর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এদিকে, আওয়ামী লীগ চায় চলমান ব্যবস্থার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন।

যে দলগুলো আজ রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে তাদের প্রায় সকলেই বিএনপির সমমনা। অনেকেই বিএনপির ২০-দলীয় জোটের শরিক দল ছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের গতি ও ব্যাপ্তি বাড়াতে ২০-দলীয় জোট ভেঙে দেয় বিএনপি। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন এক অনানুষ্ঠানিক সভায় শরিকদের ডেকে ২০-দলীয় জোটের নাম ব্যবহার না করার অনুরোধ জানায় বিএনপি। দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হওয়া উদ্দেশ্যে ছিল এর। তারপর জোটভুক্ত শরিকদের নিয়ে আরও দুটো জোট গড়ে ওঠে, যার একটির নাম ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’, অন্যটি ‘১২–দলীয় জোট’।

‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’-এর দলগুলো হচ্ছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাগপা (খন্দকার লুৎফুর), ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), বাংলাদেশ ন্যাপ, বিকল্প ধারা (নুরুল আমিন), সাম্যবাদী দল, গণদল, ন্যাপ-ভাসানী, ইসলামী ঐক্যজোট, পিপলস লীগ ও বাংলাদেশ সংখ্যালঘু জনতা পার্টি। আর ‘১২–দলীয় জোট’-এ আছে মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল, কে এম আবু তাহেরের নেতৃত্বে এনডিপি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এলডিপি, জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট, তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি। এই জোটগুলোর শরিকেরা ছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে।

এরবাইরে ঢাকায় আজ যে সকল দল ও জোট সমাবেশ তাদের একটি ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। গণতন্ত্র মঞ্চ ছয়টি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত হলেও বর্তমানে এই জোটে নেই গণঅধিকার পরিষদ। গণঅধিকার পরিষদও আবার এখন দুইভাবে বিভক্ত। এক অংশের নেতৃত্বে ড. রেজা কিবরিয়া এবং অপর অংশের নেতৃত্বে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলো হচ্ছে আসম রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জোনায়েদ আবদুর রহিম সাকির গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। মাঠে সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে আছে ‘গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য’ নামের একটি জোটও। এই জোটের দলগুলো হলো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম এল), জাতীয় বিপ্লবী পার্টি, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাংলাদেশের সোশ্যালিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমতা পার্টি ও বাংলাদেশের শ্রমিক পার্টি।

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার দল হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই পেয়েছে। অন্য দলগুলোরও সমাবেশ বিষয়ক প্রশাসনিক অনুমতি পেতে সমস্যা হয়নি। তবে অনুমতি পায়নি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যুক্ত থাকা বিতর্কিত দল জামায়াতে ইসলামী। আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো দলটিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তাদের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার যে শঙ্কা সেটাকে আমলে নেওয়া হয়েছে। তারা অনুমতি পায়নি, তবে দলটির নেতারা সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। এমন অবস্থায় অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে এর দায় তাদের নিতে হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ৪৪টি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন রয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি বা সভা-সমাবেশের জন্যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন জরুরি কিছু নয়। যে সকল রাজনৈতিক দল ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে সভা-সমাবেশ করছে তাদের বেশিরভাগই দলের নামে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারে না। তবে তারা নির্বাচন নিয়ে সতর্ক এবং দাবি আদায়ে প্রতিজ্ঞ; এই বিষয়টি দেশের অবাধ গণতন্ত্রের প্রমাণ বলে মনে করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপে কিংবা মতপ্রকাশের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা বোধে সভা-সমাবেশের অধিকারকে সীমিত না করা ভালো উদাহরণ।

ইটপাথরের নগর ঢাকা আজ সমাবেশে ঢাকা। ব্যস্ত নগরের দিকে-দিকে আজ মানুষের সম্মিলন। মানুষের এই সম্মিলন হোক মানবিক!

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *