সারাদেশ

‘খুব ভয়ে ছিলাম, সব নড়ে উঠছিল’

ডেস্ক রিপোর্ট: বছরের প্রথম দিন সরকারি ছুটি থাকায় বিকাল ৪টা ১২ মিনিটে বাসাতে ছিলেন অপু সরকার। খাবার খাচ্ছিলেন তিনি। এমন সময় প্রথমে মৃদু কম্পন অনুভব করেন। ভাবেন হয়তো মাথা ঘুরাচ্ছে বা শরীর খারাপ হয়েছে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই পুরো দোতলা ভবনটি কেঁপে উঠে। পানির গ্লাস, বাসার ফ্রিজ কেঁপে উঠে। তখন বুঝতে পারে ভূমিকম্প হচ্ছে।

জাপানের উত্তর পশ্চিমে সাইতামা প্রিফেকচারের ফুকায়া শহরে বাস করেন বাংলাদেশি প্রবাসী অপু (৩৫)। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এক মিনিটের মতো ঝাঁকুনি থাকে। আমি প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে হতেই অনুভব করি আরেকটা ঝাঁকুনি দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমার মোবাইলেও সতর্কতা ম্যাসেজ আসে যে ভূমিকম্প হচ্ছে এবং দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে৷

দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন তিনি। পথে তখন অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে নেমে পড়েছে।

জাপানে প্রকৌশল পেশায় রয়েছেন বাংলাদেশের অপু। তিনি বলেন, জাপানে ভূমিকম্প জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। গত তিন মাস আগেও মৃদু ভূমিকম্প হয়। তবে এতো ভয়াবহ কাঁপুনি দিয়ে ভূমিকম্প গত তিন বছরে দেখেনি অপু।

সাইাতামা ফুকায়াতে ২ তলার উপর কোনো আবাসিক বাড়ি নেই। তবে কিছু সরকারি ভবন ও বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে তিন তলায়।

তিনি বলেন, নববর্ষে গোল্ডেন উইকের ছুটি চলছে। তাই কর্মস্থল বন্ধই রয়েছে। সাইতামা ফুকায়াতে আর সব জনজীবন স্বাভাবিক চলছে। তবে অনেকেই স্বজনদের হারিয়ে ব্যথিত।

তিনি আরও বলেন, এখানে ভূমিকম্পের সময় করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সকল স্থানে জানানো হয়। এমনকি অনেক ভূমিকম্পেও জীবনযাপন বা মানুষের আচরণেও কোনো পরিবর্তনও হয় না। তবে এবারের ভূমিকম্প আলাদা। আমরা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে ভূমিকম্পে জাপানে এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। তবে কোনো বাংলাদেশির হতাহতের খবর এখনো পাওয়া যায়নি৷ ১ জানুয়ারি বিকেলে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫৫টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

জাপানের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পটি রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ছিল৷ জাপানের মধ্যাঞ্চলে এ ভূমিকম্প হয়। এখনো উদ্ধার কাজ চলছে এবং বেশ বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকর্মীদের।

টোকিওতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জাপানে অভিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য হেল্প লাইন চালু করেছে। দূতাবাস জানিয়েছে, জাপানের ইশিকাওয়া প্রিফেকচারে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এছাড়া, নিগাতা, তইয়ামা, ইয়ামাগাতা, ফুকুই এবং হিয়গো অঞ্চলও ক্ষতিগ্রস্ত। এ অঞ্চলে বসবাসকারী বাংলাদেশি প্রবাসীগণের ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস, টোকিও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছে।

সতর্কাবস্থা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশি প্রবাসীগণকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক উঁচু ও নিরাপদ স্থানে অবস্থানের পরামর্শসহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্যাবলি দূতাবাসকে দ্রুত জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশির জরুরি সহায়তার জন্য দূতাবাসের নিম্নের ২৪/৭ হটলাইন নম্বরসমূহে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যোগাযোগের নম্বরগুলো হলো- ০৮০৪০৬৫৬৬০১, ০৮০৪৩৫২৪৭৯৫ এবং ০৯০৬৪৮৩৭৩০৬।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *