কেরানীগঞ্জবাসীর কিছু না চাওয়ার কারণ ভয় না অন্যকিছু!
ডেস্ক রিপোর্ট:
কেরানীগঞ্জ থেকে ফিরেঃ নির্বাচনী এলাকায় ঘুরলেই নানা রকম অপ্রাপ্তি ও দাবি-দাওয়ার কথা কানে ভেসে আসে। কিন্তু কেরানীগঞ্জে গুণে গুণে পনের জনকে প্রশ্ন করলেও তাদের আর কি চাই বলতে পারলেন না।
প্রায় সকলের একই কথা, আমরা যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। এলাকার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে খেলার মাঠ, শুভাঢ্যা খাল, মসজিদ-মাদ্রাসা সবখানেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কারুকাজ খচিত সব স্থাপনা দেখতে বিভিন্ন এলাকার ভিড় করছেন জিনজিরায়। অনেকগুলো নান্দনিক স্থাপনা পুরো কেরানীগঞ্জের চেহারা বদলে দিয়েছে। আর কিছু চাওয়ার নেই।
ষোল নম্বর ব্যাক্তি কাপড় দোকানী (মনু ব্যাপারির ঢালের বাসিন্দা) দুলু মিয়া জানালেন, আমাদের এখানে একটি সরকারি হাসপাতাল দরকার। এখানে যা রয়েছে সবগুলো প্রাইভেট, যার খরচ অনেকের নাগালের বাইরে। স্বল্প খরচে চিকিৎসা সেবা পেতে হলে বুড়িগঙ্গা পার হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যেতে হয়।
বুড়িগঙ্গা নদীর কোল ঘেষে অবস্থিত নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ) এক সময় সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল। মারামারি, লাশ উদ্ধার ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। আর জিনজিরা বলতে এক সময় ঘিঞ্জি একটি জনপদের নাম সবার মানসপটে ভেসে উঠতো।সেই জিনজিরা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, অনেকগুলো আইকনিক স্থাপনা দৃশ্যমান।
কোন ঈদগাহ মাঠ দেখতে লোকজন ভীড় করতে পারে তা জিনজিরা মাঠ না দেখলে বিশ্বাস করতে চাইবে না কেউই। পুরো মাঠ জুড়ে কৃত্রিম ঘাষের টার্ফ চারদিকের নির্মাণ শৈলী মোহনীয় করে তুলেছে। ঈদগাহ মাঠটির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে অনেক দূর পর্যন্ত। সারাদিন সেখানে লোকজনের ভিড় লেগেই থাকছে।
আবার অধ্যাপক হামিদুর রহমান কমিউনিটি সেন্টার কাম কালচার সেন্টারেই বা কম কি। সিরামিকস ইটের তৈরি স্থাপনাটি মুগ্ধ করবে যে কাউকে। বাইরে থেকে দেখতে যেমন নান্দনিক, তেমনি ভেতরের স্থাপনাতেই রয়েছে মুন্সিয়ানার ছাপ। স্থাপনাটি কেরানীগঞ্জের সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়ে উঠেছে। দেশি বিদেশি শিল্পীদের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী নতুন মাত্রাযুক্ত করেছে। আরও অনেক স্থাপনা রয়েছে তাক লাগানো। একটির কারুকাজের সঙ্গে আরেকটি কোন মিল নেই। প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা বৈশিষ্টের এবং মুগ্ধতায় ভরা।
নিজের বাবার নামে বিশাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম স্থাপন করেছেন নসরুল হামিদ। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত স্টেডিয়ামটিতে প্রতিনিয়ত থাকছে নানা রকম আয়োজন। বেদখল হয়ে যাওয়া ১৩টি খেলার মাঠ উদ্ধার করে, আধুনিক সব সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। এসব মাঠে বাস্কেটবল, হকিসহ বিশেষায়িত খেলাও হচ্ছে হরদম। ছেলেদের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। হামিদ স্পোর্টস একাডেমীর ক্ষুদে খেলোয়াড়রা ইতোমধ্যেই দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে পা রাখতে শুরু করেছে।
শুধু কি স্থাপনা এক সময় যে সব রাস্তায় পায়ে হেটে চলা যেতো না। সেই সব রাস্তা এখন ঢালাই করা হয়েছে। পানি নিষ্কাষনের জন্য সরু গলির রাস্তাতেও ড্রেন বসানো হয়েছে। মোট ৫টি ফোরলেন সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। এক উপজেলায় পাঁচটি ফোরলেনের রেকর্ড সম্ভবত কেরানীগঞ্জ করতে যাচ্ছে। আগে রেল যোগাযোগ ছিল না, সেই রেলেও যুক্ত হয়েছে এক সময়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন কেরানীগঞ্জ। কক্সবাজারের মতো আইকনিক স্টেশনও পাচ্ছে এলাকাবাসী। এলাকাটিকে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার হাব হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলমান রয়েছে।
নাগরিক চাওয়া বলতে চা বুঝায় সবকিছুই ঢেলে সাজানো হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী শুভাঢ্যা খালটি মরা নদীতে পরিণত হয়েছিল। বুড়িগঙ্গার মতো এর পানির গন্ধেও ধারের কাছে ঘেষা যেতো না। সেই শুভাঢ্যাকে হাতিরঝিলের আদলে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।
এখানেই ৬০০ বিঘা জমির উপর নির্মাণ করা হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস। আরও অনেক চোখ ধাঁধানো উন্নয়ন এক সময় লোকজনের কল্পনাতেও ছিল না। যে কারণে কি চাই সেই প্রশ্নের জবাব দিতে অনেকবার মাথা চুলকাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
টানা তিন বারের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপুর কাছে প্রশ্ন ছিল আবার নির্বাচিত হলে কি কি অগ্রাধিকার পাবে। এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, কেরানীগঞ্জকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ার কাজ চলছে। শহরটিকে সুন্দর করে গড়তে মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তার আদলেই গড়ে তোলা হবে কেরানীগঞ্জকে। নাগরিকের সকল আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। কেরানীগঞ্জ হবে পরিবকল্পিত স্মার্ট সিটি।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ ডট কম-এ।