সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন সিইসি
ডেস্ক রিপোর্ট: আগামী ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এবার নতুন ও পুরাতন ভোটারদের নির্বাচিত নতুন সরকারের কাছে থাকছে নানা চাওয়া পাওয়া।
যশোর ৮৫/১ আসন শার্শায় বিএনপি ছাড়ায় অনেকটা জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতিদিন প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে করছেন ভোট প্রার্থনা।
এ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়ে লড়ছেন বর্তমান সাংসদ শেখ আফিল উদ্দীন। তিনি মাহরুম শিল্পপতি শেখ আকিজ উদ্দীনের ছেলে এবং বর্তমান এমপি। অপরদিকে ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন সাবেক বেনাপোল পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছেন আক্তারুজ্জামান। তবে তার তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই। ভোটাররা মনে করছেন এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বী হবে নৌকা ও ট্রাক মার্কার মধ্যে। ভোটকে সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে ইতিমধ্যে ভোট গ্রহণকারী ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে নির্বাচন কমিশনার মতবিনিময় সভা করেছেন।
জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোর। আর এ জেলাতে রয়েছে ৬টি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভোটাররা মনে করেন যশোর ৮৫/১ আসান শার্শা। কারণ এ আসনটিতে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। যেখানে ভারতের সাথে আমদানি বাণিজ্যে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব আসে। যা অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক আলোচনায় অংশ নিয়ে এখানকার জনপ্রতিনিধির খুব সহজে দেশ, বিদেশের মানুষের কাছে পরিচিতির সুযোগ রয়েছে। এতে এ আসনটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি লোভনীয়।
০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নানান প্রতিশ্রুতি আর পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়ে শুরু হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। তবে এ আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী থাকলেও তার তেমন কোনো প্রচারণা নেই। এখন গ্রাম, গঞ্জে চায়ের কাপে তৃণমূল ভোটারদের নির্বাচিত সরকার ও পছন্দের জনপ্রতিনিধিদের কাছে চাওয়া-পাওয়া নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, তৃণমূল ভোটারদের দরদ, রাজনৈতিক কোন্দল নিরসন, উন্নয়নে ভূমিকা ও সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত এলাকা গঠনে যে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে সেই প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবেন। এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণকারী ও নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে ইতিমধ্যে এ উপজেলাতে মতবিনিময় সভা করে নানা পরামর্শ দিয়েছেন।
বেনাপোল বন্দর শ্রমিকেরা জানান, এ সরকারে আমলে বন্দর উন্নয়নে কর্মসংস্থান বেড়েছে। এখন তারা ন্যায্য মজুরি পায়। এধারাবাহিকতা রাখতে আগামীতে পছন্দের মার্কাকেই ভোট দেবেন। তবে বন্দরকে অশান্ত করতে একটি চক্র তাদেরকে নিয়ে অপরাজনীতি করতে চায়। সামনে যিনি নেতৃত্বে আসবে আমাদের দাবি এ বিষয়ে তিনি শ্রমিক নিরাপত্তায় আরো ভূমিকা রাখবেন।
বেনাপোলের সাদিপুর গ্রামের মারুফ হোসেন জানান, বেনাপোল সীমান্ত মাদকমুক্ত ঘোষণা হলেও এখনও মাদক কারবার চলছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিকে মাদক বিরোধী জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
সাধারণ ভোটার রমজান হোসেন জানান, পদ্মা সেতু মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল এসব উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে শেখ হাসিনার বিকল্প দেখছিনা।
আ,লীগ কর্মী কাওছার জানান, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে শার্শার আ. লীগ একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রবীণদের দলে মূল্যায়ন কমেছে। দলীয় দ্বন্দ্ব নিরসন করে দলকে সুসংগঠিত এবং প্রবীণদের মুল্যায়নে আগামীতে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে।
ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কিছু প্রতিষ্ঠান নানা মহলকে ম্যানেজ করে নানান কৌশলে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোন নিয়ে জনগণের টাকা লুট করছে। আগামী নির্বাচিত সরকারের কাছে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নিশ্চয়তা বাড়ানোর দাবি থাকবে।
নতুন ভোটার আইরিন জানান, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছে। আগামী দিনে নির্বাচিত সরকার নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে আরো ভূমিকা রাখবে আশা রাখছি।
পূর্বের গৃহহীন নারী জেসমিন জানায়, সরকারের উপহারের বাড়ি পেয়ে এখন মাথা গুজবের নিরাপদ ঠাঁই হয়েছে। এসরকার ছাড়া আর অন্য কোথাও ভোট দেওয়ার জায়গা দেখছি না।
দিন মজুর রশিদ জানান, দেশের উন্নতি হয়েছে। তবে নিত্য পণ্যের দাম চড়া থাকায় সংসার চালাতে অসহায় হয়ে পড়ছি। দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সামনের দিনে সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।
বিএনপি সমর্থক সজল জানান, প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেনা। অনেকটা একতরফা নির্বাচন হচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে। যদি বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো নির্বাচনে অংশ থাকতো তবে এ নির্বাচন দেশ ও বিদেশিদের কাছে আরো গ্রহণযোগ্যতা পেত।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, সুলতান আহম্মেদ বিপুল জানান, দেশে অনেক শিল্পায়ন সৃষ্টির ফলে কর্মসংস্থান বেড়েছে। আগামীতে যে সরকার আসছে তার কাছে এখাতে আরো গুরুত্বের আশা রাখবো।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন জানান, তার উপর নেত্রীর ভরসা আছে বলে আবারও শার্শার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবার জন্য নৌকা দিয়েছেন। এলাকায় নানান উন্নয়ন কার্যক্রমে মানুষ খুশি হয়ে আবার তাকে নির্বাচিত করতে ভোটারদের মধ্যে উৎসব চলছে। আগামীতে গ্রামাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে আরো নিবেদিত হব।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক মার্কার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, তিনি নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড়াননি। প্রধানমন্ত্রী প্রতিদ্বন্দিতা ও গ্রহণযোগ্যতামূলক নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র দাঁড়ানোর অধিকার দিয়েছেন বলে এলাকাবাসীর দাবির মুখে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। অবহেলিত শার্শার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন পেতে মানুষ এবার তাকে নির্বাচিত করবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান (অব.) শার্শায় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় জানান, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে শার্শা উপজেলাতে ভোট গ্রহণকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে মতবিনিময় সভা করে নানান পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোন অনিময়ের সুযোগ থাকবেনা। যার ভোট সে তার পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারবে।
প্রধান বিরোধী দলের অনুপস্থিতে এ নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিএনপিকে একাধিকবার আহ্বান করা হয়েছে, কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। অবশেষে সংসদীয় আইন রক্ষায় অন্যান্য দলকে নিয়ে নির্বাচন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, যশোর শার্শা ১ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৬ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫১১ জন।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।