সারাদেশ

ভোটকেন্দ্রে নাশকতার পরিকল্পনাকারী বিএনপির সভাপতি গ্রেপ্তার

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে ভোট উৎসবের দ্বারপ্রান্তে। আগামীকাল রোববার, ৭ জানুয়ারি ২০২৪ মোতাবেক ২৩ পৌষ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এক্ষণে ফিরে দেখা যেতে পারে অতীতের নির্বাচনগুলো।

পটভূমি

সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র আর ক্ষমতালিপ্সু নেতৃত্বে শাসিত পাকিস্তানে গণতন্ত্র ছিল ফৌজি ছাউনি ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কাছে জিম্মি। মানুষের ভোটাধিকার ছিল নির্বাসিত। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াইয়ের পথে অর্জিত হয় গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জনদাবি। পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্ম নেওয়ার ২৩ বছর পর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর। এই নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা টালবাহানা করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী, যার ফলে অধিকার আদায়ের পথ ধরে সূচিত হয় একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর একই বছর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন হয় বাংলার আকাশে। যুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকার গঠন হয়। বিজয় লাভের পর শাসন ভার আসে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের বাঙালির হাতে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি ৭০’র নির্বাচনে পাকিস্তান আইনসভার জন্য নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে প্রথম সংসদ গঠিত করে। তবে প্রথমবারের মতো দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতার এক বছর পর। এই এক বছরের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের জন্য ভীষণ চ্যালেঞ্জিং বিষয়।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর হওয়া সংবিধান মোতাবেক এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ন্যাপ (মোজাফফর), ন্যাপ (ভাসানী), সিপিবি, জাসদসহ মোট ১৪টি দল অংশ নেয়। নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৮৯ জন। এই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসন অর্জনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে। প্রথম সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ছিল ১৫টি, যার সব কয়টি পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। এ সংসদের মেয়াদ ছিল দুই বছর ছয় মাস।

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। এ নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ দুই ভাগ হয়ে গিয়েছিল। এর এক অংশের নেতৃত্বে ছিলেন আবদুল মালেক উকিল। আরেক অংশের নেতৃত্ব দেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন ২ হাজার ১২৫ জন। নবগঠিত বিএনপি, আওয়ামী লীগের দুই অংশ, ন্যাপ (মোজাফফর), সিপিবি, জাসদসহ মোট ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নেয়। সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২০৭টি আসন লাভ করে। এ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৮ জন। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫০.৬২ শতাংশ। এতে সংরক্ষিত মহিলা আসন ১৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হয়।

তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ২৮টি দলের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৫২৭ জন। মোট ভোটার ৪ কোটি ৭৩ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৬ জন হলেও ভোট পড়েছিল ৬১.১ শতাংশ। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করলেও এতে অংশগ্রহণ করে মোট ১৩টি রাজনৈতিক দল। জাতীয় পার্টি ১৫৩ আসন লাভ করে সরকার গঠন করে। বিরোধী দল আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত আসন ছিল ৭৬টি। এ সংসদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মেয়াদ ছিল ১৭ মাস।

চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

রাষ্ট্রপতি এরশাদের অধীনে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করে। ৬টি দলের অংশগ্রহণে ৯৭৭ জন প্রার্থী নিয়ে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফলে জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। ১৯টি আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসেন সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ)। ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ৮২৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট গৃহীত হয়েছিল ৫২.৫ শতাংশ। এই সংসদের নেতা ছিল দুই বছর সাত মাস।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ সংসদীয় পদ্ধতির একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা উপহার পায়। এতে মোট ২৫টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। মোট প্রার্থী ছিলেন ২ হাজার ৭৮৭ জন। ৬ কোটি ২০ লাখ ৮১ হাজার ৭৯৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট গৃহীত হয়েছিল ৫৫.৪শতাংশ। এতে বিএনপি ১৪০টি আসনে জয়ী হয়ে খালেদা জিয়ার অধীনে সরকার গঠন করে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন পেয়ে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকে।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া এ নির্বাচন বর্জন করে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তিনটি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ফলে বিএনপি ২৭৮টি আসন পেয়ে একতরফা জয়লাভ করে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার ফলে তিন পাঁচ মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন দিতে হয়। বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট সংসদ ছিল এটি, যার মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। এতে মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১ শতাংশ।

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে শেখ হাসিনার অধীনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ১১৬টি আসন পেয়ে বিরোধীদলীয় নেতা হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মোট আটটি রাজনৈতিক দল থেকে ২৫৭৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ২১ বছর পরে ক্ষমতার মঞ্চে ফিরে আসে আওয়ামী লীগ। এতে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ২ হাজার ৪২২ জন ভোটারের মধ্যে মোট ৭৩ শতাংশ ভোট গৃহীত হয়।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ৪৮৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫৪টি দল থেকে মোট ১৯৩৫ জন প্রার্থী অংশ নেয়। এতে বিএনপি ১৯৩টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। ৭ কোটি ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দেয় ৫ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার ৭০৭ জন। এ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৭৪.৭৩ শতাংশ। তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিরোধীদলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করার পর সব শর্ত পালন করে ১০টি দল নির্বাচনে অংশ নেয়। এ দলের বিপরীতে প্রার্থী হন ১ হাজার ৫৬৭ জন। প্রথম ছবিসহ ভোটার তালিকা অনুযায়ী ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩ জন ভোটারের মধ্যে ৭ কোটি ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৪৮৫ জন ভোটার ভোটদান করেন। ভোট পড়ার হার ছিল ৮৬.৩৪ শতাংশ। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বাকি ১৪৭টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ১৭টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে মোট ২৩৪টি ভোট পেয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ। এ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৪১ শতাংশ। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ৩৯টি নিবন্ধিত দলের সব কয়টি দল অংশ গ্রহণ করে। মোট প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৮৬৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন লাভ করে বিজয় অর্জন করে। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮০.২০ শতাংশ। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় মোট ভোটের ৭৪.৪৪ শতাংশ।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *