সারাদেশ

হরতালের সমর্থনে নরসিংদীতে মশাল মিছিল

ডেস্ক রিপোর্ট: নির্বাচনের দুইদিন আগে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক নাশকতা হয়েছে। ট্রেনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে অন্তত পাঁচ জনকে। সারাদেশের জায়গায়-জায়গায় ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়েছে। রাজবাড়ির একটি ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাকা এক গ্রামপুলিশ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এক রাতের মধ্যে এতগুলো ঘটনা দেশব্যাপী হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই ভীতিকর পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।

ভীতির এই পরিবেশ তৈরি নিশ্চিতভাবেই পূর্বপরিকল্পিত। যেকোনো মূল্যে নির্বাচনকে বানচাল করার উদ্দেশ্য, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন থেকে মানুষকে দূরে রাখার উদ্দেশ্য। এটা কারা করছে তা এখনো অপ্রকাশিত হলেও অনুমেয়। বিএনপি-জামায়াতসহ নির্বাচনবিরোধী অংশ যে এর সঙ্গে জড়িত তা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে। স্রেফ ক্ষমতার লোভে উন্মত্ত দুর্বৃত্তরা নাশকতার এই পথ বেছে নিয়েছে। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে মরণ কামড় দিতে বসেছে তারা, যার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা গেল এক রাতের মধ্যে এতগুলো ঘটনা।

শুক্রবার রাতে দেশের জায়গায়-জায়গায় যে ঘটনাগুলো ঘটল তার পুরো চিত্র হয়ত এখনো অপ্রকাশিত। এ লেখাটি যখন লিখছি তখন শনিবারের দ্বিপ্রহর। এরইমধ্যে গণমাধ্যমে যে খবর এসেছে তাতেই উদ্বেগে আমরা। এরইমধ্যে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল থেকে আসা ট্রেনটিতে আগুন দেওয়া হয়। এতে চারটি বগি ভস্মীভূত হয়ে যায়। দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন অন্তত পাঁচজন। বেনাপোল থেকে ঢাকায় কমলাপুর রেল স্টেশনে আসছিল। ধীর গতিতে চলন্ত অবস্থায়ই ট্রেনটিতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

ওই রাতেই মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের সাবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সরিষকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পৌর এলাকার ধলাইপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একডালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে, গাজীপুর মহানগরের পূর্ব চান্দনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টিএনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের বাঁশতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় চরমোহন সুরেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের পড়শীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, শেরপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে, খুলনা রুপসা উপজেলার বাগমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, চট্টগ্রাম বন্দর থানার নিশ্চিন্তা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে, টাঙ্গাইল পৌরসভার কান্দিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগুনের ঘটনাগুলো ছাড়াও শুক্রবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি বাস থেকে বোমা উদ্ধার করা হয়েছে, শনিবার সকালে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় বোমাসদৃশ চারটি বস্তু উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাগুলো এক রাতের মধ্যে ঘটেছে।

কাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন। আজ থেকে দেশের চার হাজারের বেশি কেন্দ্রে যাবে ভোট সরঞ্জাম। মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছে ভোট প্রদানের। ঠিক সেই মুহূর্তে দেশব্যাপী নাশকতার মাধ্যমে মানুষের মনে ভীতি ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। সবাই না হলেও অন্তত কিছু মানুষ এই ভীতির কারণে ভোটবিমুখ যে হবেন সন্দেহ নেই।

গত ২৯ অক্টোবর থেকে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দল আর জোটের আন্দোলনের চূড়ান্ত অধ্যায় শুরুর পর থেকে এতবড় নাশকতার ঘটনা আগে ঘটেনি। ঘটেছে ঠিক নির্বাচনের আগ মুহূর্তে। এই সময়ক্ষণের নির্ধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই। আন্দোলনে থাকা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করছে, সেটা তারা করতেই পারে। তারা নির্বাচনে জনগণকে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহ করতেই পারে, কিন্তু নির্বাচন বানচাল করার অধিকার তারা রাখে না। এই নির্বাচন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন। পাঁচ বছরের মেয়াদান্তে সংসদ নির্বাচন ব্যতিরেকে নির্বাচন কমিশনের অন্য কোন পথ নেই। যথাসময়ে নির্বাচন না হলে সাংবিধানিক সংকট দেখা দেবে দেশে। সাংবিধানিক উপায়ে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে ভালো হতো, কিন্তু তারা অংশ নেয়নি। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে, কিন্তু নির্বাচনকে বানচাল করা, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির অধিকার তারা রাখে না। এটা ফৌজদারি অপরাধও।

গতরাতের নাশকতার ঘটনাগুলো কে ঘটিয়েছে তা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে, তবে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের ইতিহাস বলে তারা আন্দোলনের নামে নাশকতায় আগ্রহী বেশি। ২০১৩-১৪ সালের সেই পেট্রোল বোমা আর আগুন-সন্ত্রাসের ঘটনাগুলো আমরা বিস্মৃত হয়ে যাইনি। সে সময়েও ট্রেনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে মানুষকে, বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত দগ্ধ করা হয়েছে অনেককে। অদ্যকার এই আগুন-সন্ত্রাস আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এক দশক আগের সেই নাশকতাকে।

নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে ভোটগ্রহণের ঠিক আগে সারাদেশে সিরিজ নাশকতার ঘটনার পর এই ঘটনাকে সরকারের জড়িত থাকার দিকে ইঙ্গিত করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘ট্রেনে আগুন লাগিয়ে হতাহতের ঘটনা নিঃসন্দেহে নাশকতামূলক এবং মানবতার পরিপন্থী এক নিষ্ঠুর কাজ। পৃথিবীর সব স্বৈরাচারই ভিন্নমতকে দমন করতে সন্ত্রাস ও নাশকতার পন্থা অবলম্বন করে। আমরা এই ঘটনায় জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করছি।’ বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা যাই বলুন না কেন, এই ঘটনার দায় বিএনপি কীভাবে এড়াবে? সরকার সারাদেশের ভোটকেন্দ্রে আগুন লাগিয়ে, ট্রেনে আগুন লাগিয়ে মানুষ পোড়াবে, নির্বাচনের ঠিক আগে সারাদেশে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করবে—এমনটা কোন অপরিপক্ব মস্তিষ্কের মানুষও ভাবতে দুইবার চিন্তা করবে।

২০১৩-১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে আগুন-সন্ত্রাসের পথে নেমেছিল। সে নির্বাচন পণ্ড করতে পারেনি তারা। এবারও সেই একই পথ ধরা তাদের। এবারও তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। মাঠের আন্দোলনে ব্যর্থ এবারও তারা। তাদের সেই ব্যর্থতা চাপা দিতে মানুষের জীবনকে জিম্মি করার পথ ধরেছে তারা। তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে। ক্ষমতার দখল নিতে মানুষের জীবনকে বাজি রেখেছে। এই আগুনের দায় তাদের, পাশাপাশি ব্যর্থতার দায় আছে সরকারেরও, কারণ সরকার এই আগুন-সন্ত্রাসীদের রুখতে পারেনি।

ট্রেনের আগুনে পুড়ে যারা মারা গেছেন, তারা কেবল দৃশ্যমান আগুনেই পুড়েননি, পুড়েছেন ক্ষমতালিপ্সার অদৃশ্য আগুনেও। যে রাজনীতি মানুষের কল্যাণে, সে রাজনীতিতে নৈতিকতার এমন দৈন্য অপ্রত্যাশিত!

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *