সারাদেশ

জয় মেলেনি যেসব হেভিওয়েট প্রার্থীদের

ডেস্ক রিপোর্ট: ক্ষমতার রাজনীতিতে টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ের স্বাদ পেল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এনিয়ে দলটির বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পঞ্চমবারের মতো জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ।

সরকারের পদত্যাগে এক দফা দাবি এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বর্জন করে নির্বাচন। এছাড়াও ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতির মতো নানা চোখ রাঙানি। সব কিছুকে উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনেকখানিই সফলতা দেখাল দলটি। সেই সাথে টানা চতুর্থবারের মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেল আওয়ামী লীগ।

এবারের নির্বাচনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে স্বপ্নে বিভোর বঙ্গবন্ধুকন্যা ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন। এরআগে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলটির ইশতেহার স্লোগান ছিলো ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন শেষে এক নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে নব পথে যাত্রা শুরু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এ দলটির।

আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের মনের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলে তাদের দ্বাদশ নির্বাচনের ইশতেহারে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার বিশেষ দিক নির্দেশনায় রচিত এই ইশতেহারে জনগণের নাভিশ্বাস ওঠা দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব। জনগণের দল হিসেবে, জনগণের অকুণ্ঠ দাবি নতমস্তকে মেনে নিয়ে, জনরায় নিয়ে ক্ষমতায় আসার যে ছক কষেছিল তা ষোলকলায় পূর্ণ হয়েছে আওয়ামী লীগের।

এরআগে, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। সে নির্বাচনে ল্যান্স লাইট ভিক্টরি পায় দলটি। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩০ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। অপরদিকে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পায় মাত্র ৩০টি আসন। সে থেকে এখন পর্যন্ত টানা চতুর্থ বারের মতো বিজয়ী হলো দলটি।

২০১৪ সালেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। সে নির্বাচনেও দলটি ২৩৪টি আসনে এককভাবে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। পরে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও জয় ঠেকাতে পারেনি আওয়ামী লীগের। সে নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৬টি আসনে জয়ী হয়। অপরদিকে আওয়ামী লীগ এককভাবে বিজয়ী হয় ২৫৭টি আসনে।

নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে এগোনো আওয়ামী লীগের এই পথ চলা কখনোই মসৃণ ছিলো না। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে। এগিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশকেও। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মর্যাদাশীল মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরের পথে এগিয়ে নিয়েছে। বিদ্যুৎ, রাস্তা, অবকাঠামোসহ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে এনেছে অভূতপূর্ব উন্নয়ন।

উন্নয়নের সে ধারাকে অব্যাহত রেখে একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার। সে সাথে পূর্বের অপূর্ণতাকে পূর্ণতায় রূপান্তর করতে চান তিনি। আর তাই তো পূর্বের সকল ভুলভ্রান্তির কথা অকপটে স্বীকার করে নেন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে। এমন ঔদার্য দেখানোর সাহস আর কেউ দেখাতে পারেনি আগে।

শেখ হাসিনা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। ছিলেন রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক। তাই তো ছাত্র জীবনে শেখা রাজনীতি ও পিতার দেখানো পথে তার বিচরণ। বাঙালির ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে। সৌভাগ্যক্রমে সেসময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। তবে দৃঢ়চেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাতেও টলে যাননি। নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি। শক্ত হাতে দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভক্তির মুখ থেকে ফিরিয়ে এনে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে গড়ে তুলেন।

এরপর নানা চড়াই উৎরাই পার করে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মত দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান তিনি। সরকারপ্রধান হয়ে যোগ্য বাবার যোগ্য মেয়ের মত দেশ গড়ার প্রতি মনোযোগী হন। একটি সুস্থ ধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনার তাগিদে ২০০১ সালে ৫ বছরের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব শেষে কোন দ্বিধা ছাড়াই ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে। যা এ যাবৎকালের বাংলাদেশের ইতিহাসেই সবচেয়ে সুষ্ঠু ক্ষমতা হস্তান্তরের উদাহরণ হয়ে আছে।

তবে তার বিনিময়ে তাকে মুখোমুখি হতে হয়েছিলো গ্রেনেড হামলার। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় গ্রেনেড। ভয়াবহ সেই হামলায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী। সকল প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে একটি সুস্থ ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধারা ফিরিয়ে আনার পথে অবিচল পথচলা বঙ্গবন্ধুকন্যার।

অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন নতুন উদ্যোগের পাশাপাশি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী নানা পরিকল্পনায় দেশকে সাজাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। যে স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্বে বাংলার আপামর জনগণ নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে, সে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং জাতিগত বৈষম্য আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালির বহুকালের লড়াই জেতার স্বপ্নদ্রষ্টা এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *