সারাদেশ

ইশতেহার বাস্তবায়নই আমাদের মূল টার্গেট: ওবায়দুল কাদের

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৫ জন মন্ত্রী ১১ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগের এই মন্ত্রিসভা সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তরণের পর সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরের মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রীসহ এই মন্ত্রিপরিষদের সদস্য সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৩৭! ধারণা করা হচ্ছে এই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হবে। আগেও এমন হয়েছে।

স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরা বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল তার পরিসর ছিল পঞ্চাশ জনের। এরপর ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার আকার ছিল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী মিলিয়ে ৪৯ জনের। এরপরের মন্ত্রিসভাগুলো ছিল যথাক্রমে ৬০, ৬২ এবং ৫০ জনের। অর্থাৎ এবারই ছোট্ট পরিসরের মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের শপথের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা টানা চারবারসহ সর্বোচ্চ পাঁচবার সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিলেন। এটা রেকর্ড-অর্জন শেখ হাসিনার।

নবগঠিত মন্ত্রিসভাকে নির্দ্বিধায় নতুন মন্ত্রিসভা বলা যায়। কারণ এতে স্থান পাননি আগের মন্ত্রিসভার ১৪ জন মন্ত্রী ও ১৪ জন প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী; অর্থাৎ পুরনোদের অর্ধেকের বেশি বাদ পড়েছেন। বাদ পড়াদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রিসভায় প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, যাদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতাও। এবারের মন্ত্রিসভায় গতবারের মত আওয়ামী লীগের শরিক ১৪-দলের কেউ স্থান পাননি, স্থান পাননি নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির জাতীয় পার্টির কেউ। গতবারও অবশ্য এমন হয়েছিল। এরআগে অবশ্য জাতীয় পার্টির একাধিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন, মন্ত্রিসভায় ছিলেন ১৪-দলের শরিক নেতারাও।

মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন অনুমিত ছিল, কিন্তু এত ব্যাপক পরিবর্তন চিন্তা করা যায়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। দলীয় মনোনয়ন পেয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। নির্বাচনের সুযোগ না পাওয়া এবং নির্বাচিত হতে না পারা এই ছয় প্রতিমন্ত্রী স্বাভাবিকভাবেই নেই নতুন মন্ত্রিসভায়। উল্লিখিতদের বাইরে আগের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া আরেক মন্ত্রী হচ্ছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি অবশ্য নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করেছিলেন। টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়া মোস্তাফা জব্বার আগের নির্বাচনের আগেও পদত্যাগ করেছিলেন। আগেরবার ফিরলেও এবার ফেরা হয়নি তার। একই অবস্থা হয়েছে মাত্র দেড় বছর আগে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া অর্থনীতিবিদ শামসুল আলমের ক্ষেত্রেও। গত মন্ত্রিসভার থাকা টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবারও একই কোটায় ডাক পেয়ে মন্ত্রিত্বের শপথ নিয়েছেন।

এদের বাইরে বাদ পড়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। বাদ পড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে আছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা। বাদ পড়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।

একেবারের মন্ত্রিসভায় একেবারের নতুন মুখ যেমন আছেন তেমনি আছেন অভিজ্ঞ একাধিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাদে বাকি ২৫ পূর্ণ মন্ত্রীর মধ্যে একেবারে নতুন ৭ জন। তন্মধ্যে আছেন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, রেলপথ মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন, টেকনোক্র্যাট কোটায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন।

প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া ১১ জনের মধ্যে একেবারে নতুন ৭ জন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় নেতা তাজ উদ্দিন আহমেদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমিকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে, মো. মহিববুর রহমানকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে, শফিকুর রহমান চৌধুরীকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে, রুমানা আলীকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে, এবং আহসানুল ইসলাম টিটুকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের উল্লিখিতদের বাইরে বাকি সকলেই যে গত মন্ত্রিসভার সদস্য এমন না, ১৯৯৬-২০০১ সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব পালন করা একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী রয়েছেন। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ফারুক খান ও নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন গত মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও ফরিদুল হক খান; এবং উপমন্ত্রী থেকে ডাবল প্রমোশনে মন্ত্রী হয়েছেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

বিগত মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের মধ্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক, ওবায়দুল কাদের, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, আসাদুজ্জামান খান কামাল, মো. তাজুল ইসলাম, আনিসুল হক, সাধন চন্দ্র মজুমদার, স্থপতি ইয়াফেস ওসমানকে (টেকনোক্র্যাট) স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের রাখা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হিসেবে রেখে মন্ত্রণালয় বদল হয়েছে ডা. দীপু মনি ও ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদের। বিগত মন্ত্রিসভার চার প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহমেদ পলক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং জাহিদ ফারুককে আগের মন্ত্রণালয়েরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এবারের মন্ত্রিসভার ব্যাপক বদলে একটা বিষয় পরিস্কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের মহা-গুরুপূর্ণ অর্থ, পরিকল্পনা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করেছেন। ফলে পরিকল্পনা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বাদ দিয়েছেন, বাদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রীকেও। এরবাইরে পরিবেশ, কৃষি, ডাকসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বদল হয়েছে ঠিক, কিন্তু পরিকল্পনা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মত এত বিশাল পরিবর্তন হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেছেন ড. হাছান মাহমুদ এবং পরিকল্পনায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম মন্ত্রী করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় এই মন্ত্রীরা এককভাবে কীভাবে সামলান মন্ত্রণালয় আর কীভাবেই বা অতিক্রম করেন কঠিন পথ আর ঝুঁকি।

বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে দেশে-বিদেশে বিবিধ চ্যালেঞ্জ। একদিকে আছে অর্থনৈতিক সমস্যা; অন্যদিকে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভিসানীতি-শ্রমনীতিজনিত বিবিধ চাপ। নতুন সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা চাপ মোকাবেলায় সক্ষম কি-না, সময়ই বলে দেবে!

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *