আন্তর্জাতিক

বেনাপোল বন্দরে ৬ মাস ধরে খাদ্য দ্রব্য আমদানি বন্ধ

ডেস্ক রিপোর্ট: নিত্য-পণ্য খাদ্য দ্রব্য আমদানিতে একদিকে ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নানান শর্ত আর বৈশ্বিক মন্দায় দেশে ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতিতে গত ৬ মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যের বিপুল পরিমাণ আমদানি কমেছে। এসব পণ্যের মধ্যে গত ৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও রসুন আমদানি।

বন্দরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ মাসের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৬ মাসে খাদ্য দ্রব্যের আমদানি কমেছে ১ লাখ ৬১ হাজার ১০৪ মেট্রিন টন। তবে ব্যবসায়ীরা আশাবাদী নতুন বছরে সব প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটে বাণিজ্য স্বাভাবিক হয়ে বাজার দর সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে।

বাণিজ্য সংশিষ্টরা জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের মধ্যে সব চাইতে বেশি প্রয়োজন হয় চাল, ডাল, চিনি, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন,মরিচ ও আদা। তবে দেশে চাহিদার বিপরীতে এসব পণ্য উৎপাদন কম হওয়ায় আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়। আর এ আমদানির বড় অংশ আসে ভারত থেকে। তবে মাঝে মধ্যেই দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নানান কারণ দেখিয়ে এসব পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা বা কঠিন শর্ত বেঁধে দেওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। এছাড়া বৈশ্বিক মন্দার কারণেও ব্যবসায়ীরা চাহিদা মত পণ্য আমদানি করতে না পারায় ঘাটতির আরও একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে এবছর বড় ধরনের খাদ্য ঘাটতির মুখে পড়তে হতে পারে ।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উদ্ভীদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ সহকারি হেমন্ত কুমার সরকার জানান, আপাতত চাল, গম, ভুট্টা, রসুন ও চিনি আমদানি বন্ধ রয়েছে। পেঁয়াজের স্বাভাবিক আমদানিও বন্ধের পথে।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে তার আগের অর্থবছরের ৬ মাসের তুলনায় খাদ্য আমদানির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ১০৪ মেট্রিন টন।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে চাল আমদানির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৫হাজার ৪০১ মেট্রিক টন, গম ১৫ হাজর ৪০৮ টন, পেঁয়াজ ৯ হাজার ৮৮৭ টন, চিনি ২ হাজার ৫০০ টন, ডাল ৫ হাজার ৪৬০ টন, মরিচ ৪৪৩ টন, ভুট্টা ৫০ হাজার ১০২ টন ও রসুন ৮৪ টন।

অপরদিকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে চাল আমদানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩৫৯ টন, গম শুন্যের কোটায়, পেঁয়াজ ৪ হাজার ৬৭৫ টন, চিনি শুন্যের কোটায়, ডাল ২২ হাজার ৫৩৭ টন, মরিচ ৮ হাজার ৮৫৯ টন, ভুট্টা শুন্যের কোটায় ও রসুন আমদানি কমে শুন্যের কোটায় দাঁড়িয়েছে ।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, চলতি বছরের ২০ জুলাই সিদ্ধ ও আতব চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত, ১৯ আগস্ট পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং রফতানি মূল্য ১৫০ ডলার থেকে ৮৫০ ডলারে বৃদ্ধি করে। ১৩ মে থেকে গমের এলসি নিচ্ছে না ভারত এবং গতবছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে চিনি আমদানি বন্ধ। এতে সরবরাহ ঘাটতি আর সিন্ডিকেটের দৌরত্বে বর্তমানে বাজারে দ্বিগুন বেড়েছে এসব পণ্যের দাম। তবে এ অবস্থা উত্তরণে ২০২২ সালের ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে কোটা চুক্তি হয়। এ বার্ষিক কোটা চুক্তিতে ভারতের কাছে গম ৪৫ লাখ টন, চাল ২০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৭ লাখ টন , চিনি ১৫ লাখ টন ও আদা দেড় লাখ টন, ডাল ৩০ হাজার টন ও ১০ হাজার টন রসুনের অনুরোধ করা হয়েছে। কোটা পাওয়া গেলে যখন-তখন বাংলাদেশে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ বা মূল্য বৃদ্ধির কবলে পড়বেনা। এতে দ্রব্য মূল্যের দাম অনেকটা সহনশীল পর্যায়ে ও খাদ্য সংকট কমে আসবে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ চুক্তি দীর্ঘ এক বছরেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় জরুরি পণ্য আমদানিতে বিভিন্ন ভাবে বাঁধাগ্রস্থ হতে হচ্ছে।

নিম্ন আয়ের এক দিনমজুর আমিনুর জানান, নিত্য পন্য খাদ্য দ্রব্যের বাজার ঊর্ধ্বগতির কারণে আয়ের সাথে মিল রেখে সংসার চালাতে পারছিনা। দাম কমলে অনেক উপকৃত হবো।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ড এ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, খাদ্য ঘাটতি মেটাতে কোটা চুক্তি বাস্তবায়ন জরুরি। আশা করছি নতুন বছরে সরকার এটি বাস্তবায়ন করবে। এর আগে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ও ভুটানকে কোটা সুবিধায় পণ্য আমদানিতে সুযোগ দিয়েছে ভারত।

আমদানিকারক উজ্বল কুমার বিশ্বাস জানান, ভারতের সাথে নিত্য পণ্যের স্বাভাবিক আমদানি বন্ধ থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছেনা। আমরা চাহিদামত খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে না পারায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

কৃষি অধিদপ্তর সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩২ লাখ মেট্রিক টনের বিপরীতে উৎপাদন হয় ২৭ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদা মেটাতে ৭ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। ২৫ টাকার পেঁয়াজ এখন দাম বেড়ে ১০০ টাকা। চালের চাহিদা সাড়ে ৩ কোটি মেট্রিক টনের মত। সেখানে উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৮৩ লাখ টন। তার পরে মজুদ বাড়াতে চাল আমদানি করতে বছরে ২৫ লাখ মেট্রিক টনের মত। দেশে গমের উৎপাদন ১১ লাখ ৭০ হাজা টন আর চাহিদা ৫ লাখ টন। চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হয় ৪০ টনের মত। ৬ মাস আগের ২৮ টাকার গম এখন দাম বেড়ে কেজি ৫৭ টাকা। এছাড়া চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টনের বিপরীতে উৎপাদন মাত্র ১ লাখ টন। ৮০ টাকার চিনি এখন বেড়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *