সারাদেশ

আওয়ামী লীগের যৌথসভা সোমবার

ডেস্ক রিপোর্ট: নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা কেশব লাল মণ্ডল। নির্যাতিত রামপাল ও মোংলাবাসীর পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনার পর থেকেই বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসনে, বিশেষ করে পুরো মোংলা উপজেলায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাবিবুর নাহারের সশস্ত্র ক্যাডাররা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কেশব লাল মন্ডল।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহারের কতিপয় নেতা ও ক্যাডার বাহিনীর ধারাবাহিক জুলুম, অত্যাচার, হামলা, মারধর, দখল, ভাঙচুর ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে এলাকার সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। বিপুল সংখ্যক হিন্দু পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে বন্দি জীবনযাপন করছে। ইতিমধ্যে কয়েকশ পরিবার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে মোংলা থেকে পালিয়ে অন্যত্র বসবাস করছে। শুধু হাবিবুন নাহারকে ভোট না দেওয়ার কারণে এলাকায় এ ধরণের অস্থিতিশীল ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বিগত ৩টি সংসদ নির্বাচনে এখানে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় হাবিবুন নাহার অনেক সহজেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এবার দলীয় কোনো বাধা না থাকায় বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মোংলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ইজারাদার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়তে হয়। নির্বাচনের শুরু থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী ইজারাদারের সমর্থক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কর্মী ও নেতাদের নানাভাবে হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। এরপর ভোট গণনা শেষ হতেই সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি হামলা চালায়। বসতঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানে ভাঙচুর করে। মাছের ঘের জবর দখল করে ঘেরের মাছ লুট করে নিয়ে যায়। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না বাড়ির শিশু ও বৃদ্ধ মহিলারা। এমনকি তাদের সশস্ত্র দু’জন মুক্তিযোদ্ধাও মারাত্মক আহত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মোংলা উপজেলার সোনাইলতলা, মিঠাখালী, সুন্দরবন ও চিলা ইউনিয়নে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে। এসব তাণ্ডবের নেপথ্যে রয়েছে মোংলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, সুন্দরবন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কবির হোসেন ও তার সহযোগী আহাদুল মেম্বার, মিঠাখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ইস্রাফিল হাওলাদার, চিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী আকবর হোসেন, চাঁদপাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ভাই হাফিজুল ও তার সহযোগী সেলিম। তারা ধারাবাহিকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের উপর নির্যাতন ও জুলুম চালালেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কারণে আমরা নিরুপায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ওই সকল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি দলীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

এ বিষয়ে বাগেরহাট-৩ এর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমাদের লোকজনও আহত হয়েছে। তারাও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। খুলনা হাসপাতালেও ভর্তি আছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জামায়াত-বিএনপির লোকজন নৌকায় সমর্থন করে আ.লীগের লোকজনের উপর হামলা করেছে এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন,  আমার নিজের কর্মী-সমর্থক আছে। আমি কোনো বিএনপি-জামায়াতকে আমার দলে ডাকেনি।

বাগেরহাট-৩ এর স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী বলেন, খুলনাতে হাফিজুর রহমান নামের আমার এক সমর্থককে হাবিবুন নাহারের কর্মী-সমর্থকরা আহত করেছে। এখন সে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। তিনি আরও বলেন, আমার অনেক কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছে এবং তারা হাসপাতালে ভর্তি আছে।

মোংলা থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম বলেছেন, এ ঘটনায় মোংলা থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। এখন মানুষ শান্তিতে আছে। কোনো বিশৃঙ্খলা নেই বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা বিধান চন্দ্র রায়, মিঠাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উৎপল কুমার মন্ডল, বুড়িরভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উদয় শংকর বিশ্বাস, ইউপি সদস্য আশীষ মন্ডল, নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্য পিন্টু রায়, নয়ন কুমার মন্ডল, সঞ্জয় বাছার, নির্মল সরকার, দেবাশীষ মন্ডল, তপন ফকির, দীপা ফকির, তাপস সরকার, বিবেক মন্ডল, অমিত সরকার প্রমুখ।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *