আন্তর্জাতিক

দিন যায় অভিনন্দন গোনে

ডেস্ক রিপোর্ট: নির্বাচনের চারদিনের মাথায় নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নবগঠিত মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ সদস্য সংখ্যা ৩৭। ২৫ পূর্ণমন্ত্রীর সঙ্গে ১১ প্রতিমন্ত্রী, এবং প্রধানমন্ত্রী। সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার পর আকারের দিক থেকে এটা সবচেয়ে ছোট মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভায় চমক আছে, চ্যালেঞ্জ আছে, আছে সীমাবদ্ধতা। সীমাবদ্ধতা অতিক্রমে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই মন্ত্রিসভা সফল হবে কিনা এটা আগামীর বাংলাদেশই বলে দেবে। 

আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনি ইশতেহারের স্লোগান ছিল—‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান।’ দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া; কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা; আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা; লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি; দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো; ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা; সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা; সাম্প্রদায়িকতা এবং সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা; এবং সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো—এ এগারোটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

অগ্রাধিকারভিত্তিক বিষয়গুলোকে সামনে রেখে গঠিত হবে মন্ত্রিসভা, এমনটাই স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে লক্ষ্যেই তার মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। ইশতেহার বাস্তবায়নে দক্ষ, যোগ্য ও সক্ষম লোকদের স্থান দিতে বিগত মন্ত্রিসভার অর্ধেকের বেশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী বাদ পড়েছেন। কয়েকটি জায়গা বাদে মন্ত্রণালয়ে-মন্ত্রণালয়ে এসেছে নতুন মুখ। নতুনদের সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা আগামীর পাঁচ বছর চলতে শুরু করেছেন। প্রবল অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে দেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা চোখে পড়ার মতো। এমন অবস্থায় এ দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বাদ পড়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে এসেছেন নতুন মন্ত্রী, যার পূর্ব অভিজ্ঞতা এই মন্ত্রণালয়ে নেই। অর্থনীতির সাবেক ছাত্র হলেও এই খাতে নেই তার ব্যাপক উপস্থিতি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী, তারও নেই এই মন্ত্রণালয়ের পূর্ব-অভিজ্ঞতা। তবু তাদের জায়গা হয়েছে মূলত তাদের প্রতি শেখ হাসিনার আস্থায়, একই সঙ্গে পূর্বসূরিদের ব্যর্থতায়।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত বিশ্বনেতাদের অনেকেই। কূটনৈতিক শিষ্টাচারকে অগ্রাহ্য করে আমেরিকার নগ্ন হস্তক্ষেপ-চেষ্টা দেখে আসছি আমরা গত ক’বছর ধরে। এরইমধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা ভিসানীতি দিয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকে যে দৌড়ঝাঁপ করেছেন, যে ব্যতিব্যস্ততা দেখিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের নির্বাচনই না শেষ পর্যন্ত আটকে যায় এমন একটা শঙ্কাও ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে নির্বাচন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে পিটার হাসের তৎপরতা কমতে শুরু করে, এবং শেষ বেলায় এসে তিনি মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মন্ত্রীদের অভিনন্দনও জানান। আমেরিকাই কেবল নয়, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন নানা কথা বলেছে, এখনো বলছে। তারা আগের মতো সরকারের সমালোচনায় মুখর। নির্বাচনের পরেও তাদের সমালোচনা বন্ধ হয়নি, তবে বিবৃতিতে কমেছে ঝাঁঝ।

বাংলাদেশ যে বৈশ্বিক রাজনীতির একটা অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে ওঠেছে এটা এবারের নির্বাচনের আগে প্রমাণ হয়েছে। আমেরিকা বিশ্বের দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে সবক দেয়, নিজেদের মতো করে দেশে-দেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়—এখানে যদিও নতুন কিছু নেই। তবে বাংলাদেশকে নিয়ে এর আগে এত ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। দিল্লিতে ভারত-আমেরিকার দিল্লিতে টু-প্লাস-টু বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, রাশিয়া-আমেরিকার চিরকালীন দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়মিতভাবে ওঠে আসা এবং এক পক্ষ অন্য পক্ষকে কোণঠাসা করতে বাংলাদেশকে সামনে আনা এবার নতুন করে ঘটেছে। এটা কেবল নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরেও ঘটছে। 

সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চাঙ্গা করতে ঢাকায় মার্কিনিরা বিরোধীদলের সঙ্গে বৈঠক করেছে—রাশিয়ার এমন অভিযোগের পর, আমেরিকার পক্ষ থেকে এটা অপপ্রচার বলে দাবি করা হয়েছে। নির্বাচনের পর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা মস্কোতে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে বাইরের শক্তি সক্রিয় ছিল। মস্কোর এই সংবাদ সম্মেলনে কারো নামোল্লেখ করা না হলেও তারা তাদের গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের অভিযোগকে উদ্ধৃত করেছে, যেখানে তারা সরাসরি দায়ী করেছিল আমেরিকাকে। রাশিয়ার এই অভিযোগের জবাব এখনো দেয়নি আমেরিকা, তবে ধরে নেওয়া যায় দেশ দুটি তাদের দ্বন্দ্বকে জিইয়ে রাখতে এই অঞ্চলে বাংলাদেশের নাম আরও কিছুদিন এভাবে উল্লেখ করবে।

নির্বাচনের পর বিভিন্ন দেশের অভিনন্দনে সিক্ত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কেসি, সার্ক মহাসচিব অভিনন্দন জানিয়েছেন নতুন সরকারপ্রধানকে। ভূটান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, রিপাবলিক অব কোরিয়া, ব্রুনাই দারুসসালাম, মালয়েশিয়া, মিশর, আলজেরিয়া, কুয়েত, লিবিয়া, ইরান, ইরাক, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান, মরক্কোর রাষ্ট্রদূতরা নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিনন্দন জানিয়েছে স্কটিশ পার্লামেন্টের সদস্য, ইউরেশিয়ান অর্থনৈতিক কমিশন, সার্ক এবং ইতালি-বাংলাদেশ মৈত্রী ও সহযোগিতা সংস্থাসহ আরও বিভিন্ন সংস্থা।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছু দেশ সরাসরি অভিনন্দন-বার্তা না দিলেও তারা সরকারের সঙ্গে কাজ করবে না বলে কোন কিছু বলেনি। তারা নির্বাচন প্রক্রিয়া ও প্রধান বিরোধী দলের অংশ না নেওয়া নিয়ে হতাশার কথা বলেছে। যুক্তরাজ্য বলেছে, গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার ওপর। ভোটের আগে বিরোধী দলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধী দলের হাজার হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্বেগ তাদের পূর্বেকার বিবৃতিগুলোর ধারাবাহিকতা। বিএনপিসহ বিরোধীদলের একটা অংশ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত তো সেই নভেম্বরেই প্রকাশিত। যে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি সেখানে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়াটা অস্বাভাবিক ছিল না। যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র সেটা জানেও, তবু নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের বিবৃতিতে চর্বিত চর্বণ করেছে; নতুনত্ব কিছু নেই।

যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিবৃতিতে বলেনি তারা নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করবে না। তারা কেবল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিরোধীদলের ওপর সরকারের কঠোর দমননীতির। বিএনপির মহাসচিবসহ শীর্ষ অনেক নেতার বিরুদ্ধে সরকারের যে দমননীতি সেটা গোপনীয় কিছু নয়, জামিন চাইলেও জামিন পাচ্ছেন না তারা। আবার গ্রেফতারের ভয়ে মাঠের আন্দোলনে নামতে পারছেন না দলটির নেতারা। নির্বাচনের পর সরকারকে অভিনন্দন না জানিয়ে যারাই বিবৃতি দিয়েছে তাদের একটাই বক্তব্য, বিরোধীদলের ওপর দমনপীড়ন। তবে তারা কেউ বলেনি সরকারকে সহযোগিতা না করার কথা।

বিএনপিসহ সরকারবিরোধী অংশের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা যুক্তরাষ্ট্র ও পিটার হাস। যুক্তরাষ্ট্রের এই রাষ্ট্রদূত মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলেন। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সচিত্র সংবাদ হয়েছে। পিটার হাসসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের অভিবাদন জানিয়েছেন এমনটা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী সোশ্যাল হ্যান্ডল এক্স-এ (সাবেক টুইটার) একটি ছবিও শেয়ার করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে পিটার হাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকা মন্ত্রীদের সঙ্গে করমর্দন করছেন হাসিমুখে। যদিও এই ছবির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের টানাপড়েনকে নির্দেশ করে না, তবে এই ছবি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে।

মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে অন্য অতিথিদের সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পিটার হাসের উপায় নেই এই আমন্ত্রণকে অগ্রাহ্য করার। তবে তার অংশগ্রহণ আলোচনায় এসেছে মূলত তার গত কয়েক মাসের ব্যাপক তৎপরতার কারণে। সরকার সমর্থকেরা এই ছবি দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, আবার সরকারবিরোধীদের মধ্যে এই ছবি হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে দিনশেষে এটা একটা ছবি, এক পেশাজীবীর দায়িত্ব পালনের স্থিরচিত্রই!

সহিংসতা ছাড়াই শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন, মন্ত্রিসভার সদস্যরাও শপথ নিয়েছেন। আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণায় সাময়িক বিরতি দিয়েছে বিএনপি ও সমমনারা। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ‘তালা ভেঙে’ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকেছেন। পুলিশ বলছে তারা বিএনপির কার্যালয়ে তালা দেয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পাঁচ মাস পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতির পিতার প্রতিকৃতি, বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত ও ফুল দেওয়া শেষে নতুন সরকার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর সন্নিকটে। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশ ও নানা মহল থেকে অভিনন্দন পাচ্ছেন, নেতাকর্মীরা সেই অভিনন্দনের সংখ্যা গোনার মধ্যে আছেন।

এখন পর্যন্ত সরকার ও সরকার-সমর্থকরা অভিনন্দন-বার্তা গোনার পর্যায়ে। সরকারবিরোধীরাও আছেন এই গোনাগুনতির মধ্যেও। কে কী ভাষায় কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাল সেখানেই আবর্তিত এই মুহূর্তের রাজনীতি! 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *