কুষ্টিয়ায় তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
ডেস্ক রিপোর্ট: কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কৃষকদের। দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ভালো মানের সুতা উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখছে এ উপজেলার তুলা। তবে চলতি মৌসুমে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ক্ষতি হওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলেন এখানকার তুলা চাষিরা।
কুষ্টিয়া তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলার ৭টি ইউনিটে ১৫০ হেক্টর বেশি জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রকারভেদে মণ প্রতি ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা। এ বছর এ উপজেলায় ৬ হাজার ৯১০ জন তুলাচাষি ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছেন। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে ক্ষতি হওয়ায় বিঘা প্রতি ১৩ মণ করে ফলন ধরা হচ্ছে। তুলার নির্ধারিত দাম ও আনুমানিক উৎপাদন হিসেবে করে ধারণা করা হচ্ছে এ মৌসুমে উপজেলায় ৭০ কোটি টাকার বেশি তুলা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুসারে দেশের সবচেয়ে বেশি তুলা উৎপাদন হয় কুষ্টিয়া জেলায়। আর জেলায় সবচেয়ে বেশি তুলা হয় দৌলতপুর উপজেলায়।
তুলার সঙ্গে থাকা বীজ থেকেও তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ভোজ্যতেল ও খৈল। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে এখানকার তুলার বাজার দর প্রতিবছর নির্ধারণ করেন মিল মালিকেরা।
উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদে শনিবার (১৩ জানুয়ারি) এ মৌসুমে দ্বিতীয় দিনের মতো বসেছিল তুলার হাট। এখানে তুলা কিনতে এসেছেন কয়েকটি সুতা প্রস্তুুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা।
আল মদিনা ইন্ডাস্ট্রির মালিক গোলাম সাবির জানান, তারা ৩০ বছর ধরে এ উপজেলা থেকে তুলা কিনছেন। এখানকার তুলা দুই অংশে ভাগ করে সুতা প্রস্তুত করেন তারা। আর বীজ থেকে তৈরি হয় তেল ও খৈল।
উপজেলার বিলগাতুয়া এলাকার তুলাচাষি সাহিদুল বলেন, এবার টানা বর্ষণের কারণে তুলা নষ্ট হয়েছে। তাই ফলন কমেছে। বাজারে সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় আবাদের ব্যয়ও বেড়েছে। তাই এবার লাভের মুখ দেখছি না।
সাহিদুল বলেন, তুলার বাজার দর মিল মালিকেরা নির্ধারণ করে। এটি সরকার ঠিক করলে চাষিরা লাভবান হতেন।
আবুল হাসেম নামের আরেক চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার দুই ক্যাটাগরিতে তুলার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি ফ্রেশ তুলা আরেকটি গুটি তুলা। তিনি বলেন, আমার নিজের জমিতে বিঘা প্রতি চাষে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। যারা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন তাদের খরচ আরও বেশি হয়েছে।
মাহাবুল হসেন নামের এক চাষি জানালেন, ফলন ভালো না হওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। নয় মাসের মতো লাগে তুলার ফলন পেতে। তাই দাম বৃদ্ধির দাবি এই চাষির।
কুষ্টিয়ার প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা শেখ আল মামুন বলেন, গত মৌসুমের তুলনায় এবার তুলার চাষ বেড়েছে। আমরা চাষিদের চাষে আগ্রহ বাড়াতে পরামর্শ দিচ্ছি। তুলা থেকে কম খরচে ভালো লাভ করা সম্ভব। আমরা আগামী মৌসুমে কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা করব চাষিদের জন্য। প্রতিনিয়ত চাষিদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।