সারাদেশ

গুরুত্বর অসুস্থ খন্দকার মোশাররফ, সিঙ্গাপুর নেওয়ার প্রস্তুতি

ডেস্ক রিপোর্ট: জাতীয় পার্টির বিক্ষুব্ধ নেতাদের দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের সময় শেষ হয়ে গেছে। কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি উল্টো শীর্ষস্থানীয় দুই নেতাকে বহিষ্কার করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

এমন অবস্থায় রোববার (১৪ জানুয়ারি) আইডিইবি ভবনে এক সভায় মিলিত হচ্ছেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, পদত্যাগের দাবি হাস্যকর ও অযৌক্তিক, তাই এটা নিয়ে ভাবছি না। পাল্টা প্রশ্ন রাখেন ৫ হাজার লোক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলে কি গ্রহণযোগ্য হবে!

রোববারের সভা প্রসঙ্গে বার্তা২৪.কমকে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, তাদের সভা ডাকার এখতিয়ার নেই। দেখেন না কি হয়, এমনওতো হতে পারে তারা আগের অবস্থান থেকে সরে গেছেন। সভায় আমাদের পক্ষেই কথা বলছেন! ওইদিন বিক্ষোভে যারা অংশ নিয়েছিলেন অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অনেকে তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন।

ঠিক কে কে যোগাযোগ করেছেন সে বিষয়ে জানাতে রাজি হননি জাপা মহাসচিব।

তিনি বলেন, আমাদের প্রার্থীরা ভোট সঠিকভাবে করতে পারেননি, তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন, তবে এভাবে প্রকাশ করাটা ঠিক হয়নি। এতে পার্টির ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রার্থীদের দল থেকে সহায়তা দিতে পারিনি, দিতে পারলে ভালো হতো। একটি গ্রুপ গুজব ছড়িয়েছে নির্বাচনী ফান্ড পাওয়ার কথা। ২০০ এর উপরে প্রার্থী ভোটের আগে ঘোষণা দিয়ে সরে গেছে। অনেক জায়গায় প্রশাসনের সহায়তায় জাল ভোটের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে দুঃখ বেদনা যন্ত্রণা রয়েছে তাদের মনে। এজন্য পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকতেই পারে। কিছুটা দায় আমাদের রয়েছে এটা স্বীকারও করি।

অন্যদিকে বিক্ষোভের দিনে অফিসে না এলেও পরদিন (১১ জানুয়ারি) থেকে অফিস করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। শনিবারও (১৩ জানুয়ারি) অফিস করেছেন তারা। তবে বনানীর চিরচেনা রূপ অনেকটা বদলে গেছে, এখন চেয়ারম্যান আসার আগেই নেতাকর্মীদের জমায়েত করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে শক্তির মহড়া। শনিবারও দেখা গেছে বেশকিছু অচেনা মুখকে। হাজী লিটনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ মোটরবাইক নিয়ে শোডাউন করেন। তারা কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার বিরুদ্ধে নানা রকম আপত্তিকর স্লোগান দেয়। মহাসচিব পার্টি অফিসে আসার পর আপত্তিকর স্লোগান দিতে নিষেধ করেন।

এদিনও বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন দেখা গেছে। জাতীয় পার্টির ইতিহাসে গত ১০ জানুয়ারি নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হয়েছে নেতাকর্মীরা। পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয় বনানীতে দিনভর বিক্ষোভ করেন কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সিনিয়র অনেক নেতা অংশ নেন। বিক্ষুব্ধ নেতারা আসতে শুরু করেছিলেন বেলা ১১টা থেকে আর ফিরে যান ৩টায়, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে। তাদের আগমনের খবরে আগেই পার্টি অফিসের মূলক ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এবারের নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন ছিল জাতীয় পার্টির ভূমিকা। নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে দলটির অবস্থান ছিল রহস্যজনক। নির্বাচন কমিশন ১৫ নভেম্বর তফসিল দিলেও নির্বাচন প্রশ্নে পার্টির অবস্থান ঝুলে রাখা হয় ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। ২০ নভেম্বর দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি তখনও অন্ধকারে রাখা হয়। ১৭ ডিসম্বের এসে ভোটে অংশ নেওয়ার কথা জানায় দলটি। ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে অভিযুক্ত করছেন বিক্ষুব্ধরা।

মনোনয়ন ফরম বিক্রির দিনগুলোতে পার্টির পক্ষ থেকে বলা হতো নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে রাখা হচ্ছে, জাপা নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা পরে জানানো হবে। অবশেষে ২২ নভেম্বর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান দলটির মহাসচিব। ২৭ নভেম্বর ২৯৪ আসনে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে। অন্যদিকে ছেলে সাদ এরশাদসহ অনুসারীদের আসন নিশ্চিত না হওয়ায় জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ২৯ নভেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

মনোনয়ন দাখিলের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে দলটির নেতারা। আসন ভাগা-ভাগি নিয়ে নানা রকম গুজব ছড়তে থাকে। ওই দিনগুলোতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে আবার ধোঁয়াশা ছড়িয়ে দেয় দলটির নেতারা। রটে যায় নির্বাচন বর্জনের গুজব, বিষয়টি পার্টির পক্ষ থেকেও রহস্যবৃত্ত রাখা হয়। এ কারণে দলটির প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠ থেকে হাত গুটিয়ে বসে থাকে ১৭ ডিসেম্বর (মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার) পর্যন্ত। এতে করে অনেকেই নির্বাচনী দৌড় থেকে পিছিয়ে পড়েন।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬ আসনে সমঝোতা করে জাতীয় পার্টি। ওই আসনগুলো থেকে নৌকা সরিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। ওই ঘোষণার পর থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন ২৬ আসনের বাইরে থাকা সাধারণ প্রার্থীরা। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক প্রার্থী পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করেছিলেন দলীয় ফান্ডের বিষয়ে। কিন্তু সাড়া না পেয়ে ক্ষোভ হতাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। ভোটের দিনেও অনেক প্রার্থী সরে দাঁড়ান। নির্বাচন পরিচালনায় পার্টির সমন্বয়হীনতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

অনেকে মনে করছেন জাতীয় পার্টি আরেকবার ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে। নির্বাচন কেন্দ্রীক ক্ষুব্ধ নেতাদের একত্র করার চেষ্টা চলছে। এখন পেছনে থাকলেও শেষ পর্যন্ত এই বলয়টি সামনে আনতে পারেন রওশন এরশাদকে। জাতীয় পার্টির কমিটির মেয়াদ যেহেতু শেষ তারা একটি একতরফা কাউন্সিল করতে পারেন। আবার কো-চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষর নিয়ে নতুন চেয়ারম্যানও ঘোষণা দিতে পারেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি দফায় ভাঙনের শিকার হয়েছে এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি। বর্তমানে জাপা, জেপি, বিজেপি, জাপা (জাফর) নামে ৪টি পার্টি রাজনীতিতে সক্রিয়।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *