সারাদেশ

বঙ্গবন্ধু টানেলে প্রথম দিনে সাড়ে ৪ লাখ টাকার টোল আদায়

ডেস্ক রিপোর্ট: রামুর বাঁকখালী নদীতে ভাসছিল ৮টি সজ্জিত জাহাজ। নদীর দু’পাড়ে হাজার হাজার মানুষ তা প্রত্যক্ষ করছেন। মঞ্চে তখন চলছিল আলোচনা। বৈশালী নগরবাসীর মহামারির মতো দুর্দশা লাঘবের পর মহামতি বুদ্ধ যখন সজ্জিত জাহাজে বিম্বিসার রাজ দরবারে ফিরছিল সে দিনটি ছিল প্রবারণা পূর্ণিমা। সজ্জিত জাহাজে করে মহামতি বুদ্ধের ফিরে আসার স্মৃতি জাগরুক রাখতে ২০০ বছর ধরে রামুর বাঁকখালী নদীতে প্রবারণা পূর্ণিমা ২য় দিনে আয়োজন করা হয় কল্প জাহাজ ভাসা উৎসবের।

বাঁশ, বেত, কাঠ এবং রঙিন কাগজ দিয়ে অপূর্ব কারুকাজে তৈরি নদীতে ভাসমান এসব জাহাজে চলছে যেন বাঁধভাঙা আনন্দ। বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও যুবকরা দল বেঁধে নানা বাদ্য বাজিয়ে জাহাজে নাচছে, গাইছে। আবার কোনো কোনো জাহাজে চলছে বুদ্ধ কীর্তন-‘বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘের নাম সবাই বলো রে’ বুদ্ধের মতো এমন দয়াল আর নাইরে। এ বছর স্থান পেয়েছে ৮টি এলাকার ৮টি কল্প জাহাজ। প্রতিটি জাহাজ বানাতে খরচ দেড় লক্ষ টাকা করে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিন রোববার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফকিরা বাজারের পূর্বপাশে বাঁকখালী নদীতে ‘সম্প্রীতির জাহাজে, ফানুসের আলোয় দূর হোক সাম্প্রদায়িক অন্ধকার এ স্লোগানে ঐতিহাসিক জাহাজ ভাসা উৎসবের আয়োজন করা হয়। ব্যতিক্রমী এ আনন্দযজ্ঞ উদ্বোধন করেন জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রামুর পূর্ব রাজারকুল, হাজারীকুল, হাইটুপী রাখাইন পাড়া, হাইটুপী বড়ুয়াপাড়া, দ্বীপ-শ্রীকুল, জাদিপাড়া ও মেরংলোয়া গ্রাম থেকে মোট আটটি কল্প জাহাজ নদীতে ভাসানো হয়েছে। সাত-আটটি নৌকার ওপর বসানো হয়েছে এক-একটি কল্প জাহাজ। আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলীর কারণে খুব সহজেই এসব কল্প জাহাজ মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। প্রতিটি জাহাজেই আছে একাধিক মাইক। ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে জাহাজের উপরে শিশু কিশোর ও যুবকেরা নেচে গিয়ে মেতেছে অন্যরকম আনন্দে। জাহাজ নিয়ে ভেসে এপার থেকে ওপারে যেতে যেতে মাইকে চলে বৌদ্ধ কীর্তন-নাচসহ নানা আনন্দায়োজন।

রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক অর্পণ বড়ুয়া বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় এবারও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে জাহাজ ভাসা উৎসব শেষ হলো। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকেই জানান দিতে চাই, তাই আমাদের স্লোগা হলো, সম্প্রীতির জাহাজে, ফানুসের আলোয় দূর হোক সাম্প্রদায়িক অন্ধকার’।

সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে অর্পন বড়ুয়া বলেন,  ‘উৎসবের দিনে হরতালের মতো কর্মসূচি কাম্য নয়। সকল সম্প্রদায়ের মানুষ যখন নির্বিঘ্নে উৎসব করতে পারে সেভাবে বৌদ্ধ সম্প্রদায় কামনা করে। কিন্তু হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মনে আঘাত করেছে বিএনপি। আমরা বলবো এটি পরিহার করুন”।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মোস্তফা বলেন, এ জাহাজ ভাসা উৎসবকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মূলত উৎসবটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও এখানে সকল ধর্মের মানুষের উপস্থিতি লক্ষণীয়। যা সকল ধর্মের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান বলেন, উৎসব ঘিরে বাঁকখালী নদীর দুই পাড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও সাদা পোশাকধারী সদস্যও মোতায়েন রয়েছে। যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

জাহাজভাসা উৎসবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।

এসময় বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাপ্তি চাকমা, রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ফাহমিদা মোস্তফা, রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু তাহের দেওয়ান,আওয়ামীলীগ নেত্রী নুসরাত জাহান মুন্নী, রামু উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পলক বড়ুয়া আপ্পু, রামু প্রেস ক্লাবের সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি তপন মল্লিক,কক্সবাজার শহর যুবলীগের সভাপতি ডালিম বড়ুয়া,রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আলী, উন্নয়ন কর্মী জেসমিন প্রেমা, স্বপন কুমার বড়ুয়া মেম্বারসহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা ছিলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসাইন।

রামু ছাড়াও কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, চৌফলদন্ডি ও চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীতে জাহাজ ভাসানো উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, অর্ধশতাব্দীকাল ধরে রামুতে এ উৎসবের আয়োজন করা হলেও ২০১২ ও ১৩ সালে এ উৎসব উদযাপন করা হয়নি। রামু বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ঘটনায় ওই দুই বছর এ উৎসব উদযাপন হয়নি। দু’বছর পর আবারো প্রতি বছর থেকে সাড়ম্বরে এ উৎসব পালন করা হচ্ছে। বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলিম সকল সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে এ উৎসব আবারো অসাম্প্রদায়িক মিলন মেলায় পরিণত হয়।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *