সারাদেশ

‘শিল্পকলা পদক ২০২১ ও ২০২২’ ঘোষণা

ডেস্ক রিপোর্ট: ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ (সুর: শেখ সাদী খান, কণ্ঠ: সুবীর নন্দী) ছাড়ও ‘কথা দাও, কথাগুলো ফেরত দেবে না’ (সুর: অজিত রায়, কণ্ঠ: সুবীর নন্দী), ‘স্বাধীনতা তুমি আমার বাড়িতে এসো’ (সুর: খন্দকার নূরুল আলম, কণ্ঠ: শাম্মী আখতার), ‘স্বপ্ন আমার কাজল পুকুর তুমি’ (সুর: সত্য সাহা, কণ্ঠ: এন্ড্রু কিশোর), ‘যে দেশে বাতাস স্মৃতির স্পর্শে ভারী’ (সুর: আজাদ রহমান, কণ্ঠ: সুবীর নন্দী ও সামিনা চৌধুরী), ‘তোমার প্রিয়তমার কাছে তুমি ছিলে মনোহর’ (সুর: অনুপ ভট্টাচার্য, কণ্ঠ: সামিনা চৌধুরী), ‘কতোদিন পরে দেখা, ভালো আছো তো’ (সুর: খন্দকার নূরুল আলম, কণ্ঠ: হাসিনা মমতাজ ও মোহাম্মদ হান্নান), ‘আমি তোমার ভালোবাসার খাঁচায় ধরা দেবো’ (সুর: দেবু ভট্টাচার্য, কণ্ঠ: রুনা লায়লা), ‘এই পতাকাকে চির করো তুমি’ (সুর: সত্য সাহা, কণ্ঠ: শাম্মী আখতার)-এর মতো বিখ্যাত গানগুলোর গীতিকার জাহিদুল হক আর নেই।

আজ সোমবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহিদুল হকের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন তার ভাগ্নী নোভা। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। জাহিদুল হক বাংলা একাডেমির ফেলো ছিলেন। গান লেখার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন কবি ও গল্পকার।

নোভা জানান, মাসখানেক আগে স্ট্রোক করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তার মামাকে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যরা আলোচনা করে জাহিদুল হকের দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান নোভা।

বাংলা একাডেমি এক শোকবার্তায় বলেছে, ‘জাহিদুল হক বাংলা কবিতায় যুক্ত করেছিলেন নতুন মাত্রা। উচ্চকণ্ঠের বিপরীতে সংবেদী অথচ সবল উচ্চারণ তাকে বাংলা কবিতাভুবনে বিশিষ্ট স্থান দান করেছিল। কবিতা ছাড়াও প্রবন্ধ ও গল্পেও তিনি ছিলেন সমান স্বচ্ছন্দ।’

‘বাংলাদেশের গানের ভুবনে ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’সহ অজস্র কালজয়ী গানের গীতিকার হিসেবেও তিনি স্মরণীয়। বাংলা একাডেমি প্রয়াত কবি জাহিদুল হকের আত্মার শান্তি কামনা করছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জ্ঞাপন করছে গভীর সমবেদনা।’

১৯৪৯ সালের ১১ অগাস্ট ভারতের আসামের বদরপুরে জাহিদুল হকের জন্ম। তার চিকিৎসক বাবা তখন সেখানে রেলওয়ে হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তাদের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের আকদিয়া গ্রামে।

জাহিদুল হকের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা ছিলেন বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি মারা যান।

চট্টগ্রামের নগেন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন জাহিদুল হক। ১৯৬৭ সালে ফেনী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি পান। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ করেন।

১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ডয়চে ভেলে রেডিওর সিনিয়র এডিটর ও ব্রডকাস্টার হিসেবে কাজ করেন জাহিদুল হক। দৈনিক সংবাদে কাজ করেছেন সিনিয়র সহ সম্পাদক হিসেবে। বাংলাদেশ বেতারে উপ-মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

জাহিদুল হক লেখালেখি শুরু করেন স্কুল জীবনে। প্রথম কবিতা প্রকাশ হয় ১৯৬৫ সালে দৈনিক সংবাদের ঈদ সংখ্যায়। পরে গীতিকবি হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

জাহিদুল হক ‘বেতার বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। টানা চার বছর তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘চিরশিল্পের বাড়ি’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন। অনুষ্ঠানটি ১৯৯৬ সাল থেকে এখনও প্রচার হচ্ছে নিয়মিত।

তার প্রকাশিত কবিতা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে পকেট ভর্তি মেঘ, তোমার হোমার, নীল দূতাবাস, সেই নিঃশ্বাসগুচ্ছ, পারীগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা, এই ট্রেনটির নাম গার্সিয়া লোরকা, এ উৎসবে আমি একা; গল্প গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ব্যালকনিগুলো, আমার ভালোবাসার অটম; উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে তোমার না আসার বার্ষিকী, আমজাদ আলির মেঘবাড়ি।

সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিতে জাহিদুল হক ২০০০ সালে জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০০২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। এছাড়া গীতি কবিতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ থেকে ২০১৭ সালে পান বিশেষ সম্মাননা।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *