সারাদেশ

রাজধানীর গাউসুল আজম মার্কেটে আগুন

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশব্যাপী বিএনপি-বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর ডাকা হরতালে ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটল সিলেটবাসী।

রোববার (২৯অক্টোববর) সকাল ৬ থেকে ৮টা পর্যন্ত যানচলাচল কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে ভয় ও আতঙ্ক দেখা দেয় সাধারণ মানুষের মাঝে। সকাল সাড়ে আটটা থেকে শুরু হয় নগরী ও শহরতলীর বিভিন্নস্থানে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। আর এরপর থেকেই সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে।কেননা কিছু সময় পরপর বিএনপির ককটেল বিস্ফোরণ ও পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেডে কেঁপে উঠে সিলেটের প্রাণ কেন্দ্র জিন্দাবাজার এলাকা।

জানা যায়, সকাল সাড়ে আটটা থেকে সিলেট নগরী ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে পিকেটিং চলে। এতে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বাস, লেগুনা, অটোরিকশা (সিএনজি), সাংবাদিকের মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও রিকশায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। দিনভর বিভিন্নস্থানে এসব ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন পুলিশের ৫ সদস্য। নাশকতা ও ভাঙচুরের অভিযোগের ঘটনায় পৃথক স্থান থেকে জামায়াত-বিএনপির ৮জন নেতাকর্মীকে আটক করে মহানগর পুলিশ।

আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।

ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যেভাবে:

সকাল সাড়ে আটটা থেকে শুরু হয় সিলেটজুড়ে বিভিন্নস্থানে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। এসময় ককটেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে।

নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার রিকশা চালক আল-আমিন বলেন, ‘ভোরে রিকশা নিয়ে বের হয় বেশ কয়েকটি জায়গা যাই। শরীর একটু ক্লান্ত হলে বিশ্রামের জন্য জিন্দাবাজার এলাকায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, কিন্তু কিছু সময় পরপর বিকট আওয়াজ কানের মধ্যে লাগে। মনে হয়েছিল এই বুঝি সবকিছু উড়ে যাচ্ছে।’

পান দোকানদার সেলিম আহমদ বলেন, ‘কিছু সময় পরপর মানুষের দৌঁড়াদৌঁড়ি দেখা যায় চারদিকে। কেউ কিছু বলতে পারে না। দোকানে বসে এদিক-ওদিক তাকিয়ে পুরো দিন কাটাতে হয়েছে। কারণ কখন কোন দিকে মিছিল আসে বলা যায় না।’

পথচারী সাংবাদিক এনামুল কবীর বলেন, ‘ককটেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে মানুষ দিকবেদিক ছুটতে দেখা যায়। রাজনৈতিক দলগুলো যদি শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করতো তাহলে মানুষের মধ্যে এই ধরনের আতঙ্ক দেখা যেতো না।বিশেষ করে বাসা-বাড়ির পাশে যখন সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয় তখন বাসা-বাড়িতে থাকা শিশুরা ভয় পেয়ে থাকে ‘

সকাল সাড়ে আটটায় নগরীর জিন্দাবাজার সিটি সেন্টারের সামনে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে পিকেটিং করার চেষ্টা করলে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। সকাল নয়টায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের লন্ডনি রোড এলাকায় ৩০ থেকে ৩৫টি মোটরসাইকেলে করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বের হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্তত ১০ থেকে ১২টি গাড়ি লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ভাঙচুর চালিয়ে পিকেটাররা দ্রুত সরে যান।

সকাল সোয়া ৯টায় নগরীর জেল রোড পয়েন্ট থেকে মহাজনপট্টির গলির দিকে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কয়েছ লোদীর নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন বিএনপি নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে দুই পয়েন্টের মধ্যবর্তী স্থানে এসে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় তারা পিকেটিং শুরু করেন। তবে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে আসে এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

একই সময়ে নগরীর দরগাহ গেইট এলাকায় জাতীয় দৈনিক খবরের কাগজের ফটো সাংবাদিক মামুন হোসেনের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে বিএনপির পিকেটাররা। একই সময়ে একটি রিকশাতে আগুন ধরিয়ে দেয় পালিয়ে ওই দলের পিকেটাররা। এছাড়াও দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বর এলাকায় জাফলংমুখী একটি যাত্রীবাহী বাসও ভাঙচুর করেন পিকেটাররা।

এরপর থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানচলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। তবে, আগে থেকে গণপরিবহন চলাচল করবে বলে ঘোষণা দিলেও নিরাপত্তার অজুহাতে পরিবহণ শ্রমিকরাও সকাল থেকে পরিবহণ চলাচল বন্ধ রাখে। সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস। আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও চলেনি গণপরিহন। এতে জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজন পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন তাদের গন্তব্যে।

এছাড়াও দিনভর সিলেট জেলা ও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ, র‍্যাব, সিআরটি, ডিবি পুলিশ, সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়।

দিনভর বন্ধ ছিল মার্কেট ও শপিংমল

এদিকে, হরতালে সিলেট নগরী কিছু সংখ্যক দোকানপাট খোলা থাকলেও বেশিরভাগ মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ ছিল। নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, নয়া সড়ক, বারুত খানা, আম্বরখানা, মিরাবাজার, লামাবাজার, শিবগঞ্জ, টিলাগড়সহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ দেখা গেছে। তবে ওষুধসহ কিছু জরুরি প্রয়োজনীয় দোকান খোলা দেখা যায়।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *