হিযবুত তাহরীর’র শীর্ষ নেতা আহম্মেদ নিজাম গ্রেফতার
ডেস্ক রিপোর্ট: বায়ু দূষণের বিশ্বের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রতি তিন দিনের একদিন দূষণ সূচকে শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকার বাতাস। অবশিষ্ট দিনগুলোতে এক থেকে চারের মধ্যেই থাকছে ঢাকার বায়ুমান। এ বছর বায়ু দূষণের বৈশ্বিক তালিকায় ঢাকার সাথে শীর্ষ তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের আরও দুটি শহর; গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জ। এছাড়াও দেশের সিলেট, কক্সবাজারের বায়ু দূষণ চট্টগ্রামের চেয়ে বেশি। ১৪৮টি দেশের বায়ুমান র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ৬টি শহরের নাম পাওয়া যাচ্ছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশে ৮ হাজারের কাছাকাছি ইটের ভাটা ছড়িয়ে আছে। প্রত্যেকটা ইটের ভাটা একেকটি ইন্ডাস্ট্রির মতো দূষণ করে যাচ্ছে। ফসিল ফুয়েল মানুষের জনজীবনে প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন চলাচল ও অপরিকল্পিত কনস্ট্রাকশনের কারণে পরিবেশের এই বিপর্যয় তৈরি হয়েছে।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বায়ু দূষণের ফলে ঢাকার মানুষের গড় আয়ু ৮ বছর ৩ মাস কমে যাচ্ছে। শুধু বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ড নয়, বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করতে পারলে মানুষের গড় আয়ু ৮ বছর বেড়ে যেতো। শুধু যে ঢাকার মানুষের আয়ু কমছে তা নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের গড় আয়ু কমছে ৬ বছর করে।
সেন্টার ফর এটমোসফেরিক পলুশন স্টাডিজের (ক্যাপস) তথ্যমতে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বায়ু দূষণ কবলিত এলাকা হচ্ছে গাজীপুর। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ।
এখন বায়ুতে বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যালের উপস্থিতি দেখা যায়। বিশেষ করে কার্বন-মনো-অক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইড, ওজোন, মিথেন, হেভি মেটাল, লেড, মার্কারি; সব বায়ুতে মিলিয়ে যাচ্ছে। তা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি থেকে শুরু করে বস্তিবাসী পর্যন্ত সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। মানুষের বায়ুবাহিত রোগ ও থ্রোট ইনফেকশন প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে।
বায়ু দূষণের জন্য ছয়টি কারণ চিহ্নিত করে ক্যাপস। এগুলো হলো- নির্মাণকাজ, ইটভাটা ও শিল্প-কারখানা, যানবাহনের ধোঁয়া, আন্তর্দেশীয় দূষণ (নেপাল ও ভারত থেকে আসা দূষিত বাতাস), রান্নাঘরের ধোঁয়া ও শহুরে বর্জ্য।
ক্যাপসের সভাপতি অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান বলেন, বায়ু দূষণের জন্য অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে গণপরিবহন। গণপরিবহনের দূষণ রোধ করার জন্য আমরা অনেক আগে থেকে বলে আসছি। ৩০-৪০ বছরের পুরনো যানবাহন এখনো আমাদের রাস্তায় চলাচল করে। বিআরটিএ-এর কাছে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করার যন্ত্রই নেই। সার্বিকভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। বায়ু দূষণ প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ূ দূষণ নিয়ন্ত্রণ মনিটরিং সেলের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরে সিলেট বিভাগের মানুষ মাত্র ছয় দিন নির্মল বায়ু গ্রহণ করে। এছাড়া দেশের আর কোনো অঞ্চলের মানুষ নির্মল বায়ু গ্রহণ করেনি। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ দিনই ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ স্তরে ছিলো ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুরের বায়ুমান।
তবে বায়ু দূষণের আইকিউ-এর আর্ন্তজাতিক মানকে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলছেন পরিবেশ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা শাখা বলছে, আইকিউ ওয়েদার যে র্যাংকিংটা করে সেটা নির্দিষ্ট বায়ুমানের চেয়ে একশো থেকে দেড়শো বেশি দেখায়। তাদের বসানো একমাত্র সেন্সরটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে বসানো হয়নি। দেশের অন্যান্য বিভাগে যে হারে বায়ূ দূষণ হয়, তার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দায়ী নয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মোতালিব বার্তা২৪.কমকে বলেন, বৈশ্বিকভাবে যে র্যাংকিংটা সবাই দেখে সেটা আর্ন্তজাতিক মানদণ্ড মেনে করা হয়নি। তারা মহাখালীতে একটা ডিভাইস বসিয়ে রেখেছে যেদিক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। মহাখালীর বায়ুর র্যাংকিং ‘ঢাকা শহর বা বাংলাদেশ’ কোনোটাকেই রিপ্রেজেন্ট করে না। আমরা বিষয়টা তাদের দৃষ্টিতে এনেছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বায়ু দূষণের জন্য অনেকাংশে দায়ী পার্শ্ববর্তী দেশের বাতাস। তাদের দূষিত বাতাস না আসলে আমাদের বায়ুমান ভালো থাকে। রংপুর, সিলেটে বায়ু অস্বাস্থ্যকর হওয়ার তেমন কারণ নেই। কিন্তু দেখা যায় ঢাকার চেয়েও ওইসব এলাকার বায়ুমান বেশি অস্বাস্থ্যকর থাকে।
বায়ু দূষণ প্রতিরোধ সম্পর্কে তিনি বলেন, বায়ু দূষণের জন্য যেসব কারণ আমরা দেখি সেসব প্রতিরোধ করার জন্য কয়েকটি সংস্থা আছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ইন্ডাস্ট্রি ও ইটভাটার বিষয়টা সরাসরি দেখে। যানবাহনের দূষণটা দেখতে হবে বিআরটিএ-কে, সরকারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের জন্য নির্দিষ্ট সংস্থা আছে, সিটি করপোরেশন ও রাজউক আছে। সবাই এগিয়ে না আসলে বায়ু দূষণ প্রতিরোধ সম্ভব না।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।