কঠোর হবার বার্তা সরকারের, তবুও ভাঙছে না সিন্ডিকেট
ডেস্ক রিপোর্ট: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেয়া ইশতেহারে ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকারের কথা বলেছিলো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিলো যে বিষয়টি সেটি হলো দ্রব্যমূল্য। দলটি ইশতেহারে ঘোষণা দিয়ে বলেছিলো দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে।
নির্বাচনে নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে দলটি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ জনের মন্ত্রিসভার সদস্যকে শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পরে ১৩ জানুয়ারি টুঙ্গীপাড়ায় মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে ১৫ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেও গুরুত্ব পায় বিষয়টি। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব গণমাধ্যমকে জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর তরফ থেকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন মুদ্রাস্ফীতি বা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের প্রতি। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মুদ্রাস্ফীতি বা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশ দেন।’
বার বার প্রধানমন্ত্রীর এমন কড়া নির্দেশনার পরও বাজারে এর প্রভাব খুব একটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারির দেয়া টিসিবির মূল্য তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, নতুন সরকার গঠন হবার পর আরও বেশ কিছু পণ্যের মূল্য বেড়েছে। বেড়েছে চাল, ডাল, আদা ও রসুনের দাম। এছাড়াও মুরগি, গরুর মাংসের দাম ও বাড়তির দিকে। শীতকালীন সবজি এখনো সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে।
টিসিবি মূল্য তালিকায় ১৯ ডিসেম্বর ও ১৯ জানুয়ারির মধ্যে গত এক মাসের ব্যবধানে মূল্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোটা চালে গত এক মাসে ৪.০৮ শতাংশ মূল্য বেড়ে ৪৮-৫০ থেকে ৫০-৫২ টাকা হয়েছে। সরু চাল ৫.৩৮ শতাংশ বেড়ে ৬০-৭০ থেকে ৬২-৭৫ টাকা প্রতি কেজি হয়েছে। একইভাবে খোলা ময়দা প্রতি কেজিতে ৮ শতাংশ বেড়ে ৬০-৬৫ থেকে ৬৫-৭০ টাকা হয়েছে। মুগ ডাল ১৩.০৪ শতাংশ বেড়ে মানভেদে ৯৫-১৩৫ থেকে ১০০-১৬০ টাকা প্রতি কেজি।
তবে গত এক মাসে দাম কমেছে আলু ও পেয়াজের। আলু ২৮ শতাংশ দাম কমে ৬০-৬৫ থেকে নেমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা প্রতি কেজি। অন্যদিকে দেশি পেয়াজ ৩১.৮২ শতাংশ কমে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা প্রতি কেজিতে। এছাড়াও দাম বেড়েছে, গরু, মুরগি সহ প্রায় সব ধরণের মাংসের। পিছিয়ে নেয় এলাচ, লবঙ্গ সহ অন্যান্য মশলার দাম। বৃদ্ধি পেয়েছে এসব নিত্যব্যবহার্য মশলার মূল্যও।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে চালের মূল্য কমানোর জন্য ৪ দিনের সময় বেধে দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, চার দিনের মধ্যে চালের দাম কমিয়ে আগের অবস্থায় না আনলে মজুদকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারের প্রতিশ্রুতি ও এমন শক্ত নির্দেশনার পরেও দ্রব্যমূল্য বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। যাদের সংসার চলে তাদের প্রতিদিনের আয়ের উপর নির্ভর করে, তাদের অনেকেরই এখন নাভিশ্বাস উঠেছে। স্বস্তি ফিরছে না বাজারে।
এনিয়ে খুচরা ব্যবসায়ী ও পাইকারি আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে চালের কোন সংকট নেই, তবুও কিছু মিল মালিক ও একটি অসাধু ব্যাবসায়ী চক্র সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে।
“সরকার শুধু খুচরা ব্যবসায়ী ও পাইকারি দোকানগুলোতে অভিযান চালায়, এইখানে কোন সিন্ডিকেট নেই। সরকার যদি সঠিক জায়গায় নিয়মিত অভিযান চালায় তাহলে দাম কমে আসবে,” বললেন একজন আড়তদার।
রাজধানীর ইব্রাহীমপুর কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা রুমি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, পকেট কাটছে সাধারণ মানুষের। এদের দমন না করা পর্যন্ত বাজারে স্বস্তি ফিরবে না। সরকার যাই করুক, আমরা চাই দ্রব্য মূল্যের দাম যেনো আমাদের সাধ্যের মধ্যে আসে। তাহলেই আমরা খুশি।
একদিনে যেমন দাম বাড়ে না, একদিনে কমবেও না জানিয়ে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান বার্তা২৪.কম কে বলেন, ‘এই কিছুদিনের মধ্যেই কি দাম কমে যাবে? সময় দিয়ে দেখতে হবে। মুদ্রণীতি, ডিজিটাল মনিটরিং এবং ট্রেড পলিসি এই ২/৩ টা যদি সমন্বিতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখার জন্য যা যা করা দরকার তা যদি করা হয় তাহলেই দাম কমে যাবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বার্তা২৪.কম কে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। যেখানে যা যা দরকার, সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের কম্প্রোমাইজ করা হবে না। মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করে মূল্যস্ফীতি কমানো, বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা, বাজার সঠিকভাবে পরিচালনা করা, বাজার সিন্ডিকেট করে যারা মুনাফার জন্য সেখানে সরকারি ইন্সট্রুমেন্ট গুলোকে কাজে লাগানো একইভাবে দলগতভাবেও মানুষজনকে সচেতন করা। এসব বিষয়ে মানুষ যেন সজাগ থাকে সে ব্যাপারে জনমত গড়ে তোলা হবে।”
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।