সারাদেশ

রাবির রোকেয়া হল ক্যান্টিনে শিক্ষার্থীদের তালা

ডেস্ক রিপোর্ট: পরিযায়ী পাখির এক অবাধ বিচরণস্থল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। আঁকা-বাঁকা লেক আর সবুজ গাছপালায় আচ্ছাদিত এই ক্যাম্পাসে শীতের পূর্ব থেকেই শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে আসতে শুরু করে পরিযায়ী পাখিরা। অবাধে গাছ কাটা পড়া, পাখিদের বিচরণ করা লেকগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করা ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় উল্লেখযোগ্য হারে কমতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা।

‘পাখ-পাখালি দেশের রত্ন, আসুন করি সবাই যত্ন’ স্লোগানকে সামনে পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল পৌনে ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন প্রাঙ্গণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বেলুন উড়িয়ে এবারের পাখি মেলার উদ্বোধন করেন।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাখির অভয়ারণ্য নিশ্চিত করার স্বার্থে আরোপিত বিধি-নিষেধ মানতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে শুক্র ও শনিবার বিভিন্ন ব্যাচের পুনর্মিলনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। যেখানে সেখানে ব্যান্ড নিয়ে এসে গানবাজনা করে শব্দদূষণ করা হতো। পাখি যাতে নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য আমরা সেসব বন্ধ করে দিয়েছি। শব্দদূষণ আমরা বন্ধ করতে পেরেছি, তবে জনসমাগম বন্ধ করতে পারিনি। আমরা চেষ্টা করছি পাখির আবাসস্থল যাতে নিরাপদে থাকে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাখি মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মনজুরুল হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, পাখি বিশারদ ইনাম আল হক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী, আইসিইউএন-এর প্রতিনিধি সারোয়ার আলম দিপু, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি আরিফুর রহমান প্রমুখ।

পাখিমেলায় দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলার দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, পাখি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা এবং সবার জন্য উন্মুক্ত পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

এ ছাড়া পাখি মেলায় বিগ বার্ড প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের সম্মাননা, গণমাধ্যমে পাখি বিষয়ক সেরা প্রতিবেদন এবং পাখি বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনের উপর পুরস্কার প্রদান করা হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত পাখি মেলায় ছোটদের পাখি বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কুইজ, বই-পোস্টার প্রদর্শনী, সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পাখি দেখা, পাখি চেনার প্রতিযোগিতা এবং পাখি বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে পাখির দেখা মিলেছে কম। তবে মেলায় ছিল পাখি প্রেমী দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। দূর-দূরান্ত থেকে পরিযায়ী পাখি দেখতে ক্যাম্পাসে আসা দর্শনার্থীরা অতিথি পাখির কিচিরমিচির, খুনসুটি আর ওড়াওড়ি দেখতে না পেরে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

রাজধানীর মিরপুর থেকে জোহায়ের আহনাফ জানান, ‘শহুরে কোলাহল আর প্রতিদিনের ব্যস্ততার ফাঁকে একটুখানি প্রশান্তির জন্য বাচ্চাদের নিয়ে মেলায় এসেছি। এর আগেও বেশকয়েকবার মেলায় এসেছিলাম। তখন লেকগুলোতে পাখি ছিল। তবে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে কোনো পাখি নেই।’

প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর অনুষ্ঠিত হল ২২তম পাখি মেলা। এর আগে ‘বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব’ ২০০০ সালে প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখি মেলা শুরু করেছিল। পরে ২০০৪ সাল থেকে সরাসরি সম্পৃক্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। এর মধ্যে ২০১১ সাল এবং ২০২১ সালে পাখি মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *