শিল্পী সমাজের প্রতিক্রিয়া: প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে কিন্তু রাজনীতিতে হিংসার জায়গা নেই
ডেস্ক রিপোর্ট: শিল্পী সমাজের প্রতিক্রিয়া: প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে কিন্তু রাজনীতিতে হিংসার জায়গা নেই
গেল ২৮ অক্টোবর (২০২৩) বিএনপি’র মহাসমাবেশকে ঘিরে সহিংসতার যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা ইতিমধ্যেই বাস্তব হয়ে উঠেছে। সমাবেশের দিনে ঘটে যাওয়া অগ্নি-সংযোগ, ভাঙচুর ও বিক্ষিপ্ত হামলায় সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, রাজনৈতিক কর্মীসহ বহু মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় জনমনে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
হামলায় আক্রান্ত হয়ে ১ পুলিশ সদস্য, ১ সাংবাদিকসহ আরও ১ জনের নিহত হওয়ার মধ্যেই রোববার সকাল-সন্ধ্যা সারাদেশে হরতাল আহ্বান করে বিএনপি-জামায়াত। হরতালে দেশজুড়ে ব্যাপক নাশকতার মধ্যেই আরও ৩ দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
অনেকদিন পর রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিতিশীলতার যে পুনরাবৃত্তি ঘটলো তা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের শিল্পী সমাজ ও সংস্কৃতিজনরা। তারা বলেছেন, সহিংসতা কখনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে। তারা আশা করেছেন, রাজনীতিবিদদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা জনজীবনে স্বস্তি দিতে এই সহিংসতার পথ পরিহার করবেন।
গেল দু’দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব, নির্মাতা রামেন্দু মজুমদার ও লাকী ইনামের প্রতিক্রিয়া জেনেছে বার্তা২৪.কম । তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।
জাতীয় জীবনে ফের রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রসঙ্গে একুশে পদক জয়ী নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘সহিংসতা তো কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা আবার সেই অন্ধকার যুগে ফিরে যাচ্ছি মনে হচ্ছে। কয়েকটা বছর তো বেশ ভালো ছিলাম। রাজনৈতিক হানাহানিটা বন্ধ ছিল। সেটা তো আবার ফিরে এসেছে’।
বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব, নির্মাতা রামেন্দু মজুমদার। ‘সুতরাং এটাকে আমরা খুবই নিন্দা জানাই যে ঘটনা গুলো ঘটছে। আমরা চাই যে সহিংসতা না হোক। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে কিন্তু হিংসার কোন জায়গা নেই রাজনীতিতে। এটা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। কিন্তু অবস্থা যে জায়গায় গেছে তাতে এসব কথা কারো কানে ঢুকবে কিনা সন্দেহ’-যোগ করেন রামেন্দু মজুমদার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতের ফের সরব হওয়া প্রসঙ্গে বরেণ্য এই নাট্য ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘এটাকে খুব শক্ত হাতে দমন করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার যেভাবে জঙ্গিবাদকে দমন করেছে, এই অন্ধকারের শক্তিকেও সেভাবে শক্ত হাতে দমন করতে হবে।’
রাজনীতির মাঠে সহিংসতা নিয়ে শিল্পী সমাজের প্রতিবাদ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে একটি কর্মসূচি চলছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃত্বে। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে যদি শুভবুদ্ধির উদয় না হয় তাহলে খুব কঠিন সময় আসবে সামনে আমাদের জন্য। আমরা আমাদের সীমিত শক্তির মধ্যে দিয়ে এই কথা বলে যাব।’
একুশে পদকজয়ী নাট্যাভিনেত্রী ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী আনামের কাছে প্রশ্ন ছিল, দু’দিনের সহিংসতাকে কিভাবে দেখছে শিল্পী সমাজ? তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা এটা আশা করছি না। একটি আশঙ্কা তো বরাবরই থাকে। সেটা খুব খারাপ আকারেই দেখা দিল। সারাদিন খুব চিন্তার ভেতরে ছিলাম। এতোটা খারাপ হবে ভাবিনি। বিশেষ করে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরা আক্রান্ত হয়েছেন, একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন; সবকিছু মিলিয়ে বিষয়টি খুব খারাপ হয়ে গেল’।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী আনাম। লাকী ইনাম বলেন, ‘বরাবরই শিল্পীরা এ নিয়ে কথা বলেন। এখন সাংগঠনিকভাবে আমাদের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আছে, পথনাটক পরিষদসহ অনেকগুলো সংগঠন আছে, তারা এটা নিয়ে ভাবতে পারে। নিশ্চয়ই এ নিয়ে একটি প্রতিবাদ আয়োজন হবে, আশা করছি’
বিশেষ করে জামায়াতের আগ্রাসী ভূমিকায় বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এটা একটা খারাপ সংকেত। এতো দিন কিছু নেই। বোঝা যাচ্ছে, ভেতরে ভেতরে প্ল্যান করেছিল, এই সময়টায় কিছু ঝামেলা করবে। এদের সরব হওয়াটা খুব আশঙ্কাজনক। এদের (জামায়াত) তো কোনো রাইটই নাই। যারা দেশটাকেই চায়নি। তারা দেশের কোন কিছুতে কেন আসবে?’
সাংস্কৃতিক মাধ্যমে এই আগ্রাসনের প্রতিবাদ কর্মসূচির বিষয়ে লাকী ইনাম বলেন, ‘আমরা তো সময়ই আন্দোলন করে এসেছি। যখন আমরা দেখি আমাদের সংস্কৃতি আহত হয়। বিঘ্ন ঘটে। আমাদের সংস্কৃতির মানুষেরা কখনেই এদের সাপোর্ট করে না। সুতরাং আমরা তো এটি কখনোই মেনে নিতে পারি না। বাংলা ভাষা আর বাংলা সংস্কৃতি ছাড়া বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। তাই এটি আমাদের জন্য এটি চিন্তারই বিষয়। এ নিয়ে কর্মসূচি গ্রহণে আমাদের কথাবার্তাও হচ্ছে।’
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।