আন্তর্জাতিক

বাণিজ্য মেলার পর্দা উঠছে আজ

ডেস্ক রিপোর্ট: ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পর্দা উঠছে আজ। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি মেলার ২৬তম আসরের সব ধরণের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। দেশি-বিদেশি ৩৫০টি স্টল থাকছে এবারের বাণিজ্য মেলায়।

রোববার (২১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) এ মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি যুক্ত থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়েই দেশের ২৮তম বাণিজ্য মেলার আসরে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রেতাদের সঙ্গে মিলিত হবেন দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীরা।

গত বছরের ন্যায় রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) সাজানো হয়েছে বাণিজ্য মেলার এবারের আসর। এর আগে শহরের শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হলেও মূলত জনদুর্ভোগ এড়াতে বাণিজ্য মেলা মূল শহর থেকে পূর্বাচলে স্থানান্তর করা হয়।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় ২৮তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা 

বাণিজ্য মেলা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু দোকানে উঠেছে পণ্য। বাকি দোকানগুলোতে পণ্য সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছে কর্মচারীরা। দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি ভারত, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, তুরস্ক, নেপালসহ বেশ কয়েকটি দেশের পণ্য-স্টল-প্যাভিলিয়ন স্থান পেয়েছে এবারের বাণিজ্য মেলায়। লেনদেনের সুবিধা বাড়াতে ইসলামি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অস্থায়ী বুথ ও আউটলেট থাকছে মেলায়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুযোগ সুবিধাও পাবে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় প্রবেশের আগেই দেখা মিলবে দেশের মেগা প্রকল্প ও উন্নয়ন দৃশ্য। বাণিজ্য মেলার প্রবেশ দ্বার ও মেলার আশেপাশে নান্দনিক ডিসপ্লে দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সেগুলো। কর্ণফুলী টানেলের আদলে তৈরি গেট দিয়ে বিশেষ নিরাপত্তায় মেলায় প্রবেশ করতেই মিলবে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের উপর রচিত বই ও নানা বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে ৷ বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন অতিক্রম করতেই চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা আর দেশী-বিদেশী পণ্যের ঝলকানিতে মুগ্ধ হবে ক্রেতা দর্শনার্থীরা।

এদিকে, শিশুদের বিনোদনের জন্য বাণিজ্য মেলার অভ্যন্তরে আলাদা স্থানে তৈরি করা হয়েছে শিশুপার্ক। ছোটদের খেলার সরঞ্জাম রাখা হয়েছে সেখানে। এছাড়া মেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব পরিচালনায় থাকবে ৫০ জন নিরাপত্তাকর্মী। এছাড়া পুলিশ, আনসারের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে র‍্যাব সদস্যরাও।

মেলায় প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন

 

নির্বাচনের জন্য এবারের বাণিজ্য মেলা কিছুটা দেরিতে শুরু হলেও সব মিলিয়ে ভালো বিক্রির আশা করছেন মেলায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা। গতবারের তুলনায় অধিক মুনাফা আসবে বলেও আশাবাদী তারা।

বেডশিট, পর্দা ও চাদর-ব্যবসায়ী চন্দন জানান, সব কিছু প্রস্তুত, এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। আশা করছি আগামীকাল উদ্বোধন হলে প্রথম দিন থেকেই বেশ ভালো বিক্রি আসবে। এবার রাস্তাঘাট উন্নত৷ বাকি পরিস্থিতি বুঝে বলা যাবে।

ভারতীয় ব্যাগ ব্যবসায়ী মুকেশ অর্জুন বলেন, আমাদের দোকান সাজানোর কাজ চলছে, কাল থেকে বিক্রি শুরু হবে। ভালোই আশা করছি।

টেস্টি ট্রিট শপের ম্যানেজার আলম খন্দকার বলেন, আমাদের সব ডেকোরেশন শেষ। কাল উদ্বোধনের পর পরই এখানে সব মালামাল আসবে, এবং বিক্রি শুরু হবে।

মেলা সম্পর্কে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) জানিয়েছেন, বাণিজ্য মেলায় হয়রানি বা প্রতারিত হবেন না কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা-দর্শনার্থী। খাবারের মান, পণ্যের মান যাচাইয়ে থাকবে বিশেষ নজরদারি। তিনি বলেন, মেলায় কেউ প্রতারিত হবেন না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আছে। আমাদের নির্দেশনা থাকবে, যাতে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে সার্বক্ষণিক সব কিছু মনিটর করা হয়। কোনো অভিযোগ আসলেই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া আমাদের অভিযোগ বক্স থাকবে প্রতিদিন সেখানে প্রতিদিনের অভিযোগগুলো মনিটর করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশীয় পণ্যের রফতানি বাড়ানো, এবং আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, এবার বাণিজ্য মেলার ঢাকার সব অঞ্চলের মানুষ নির্বিঘ্নে আসতে পারবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের যাত্রীরাও এখানে আসতে পারবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের মাধ্যমে। ফার্মগেট থেকে সরাসরি বাণিজ্য মেলায় বাস চলাচল করবে৷ ফার্মগেটে আমাদের মেট্রোরেলের স্টেশন আছে৷ এছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা জোরালভাবে দেখছি। সাথে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা যাতে হয়রানি বা প্রতারিত না হয় সে দিকটাও দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে এবারের মেলা। গতবারের থেকে এবার বাড়ানো হয়েছে বাণিজ্য মেলা প্রবেশ মূল্য। বড়দের জন্য ৫০ ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে মেলা কর্তৃপক্ষ।

সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি ডেডিকেটেড সার্ভিসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মতিঝিল ও মিরপুর ও উত্তরা থেকে মেলায় যাওয়ার জন্য হাব হিসেবে ব্যবহার করা হবে রাজধানীর ফার্মগেট। যেখানে মেট্রোরেলের মাধ্যমে যাত্রীরা এসে ফার্মগেটে নামবে। ফার্মগেট থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিআরটিসি বাস চলবে রূপগঞ্জের মেলার স্থান পর্যন্ত। এছাড়া কুড়িল থেকেও বাস সার্ভিস রাখা হয়েছে।

 

 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *