সারাদেশ

দুদকের মামলায় জেলে পুলিশের এএসআই

ডেস্ক রিপোর্ট: দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দেশজুড়ে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহন। ফলে, প্রতিবছরই উল্ল্যেখজনক হারে বেড়েই চলেছে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা। সরকার থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ ও আইন প্রণয়ন করা হলেও এর উল্ল্যেখযোগ্য ভূমিকা অদৃশ্যমানই থেকে যাচ্ছে।

তবে এবার সড়কে এই অরাজকতা রুখতে বিশেষ এক সফটওয়্যার পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।

এই পদ্ধতির মাধ্যমে যেকোনো ধরনের অপরাধে শাস্তির আওতায় আসবেন চালক। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট সংখ্যক অপরাধ সংঘটিত হলে বাতিল হতে পারে লাইসেন্সও। আর কোনো ব্যক্তির লাইসেন্স একবার বাতিল হলে, তিনি আর কখনোই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। ফলে. লাইসেন্স বাতিলের ভয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং দুর্ঘটনা কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)-এর তথ্য মতে, প্রতি ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিপরীতে ১২ পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে। সড়ক পরিবহন আইন-বিধির অধীনে অপরাধের ধরন ভেদে কাটা পড়বে দোষসূচক পয়েন্ট।

৮ পয়েন্ট কাটা গেলে পয়েন্ট ফেরতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২ বছর। অপরাধের সংখ্যা বেড়ে ১২ পয়েন্ট কাটা পড়লেই স্থগিত বা বাতিল হবে ড্রাইভিং লাইসেন্সও।

কোনো চালকের লাইসেন্স বাতিল হলে ওই চালক আর কখনো আবেদন করতে পারবেন না ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য। কোনো চালক ৬ মাসের মধ্যে যদি কোনো নিয়ম লঙ্ঘন না করেন, তাহলে চালকের আপিলের পর ২ পয়েন্ট ফেরত পেতে পারেন। পরে আবার পরবর্তী ৬ মাস কোনো নিয়ম লঙ্ঘন না করলে আরো ২ পয়েন্ট ফেরত পাবেন চালক।
তবে হ্যাঁ, বিভিন্ন অপরাধে পয়েন্ট কাটা গেলেও সড়ক পরিবহন আইন-বিধির অধীনে নিয়মের ব্যত্যয় না করলে সুযোগ থাকবে পয়েন্ট ফেরত পাওয়ার।

বিআরটিএ’র তথ্যমতে,সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এই পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়া শুরুর জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্জক্রমও শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব, এই পদ্ধতি চালুর জন্য কাজ চলছে বলেও জানা গেছে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি’র (বিআরটিএ) রোড সেফটি শাখার পরিচালক শেখ মোহাম্মদ-ই-রব্বানী বার্তা২৪কে জানান, সিস্টেমের কাজ চলছে। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চালু করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘পুলিশ কিছু কাজ করবে। অপরাধ বুঝে ডাটাবেজ এন্ট্রি হবে। একটি লাইসেন্সের যখন সব পয়েন্ট কাটা যাবে তখন অটোমেটিক তার লাইসেন্স সাসপেন্ড (স্থগিত) হয়ে যাবে। এখন ডাটা এন্ট্রির জন্য তো মেইনলি (প্রধানত) কাজ তো পুলিশে করে। সেই ক্ষেত্রে পুলিশ তো আর আমাদের অফিসে এসে এন্ট্রি করবে না। তারা তো যেখানে অপরাধ হবে, সেখান থেকেই এন্ট্রি করবে। সেটার জন্য যে সফটওয়্যার প্রয়োজন, সেই সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে’।

রব্বানী বলেন, ‘এটা মেইনলি (প্রধানত) পুলিশের কাজ; তাই পুলিশ একটি সফটওয়্যার তৈরি করছে। আমাদের এখান থেকেও একটা সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে। দুইটা সফটওয়্যার তৈরি হয়ে গেলে দুইটা একসঙ্গে ম্যাচ করা হবে। আমাদের সফটওয়্যারের কাজ মোটামুটি কমপ্লিট। তাদেরটা তৈরি হলেই দুইটা একসঙ্গে সমন্বয় করা হবে।‘

পয়েন্ট কীভাবে কাটা হবে, সে বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ অপরাধের ধরন বুঝে পয়েন্ট কাটবে। সেই লাইসেন্সের ডিটেইলস আমাদের কম্পিউটারে থাকবে। আমরা দেখতে পারবো, ওই লাইসেন্সের কত পয়েন্ট কাটা পড়েছে আর কত পয়েন্ট আছে। পরে পয়েন্ট কাটার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাসেজ চলে যাবে লাইসেন্সেধারীর মোবাইল ফোনে। সব পয়েন্ট কাটা গেলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে এবং ড্রাইভারের কাছে নোটিশ চলে যাবে।’

কীভাবে মনিটরিং করা হবে এবং কে এই পয়েন্ট কাটার বিষয়ে কাজ করবে জানতে চাইলে পরিচালক শেখ মোহাম্মদ-ই-রব্বানী বলেন, ‘এখন তো সড়কে সবকিছু দেখভাল করে পুলিশ। নতুন পদ্ধতি চালু হলে পুলিশই তা করবে। তবে পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে এই পদ্ধতির আপডেট করার মাধ্যমে একসময় সিসিটিভির মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হবে’।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, চালকদের এ দোষসূচক কর্তনযোগ্য পয়েন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য কর্তৃপক্ষের মোটরযান পরিদর্শকের সমমানের পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর বা সার্জেন্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পয়েন্ট কেটে মোটরযান চালক ও সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে। জানানোর পর দোষসূচক পয়েন্ট কাটার বিষয়টি নথিভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট মোটরযানের চালককে বিষয়টি জানাবে।

চালক দোষসূচক পয়েন্ট কর্তন সম্পর্কে জানার ৩০ দিনের মধ্যে তা পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি পরিশোধ করে আবেদন করতে পারবেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পর্যালোচনা করে ৩০ দিনের মধ্যে ওই পয়েন্ট কর্তন থেকে আবেদনকারীকে অব্যাহতি বা তা বহাল রেখে আবেদন নিষ্পত্তি করবেন।

অভিযুক্ত চালক ৬ মাসের মধ্যে ফের অপরাধ না করলে বা দোষী সাব্যস্ত না হলে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ প্রতি ৬ মাস পরপর কর্তন করা দোষসূচক পয়েন্ট থেকে ২ পয়েন্ট করে ফেরত দিতে পারবে।

বিআরটিএ’র ইঞ্জিনিয়ারিং উইংয়ের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা তো লাইসেন্সটা ডিজিটালাইজ করার চেষ্টা করছি। আমি যতদূর জানি, তার আগে ম্যানুয়ালি তথ্যগুলো রাখার কাজ চলছে’।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মনিবুর রহমান বলেন, ‘বিধি মোতাবেক কাজ চলছে। বিআটিএ’র সঙ্গে একটা কো-অর্ডিনেশন মিটিং লাগবে। অর্ডিনেশন মিটিংয়ের মাধ্যমে যখন কোনো সিদ্ধান্ত আসবে তখন আমরা সেভাবে কাজগুলো করতে পারবো’।

তিনি বলেন, ‘বিআরটিএ’র কাছে একটা ডাটাবেজ থাকবে। কোনো গাড়ি অনিয়ম করলে আমরা সে গাড়ির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে বিআরটিএ’র কাছে যে ডাটাবেজ থাকবে, সেখান থেকে পয়েন্ট কাটা যাবে’।

এর সুফল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতির অনেক সুফল পাওয়া যাবে। পয়েন্ট যখন কর্তন হবে তখন লাইসেন্স বাতিলের ভয়ে সবাই একটা সিস্টেমের মধ্যে চলে আসবেন। গাড়ি চালানোর বিষয়ে আরও সচেতন হবেন।

বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটা বিষয়ে বলেন, যেসব অপরাধে পয়েন্ট কাটা পড়বে, সেগুলো হচ্ছে-

১.ইচ্ছাকৃতভাবে পথ আটকে বা অন্য কোনোভাবে অন্য মোটরযানের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে কাটা যাবে ২ পয়েন্ট।
২. নির্ধারিত শব্দমাত্রার অতিরিক্ত উচ্চমাত্রার কোনোরূপ শব্দ সৃষ্টি বা হর্ন বাজানো বা কোনো যন্ত্র, যন্ত্রাংশ বা হর্ন মোটরযানে স্থাপন করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
৩. অতিরিক্ত ওজন বহন করে মোটরযান চালানোয় কাটা যাবে ২ পয়েন্ট।
৪. পরিবেশ দূষণকারী ও ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান চালানোয় কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
৫. ট্রাফিক সাইন ও সংকেতের বিধান লঙ্ঘন করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
৬. মোটরযানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
৭. মোটরযানের বাণিজ্যিক ব্যবহার সংক্রান্ত ধারা ৩১-এর বিধান লঙ্ঘন করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
৮. কন্ট্র্যাক্ট ক্যারিজের মিটার অবৈধভাবে পরিবর্তন বা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
৯. সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘনে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
১০. দ্রুতগতির মোটরযান প্রবেশের ক্ষেত্রে মহাসড়ক ব্যবহার করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
১১. মোটরযান চলাচলের সাধারণ নির্দেশনাবলি লঙ্ঘন করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
১২. মোটরযান পার্কিং ও যাত্রী বা পণ্য ওঠানামার নির্ধারিত স্থান ব্যবহার না করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
১৩. গণপরিবহনে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন ও নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।

অপরাধের ধরন ভেদে কাটা পড়বে পয়েন্ট
– ১৩টি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে কাটা যাবে ১২ প‌য়েন্ট, বা‌তিল হ‌বে লাইসেন্স।
– লাইসেন্স বাতিল হলে ওই চালক আর কখনো আবেদন করতে পারবেন না।

পয়েন্ট ফেরত পাওয়ার সুযোগ
– থাক‌বে পয়েন্ট ফেরত পাওয়ার সুযোগও।
– থাকবে পয়েন্ট পুনরুদ্ধারের সুযোগ।
– চালক ৬ মাসের মধ্যে আইন লঙ্ঘন না করলে আপিলের মাধ্যমে ২ পয়েন্ট ফেরত পেতে পারেন।
– ৮ পয়েন্ট কাটা গেলে পয়েন্ট পুনরুদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২ বছর।
– কর্তনযোগ্য পয়েন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *