বিনোদন

৪৮ হাজার বছর পর জাগল ‘জম্বি ভাইরাস’, বিপদের মুখে মানবজাতি!

ডেস্ক রিপোর্টঃ অর্ধমৃত একদল লোক টলতে টলতে এগিয়ে আসছে। তাদের বিভৎস চেহারা মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। জন্তু জানোয়ারের মতোই, মানুষের কাঁচা মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। এরকম দৃশ্য জম্বি সিনেমা জুড়েই দেখা যায়। অনেকেই পর্দায় এরকম দৃশ্য দেখতে পছন্দ করেন। তবে, বাস্তব জগতের দৃশ্যও যদি এমন হয়? ভাবলেও আত্মা কেঁপে ওঠার যোগাড় হয়! চারপাশে এমন দৃশ্য তৈরি হলে, রক্ত হিম করা পরিস্থিতি বিরাজ করবে।

এই শঙ্কাই হয়তো সত্যি হতে চলেছে! বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন হাজার বছর পুরানো ভাইরাস। তাদের নাম রাখা হয়েছে ‘জম্বি ভাইরাস’। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে, গলতে শুরু করেছে বরফ। সেখান থেকে মুক্ত হচ্ছে আদি যুগের ভাইরাস, যা মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে সতর্ক করে আসছে। প্রতিবেদন- মেট্রো। 

এই সপ্তাহে ১৩ টি নতুন প্যাথোজেন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কিছু জীবাণু প্রাগৈতিহাসিক যুগের। বিজ্ঞানীরা এদের নিয়ে গবেষণা করছেন। সাইবেরিয়ার বরফের নিচে সাড়ে ৪৮ হাজার বছর ধরে এরা সুপ্ত অবস্থায় ছিল। পারমাফ্রস্ট অঞ্চলগুলোতে অক্সিজেনের অভাব থাকে। তাছাড়া এসব জায়গা ঠান্ডা এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় এতবছর ধরে প্যাথোজেনগুলো এখানে সংরক্ষিত ছিল। অনেকের মতে- এই জীবাণুর হাত ধরেই, নতুন মহামারী ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বছরের পর বছর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। পৃথিবী থেকে গাছ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাওয়া এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায়  এমন হচ্ছে। এতে অনেক বছর পুরানো হিমায়িত পারমাফ্রস্ট গলে যাচ্ছে। এতে অনেক জীবাণু মুক্ত হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। যার নিয়ন্ত্রণ বা চিকিৎসা, মানুষের হাতে নেই। তাই আগে থেকেই এই জীবাণুগুলো ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে হবে। তাছাড়া, নিজেদের যথেষ্ট সচেতনতাও বজায় রাখতে হবে।

বরফের নিচ থেকে ফিরে এলো বিপজ্জনক ভাইরাস। 

আর্কটিক সাগরের কারণেও এই জীবাণু দ্রুত বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। তেল এবং আকরিক খোঁজার জন্য গভীর খনির সন্ধান করা হচ্ছে। তাই অনেক নিচে জমে থাকা প্যাথেজনও মুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সাইরেবিয়ায় ভাইরাসগুলো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। তাছাড়া খনন কাজের সাথে যুক্ত মানুষ জীবাণুর কাছাকাছি থাকায়, তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি। বিজ্ঞানীরা উদাহরণ দিয়ে বলেন, মাঙ্কিপক্স এবং নিপা ভাইরাসও এভাবে প্যাথোজেনের মাধ্যমে ছড়িয়েছিল। এভাবে চলতে থাকলে সেসব জীবাণুর আবার ফিরে আসাও অসম্ভভ কিছু নয়! 

বিজ্ঞানীদের মতে, ১শ’র মধ্যে মাত্র ১ টি জীবাণু বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। সংখ্যাটি খুব কম আতঙ্কজনক মনে হতে পারে। তবে দিন দিন এর প্রভাব বেড়েই চলেছে। অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ইকোলজি ল্যাবরেটরির পরিচালক কোরি ব্র্যাডশো। তিনি বলেছেন, প্রতি বছর ৪ সেক্সটিলিয়ন অণুজীব মুক্ত হচ্ছে। একটি ভাইরাস ক্ষতিকারী নাও হতে পারে। তবে অনেক ভাইরাস একত্রে বড় ধরণের প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

বিজ্ঞানী ব্রাডশো ভাইরাস এবং অন্যান্য আক্রমণাত্মক প্রাণীর মধ্যে একটা তুলনা করেন। বাস্তবজীবনে দেখা যায়, আক্রমণাত্মক প্রজাতিগুলো ব্যর্থ হয়েছে। কিছু ভাইরাস মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দিতেও সক্ষম। কারণ শরীরের জন্য এই ভাইরাসগুলো একেবারেই অপরিচিত। তাই এদের সাথে লড়াই করার ক্ষমতা শরীরে থাকে না।

এই রকম বিপজ্জনক অবস্থায় বিজ্ঞানীদের উচিত, এদের রোধ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। নাসার ‘জেট প্রোপালসন ক্লাইমেট’ এর বিজ্ঞানী কিমবের্লে মিনার এই ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন।

তার মতে, জীবাণু প্রতিরোধ করার আগে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার আগে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে হবে। কার্বনের উৎপাদন কমাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সমগ্র মানব জাতি বড় ধরনের হুমকির মুখে রয়েছে। ব্যাপার টা অনেক গুরুতর। ভাইরাস চূড়ান্ত রূপ নিলে, জীবজগৎ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া ও অবান্তর নয়। তাই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’ 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *