আন্তর্জাতিক

৬ বছরে ময়মনসিংহ সিটিকে এগিয়েন নিয়েছেন মেয়র

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রতিষ্ঠার পর ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন পার করেছে ৬ বছর। নানা জনপ্রত্যাশাকে মাথায় নিয়ে প্রথম পরিষদ তাদের মেয়াদ শেষ করতে চলেছে। ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল। জনবল সংকট, অপ্রতুল রাজস্ব এবং মোট আয়তনের ৭০ ভাগ উন্নয়নে পশ্চাৎপদ এলাকার নিয়ে যাত্রা শুরু, করোনার এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এর কার্যক্রমকে সন্তোষজনক লক্ষ্য অর্জনে একটি আন্তরিক প্রচেষ্টা বলেই মনে করছে নগরবাসী। তরুণ ও অভিজ্ঞ মেয়র টিটুর আন্তরিকতা, জনসংশ্লিষ্টতা এবং নেতৃত্বকে এর কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। 

তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরই সিটির সড়ক ড্রেনের উন্নয়নে ১৫৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরণ করেন যা এখন সিটির উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার কাজ চলছে। এতে তৈরি হচ্ছে ১১৭ কিলোমিটার বিসি রোড, ২৩৯ কিলোমিটার আরসিসি রোড, ১.৬১ কিলোমিটার সিসি রোড, ২৩৮ কিলোমিটার ড্রেন ও ১১.৩৭ কিলোমিটার পাইপ ড্রেন। এছাড়াও তৈরি করা হচ্ছে কালভার্টসহ অন্যান্য অবকাঠামো। সিটি কর্পোরেশন অন্যান্য প্রকল্প থেকে ৯২ কিলোমিটার নতুন রাস্তা এবং ৪৫ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ সম্পন্ন করেছে।

শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যারও উন্নতি ঘটিয়েছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। একসময় যখন একটু বৃষ্টিতেই শহরে পানি জমে যেত সেখানে আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ ড্রেনের মাধ্যমে ড্রেনেজ নেটওয়ার্কে শহরকে যুক্ত করার ফলে শহরের জলাবদ্ধতার অনেকাংশে নিরসন হয়েছে। মিন্টু কলেজ থেকে বিপিন পার্ক স্টেশন রোড থেকে থানাঘাট পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ ড্রেন নির্মাণ, কাশবন আবাসিক এলাকার ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নির্মাণ, নাটককঘর লেন থেকে ডিবি রোড হয়ে সেহড়াখাল পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপড্রেন ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে চলমান শহরের ভেতরে নতুন বাজার রেল ক্রসিং থেকে ব্যাটবল চত্বর পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ ড্রেনের কাজ একটি ভালো উদ্যোগ বলে মনে করছে নগরবাসী। এতে করে শহরের খালগুলো থেকে পানি বের হওয়াটা আরও সহজতর হবে, যা সামগ্রিক জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাবে। এছাড়া গত জুলাই থেকে সিটি কর্পোরেশনে উদ্যোগে প্রায় ১৫ কিলোমিটার খালের দখল উচ্ছেদ সম্পন্ন হয়েছে। 

ময়মনসিংহ শহরকে একসময় যারা আবর্জনার শহর হিসেবে দেখেছেন তাদের দৃষ্টিতে ময়মনসিংহের পরিবর্তনটা ধরা পড়বে। বিলুপ্ত পৌরসভার জনবল নিয়েও প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মে.টন বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। চলছে রাত্রিকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এছাড়া, বাসা-বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহে ক্লিনসিটি নামক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রিজম ফাউন্ডেশন লি. এর সহযোগিতায় নির্মাণ করা হচ্ছে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। এছাড়াও, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পটিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শহর আলোকিতকরণেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখাতে সক্ষম হয়েছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় ১৭১ কিলোমিটার সড়কে পোলসহ আধুনিক এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত কয়েকমাসে এসব সড়কবাতির উদ্বোধন করেছেন মেয়র।

নগর উন্নয়নে আরও অধিক অগ্রগতি সম্ভব ছিল বলে মনে করেন সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু। তিনি জানান, করোনার অভিঘাত এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি না হলে হলে নগর উন্নয়নে আরও কাজ করা সম্ভব হতো।

চিকিৎসা সেবায় ২০২২ সালে স্থাপন করা হয়েছে একটি নগর মাতৃসদন এবং তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। এসব কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৫০০ নাগরিক বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছেন। অন্যান্য সেবাপ্রার্থীরাও পাচ্ছেন কম মূল্যে সেবা। মশক নিধনে হটস্পট চিহ্নিতকরণ এবং নিয়মিত ক্রাশ প্রোগ্রামের ফলে সিটিতে এখনও ডেঙ্গু প্রকট হতে পারেনি। তাছাড়া, ভিটামিন এ প্ল্যাস ক্যাম্পেইন, ইপিআই কার্যক্রম, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিতেও মসিকের রয়েছে রয়েছে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সফলতা।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে মসিকের প্রচেষ্টাও ছিল চোখে পড়ার মত। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১৯২ জনকে বিউটি পার্লার, কম্পিউটার, ড্রাইভিং, মোবাইল সার্ভিসিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ, ২৫৭৬ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তি, ১৪৭৬ জনকে পুষ্টি সহায়তা, ৩১২ জন কিশোরীকে স্বাস্থ্য-পুষ্টি পরামর্শ ও পুষ্টি উপকরণ প্রদান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নলকূপ, রোড লাইট, ড্রেন, টয়লেট, সেপটিক ট্যাংক ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করেছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন।

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু শম্ভুগঞ্জ ব্রিজের কাছে স্থাপন করেছেন জয়বাংলা চত্বর। চত্বরটি মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্মরণে এক অনন্য স্থাপত্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়া, টাউনহলে স্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধু গ্যালারি। এখানেও প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী বঙ্গবন্ধু দুর্লভ ছবি, ডকুমেন্টারি, বানী ইত্যাদি দেখার সুযোগ পাসচ্ছেন।

ইকরামুল হক টিটু বলেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা আর নগরের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা তৈরি করে উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। সিটির উন্নয়নে ১৫৭৫ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৩০০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যানজট নিরসন, সড়ক প্রশস্তকরণ, বর্জ্য ব্যাস্থাপনা, বাস ট্রাক স্ট্যান্ড নির্মাণ, শিশু পার্ক নির্মাণ ইত্যাদি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরকে আধুনিক এবং জনবান্ধব করে তুলতে নগরবাসী আবারও আমাকে সুযোগ দেবে বলে আমি মনে করি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *