খেলার খবর

সমুদ্রযাত্রায় ‘আইকন অব দ্য সিস’, উদ্বেগ পরিবেশবিদদের

ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরী ‘আইকন অব দ্য সিস’ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামি থেকে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) প্রথমবারের মতো সমুদ্রে যাত্রা শুরু করেছে। তবে এটি এলএনজি চালিত হওয়ায় বাতাসে মিথেন নিঃসরণের মাধ্যমে পরিবেশের বহু ক্ষতি করবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।

রোববার (২৮ জানুয়ারি) বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই প্রমোদতরিতে প্রথম যাত্রাতেই বিপুল সংখ্যক যাত্রী উঠেছেন। এতো মানুষের সমারোহে প্রমোদতরীটি ছোটখাটো একটি শহরে পরিণত হয়েছে। জাহাজটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে সাত দিনের সমুদ্রযাত্রায় যাচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে ক্যারিবীয় সাগরে ঘুরে মায়ামিতে ফিরে আসবে এটি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রমোদতরিটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মালিকানাধীন। ফিনল্যান্ডের তুর্কুতে একটি শিপইয়ার্ডে এটি তৈরি করতে সময় লেগেছে ৯০০ দিন। আইফেল টাওয়ারের চেয়ে লম্বা এই প্রমোদতরীতে ২০টি ডেক ও কামরা আছে- যেগুলো ৫ হাজার ৬০০-এর বেশি (সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৭ হাজার ৬০০) যাত্রী ধারণ করতে সক্ষম। এর ক্রুর সংখ্যা ২ হাজার ৩৫০টি। প্রমোদতরিটিতে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল।

ছবি: জীবন্ত গাছগাছালি দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রমোদতরী

কিন্তু পরিবেশবাদীরা সতর্ক করে বলেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস-চালিত জাহাজ বাতাসে ক্ষতিকারক মিথেন ছড়িয়ে দিবে। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন ক্লিন ট্রান্সপোর্টেশনের (আইসিসিটি) মেরিন প্রোগ্রামের পরিচালক ব্রায়ান কমার বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি একটি ভুল পদক্ষেপ। কেননা সামুদ্রিক জ্বালানী হিসেবে এলএনজি ব্যবহার করলে সেটি সামুদ্রিক তেলের তুলনায় ১২০ শতাংশ বেশি গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন করে বলে আমরা অনুমান করি।’

জাহাজ থেকে নির্গত এবং অপরিশোধিত মিথেন নির্গমন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন ক্লিন ট্রান্সপোর্টেশন (আইসিসিটি), এক্সপ্লিসিট এপিএস এবং নেদারল্যান্ডস অর্গানাইজেশন ফর অ্যাপ্লাইড সায়েন্টিফিক রিসার্চ (টিএনও)। এরই মধ্যে প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডেটাসেট সংগ্রহ করেছেন গবেষকরা। 

তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে সম্প্রতি চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তারা। আইসিসিটির প্রকাশিত সে প্রতিবেদনে বলা হয়, এলএনজি-জ্বালানিবাহী জাহাজ থেকে মিথেন নির্গমনের হার বর্তমান বিধিবিধানের চেয়ে বেশি ছিল। 

ব্রায়ান কমার আরও বলেন, যদিও জ্বালানি তেলের মতো প্রথাগত সামুদ্রিক জ্বালানির তুলনায় এলএনজি বেশ ভালোভাবে দহন হয়। তবে এটির লিক হওয়ার ঝুঁকিও থাকে বেশি। মিথেন এমন একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, যা ২০ বছরে বায়ুমণ্ডলে যে তাপ আটকে রাখতে সক্ষম তা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ৮০ গুণ বেশি। গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমানোর জন্য এই নির্গমন হ্রাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন তিনি। তাই মিথেনের ব্যবহার যতো কমানো যাবে পরিবেশের জন্য সেটি ততো ভালো হবে।

ছবি: প্রমোদতরীতে ২০টি ডেক আছে, ক্রুর সংখ্যা ২৩৫০টি

এদিকে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মুখপাত্র সংবাদ বিবৃতিতে বলেছেন, আইকন অফ দ্য সিস আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের প্রয়োজনীয়তার চেয়েও ২৪ শতাংশ বেশি শক্তি সাশ্রয়ী। কোম্পানিটি ২০৩৫ সালের মধ্যে একটি নেট-জিরো জাহাজ চালু করার পরিকল্পনা করেছে।

‘আইকন অব দ্য সিস’ ১১৯৭ ফুট (৩৬৫ মিটার) দীর্ঘ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরির খেতাব পাওয়ার আগে এ খেতাব যে জাহাজের ছিল, সেটিও রয়েল ক্যারিবিয়ানেরই তৈরি। সেটির নাম ‘ওয়ান্ডার অব দ্য সিস’

যাত্রীদের একঘেয়েমি দূর করতে প্রমোদতরিতে বিভিন্ন ধরনের সুব্যবস্থা রয়েছে। এতে আছে ৭টি সুইমিংপুল, ৪০ হাজার গ্যালন পানির একটি ‘হ্রদ’, ৬টি ওয়াটার স্লাইড, একটি ক্যারোসেল এবং ৪০টির বেশি খাবারের জায়গা ও বার। প্রমোদতরিটিতে আছেন ৫০ জন সংগীতশিল্পী ও কমেডিয়ান, আছে অর্কেস্ট্রার আয়োজনও।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসি, যিনি বর্তমানে ইন্টার মিয়ামির হয়ে খেলছেন, জাহাজটির নামকরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং প্রমোদতরিটির উদ্বোধন করেন।

ছবি: মনোরম সিড়িবিন্যাস ও পরিবেশ

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) প্রথম যাত্রার ধাপ হিসেবে সব টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। কোম্পানিটি বলেছে, টিকেটের জন্য মানুষের ব্যাপক চাহিদা দেখা গেছে। 

আইকন অব দ্য সিস তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার (১.৬ বিলিয়ন ইউরো)। রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল প্রমোদতরিটিতে বেতার তরঙ্গ ব্যবস্থায় পরিচালিত পাইরোলাইসিস প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হচ্ছে। এ প্রযুক্তির সাহায্যে বর্জ্যকে জ্বালানি গ্যাসে পরিণত করা হয়। জাহাজে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে রিভার্স অসমোসিস ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। তারপরেও কতটুক পরিবেশবান্ধব হতে পেরেছে এই প্রমোদতরী তা নিয়ে পরিবেশবিদরা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, সামুদ্রিক জ্বালানি হিসেবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। মিথেন স্লিপ আকারে এলএনজি-জ্বালানিবাহী জাহাজ থেকে মিথেন নির্গমন জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব ফেলছে। মিথেন স্লিপের পরিমাপ প্রক্রিয়া আগে দুর্লভ থাকলেও বর্তমানে খুব সহজেই তা করা যাচ্ছে। জাহাজ-স্তরের মিথেন নির্গমনের প্রকৃত মাত্রা অনেকাংশেই এখন জানতে পারছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। তাদের গবেষণায় এলএনজি চালিত আইকন অফ দ্য সিসের মতো নৌযানগুলোর বিরূপ প্রভাবের কথাই বেশি উঠে আসছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ ডট কম-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *