সারাদেশ

বাস চাপায় পোশাক শ্রমিক নিহত

ডেস্ক রিপোর্ট: বালু রাখার জায়গা নিয়ে জটিলতায় দীর্ঘ প্রায় দুই বছর ধরে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের নৌ চ্যানেলে ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নতুন করে জায়গা না পাওয়ায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে নিয়মিত বন্দরের নৌ চ্যানেল ড্রেজিং করা না হলে দেশি-বিদেশি বড় জাহাজ প্রবেশে বাধা সৃষ্টির আশংকা করছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা।

বিষয়টি স্বীকার করছে বন্দর কর্তৃপক্ষও। তারা বলছে, ড্রেজিংয়ের বালু বা পলি মাটি রাখতে নতুন জায়গা পেতে সময় লাগলেও আপাতত পুরোনো জায়গায় মাটি ফেলে সংকট দূর করা হবে। বিষয়টি খুবই গুরত্ব সহকারে দেখছে তারা।

এদিকে পুরোনো জায়গা মোংলার জয়মনি এলাকায় বালু ফেলার নীতিগত সিন্ধান্ত নেওয়া হলেও তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এ অবস্থায় ড্রেজিং প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া নাব্যতা সংকটের কারণে বন্দর জেটিতে আসতে পারছেনা ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা গেছে, মোংলা বন্দরের পশুর নদের (নৌ চ্যানেল) হাড়বাড়িয়া এলাকা থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত এলাকার নাম ‘ইনার বার’। ইনার বারের ২৩ দশমিক চার কিলোমিটার এলাকায় ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের উদ্ধোধন করা হয় ২০২১ সালের ১৩ মার্চ। ওই বছরের ১০ এপ্রিল ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৭৯৩ কোটি টাকা।

ড্রেজিং করা বালু বা পলি মাটি ফেলার জন্য মোংলা উপজেলায় ৭০০ একর জমি ও খুলনার দাকোপ উপজেলায় বানিশান্তা এলাকায় ৩০০ একর জমি হুকুম দখল করা হয়। বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকার জমিতে বালু ফেলা হয়।

কিন্তু পশুর নদীর পশ্চিম পাশে খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তায় তিন ফসলি জমিতে বালু ফেলা ঠেকাতে আন্দোলন করেন এলাকাবাসী ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। তাদের আপত্তির মুখে সেখানে বালু ও মাটি ফেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজিং বন্ধ রয়েছে।

এ অবস্থায় বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের শানবান্ধা মৌজায় ২৬২ একর জমিতে বালু ফেলানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হলে সেখান থেকে ভূমি মন্ত্রাণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০২২ সালের জুন মাসে। এ পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩৪ শতাংশ।

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাড়িয়েছে ৯৯২ কোটি টাকায়, যা গত বছরের ৪ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক্স) শেখ শওকত আলী বলেন, ‘ইনার বারের গভীরতা সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় মিটার। ড্রেজিং করে সাড়ে আট মিটার করার কথা। ড্রেজিং করা স্থানগুলো থেকে যে পরিমাণ পলি অপসারণ করা হয়েছিল, গত প্রায় দুই বছরে তার ৭০ ভাগ পলি আবার জমা হয়েছে। এ অবস্থা ড্রেজিং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ড্রেজিং কাজ বন্ধ থাকায় এতদিনে পলি পড়ে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ড্রেজারের তেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে।’

বালু ফেলা জায়গা সংকটের বিয়য়ে তিনি বলেন, নতুন করে কোন জায়গা না মেলায় পুরোনো জায়গা জয়মনি এলাকায় আপাতত বালু ফেলা হবে। এই কার্যক্রম আগামী সপ্তাহের মধ্যে শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

মোংলা বন্দরে ইনার বারে প্রায় দুই বছর ড্রেজিং বন্ধ থাকার বিষয়ে উদ্ধেগ জানিয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এ্যাশোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মোংলা বন্দরের সবচেয়ে বড় সমস্য নাব্যতা সংকট। বন্দর সচল রাখতে হলে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের বিকল্প নাই। ড্রেজিং স্থায়ীভাবে বন্ধ হলে বড় কন্টেইনার জাহাজ আসতে পারবেনা। এছাড়া রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আসা কয়লাবাহী বড় জাহাজ আসাও বন্ধ হয়ে যাবে। বন্দর ঘিরে রেললাইনসহ বড় মেগা প্রকল্প কোন কাজেই আসবেনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘রেলের মালামাল আসে কন্টেইনারবাহী জাহাজে করে। ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সেই কন্টেইনারবাহী জাহাজ আসতে পারবেনা। তাই দ্রুত ইনার বারে ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পন্ন করা প্রয়োজন।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *