সারাদেশ

মানিকগঞ্জে বিএনপির মিছিল ছত্রভঙ্গ, আটক ৫

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে কর্মচারীদের মাঝে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে কর্মচারীরা দুভাগে বিভক্ত। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’ বলে জানিয়েছেন এক কর্মচারী। তবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস হাসপাতাল পরিচালকের।

জানা গেছে, গত সোমবার (২৩ অক্টোবর) চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী সমিতি নামে এক সংগঠনের পক্ষ থেকে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। সংগঠনটির সভাপতি মোজাহার আলী ও সাধারণ সম্পাদক সুমন ইসলাম স্বাক্ষরিত এ অভিযোগে রাসেলকে অপসারণের দাবি জানানো হয়। অভিযোগপত্রের সঙ্গে চতুর্থ শ্রেণীর (রাজস্ব খাত) ১৫১ জন কর্মচারীর স্বাক্ষর সংযুক্ত করেন সংগঠনটির নেতারা।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলী তার ফেসবুক আইডি থেকে হাসপাতালের কর্মচারীদের অশ্লীল ভাষায় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। ফলে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে কর্মচারীদের মাঝে। এতে রামেক হাসপাতালের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অতীতে রাসেলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যে কারণে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ও সরকারী কাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন।’ রাজস্ব চতুর্থ শ্রেণীর ১৬৫ কর্মচারীর মধ্যে ১৫১ জনের অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে তার এ অপসারণ দাবি বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ফটক থেকে রোগীদের ট্রলিতে করে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরপূর্বক টাকা আদায় করতেন ট্রলি বহনকারী কর্মচারীরা। রোগীপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা করে নিতেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে চলছিল প্রকাশ্য এ চাঁদাবাজি। রোগীর স্বজনরা টাকা না দিলে কর্মচারীরা শুরু করতেন দুর্ব্যবহার। এমনকি রোগীদের মাঝপথে ফেলে রেখে চলে যেতেন বেতনভুক্ত এসব কর্মচারী। ওয়ার্ড চিনতে না পারায় চরম বিপাকে পড়তেন স্বজনরা। বাধ্য হয়ে ট্রলিম্যানদের টাকা দিতেন। এভাবে লাখ লাখ টাকা আদায় করত কর্মচারীদের একটি চক্র।

অভিযোগ ওঠে, ট্রলিম্যানদের চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় হাসপাতালে সর্দার পদে কর্মরত নাটোরের এক বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মইন উদ্দিনকে প্রাণনাশের হুমকি দেন ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল। ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এ হুমকি দেন বলে অভিযোগ তোলেন মইন। পরে তিনি হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন।

মইন উদ্দিন বলেন, রাসেল আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। কিন্তু তখনকার পরিচালক স্যর রাসেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো আমাকেই বদলি করতে চান। বিষয়টি নিয়ে ১ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হলে আমার বদলির সিদ্ধান্ত থেকে তিনি সরে আসেন। ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন তিনি।

এদিকে, গত বছর বিনা নোটিসে ২৬ জন কর্মচারীকে ছাটাই করে হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রায় এক কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধভাবে এ নিয়োগ সম্পন্ন হয় বলে অভিযোগ তোলেন চাকরিচ্যুত ২৬ কর্মচারী। ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও ওই কর্মচারীদের অভিযোগ।

পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি রাসেলের অপেশাদার আচরণের সত্যতা পায় এবং তদন্ত প্রতিবদন জমা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সর্বশেষ ২ আগস্ট হাসপাতাল পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. আবু তালেব স্বাক্ষরিত একটি আদেশ হয়। ওই অফিস আদেশে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে রাসেলকে।

হাসপাতালের একটি সূত্র মতে, মোটা অঙ্গের টাকার বিনিময়ে দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারি নিয়োগের কাজ করে আসছেন ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল। অবৈধভাবে সাপ্তাহিক ও মাসিক চাঁদা আদায় করেন তিনি। ক্ষমতা খাটিয়ে ছাটাই করেন অনেক কর্মচারীকে। গত বছরই ২৬ জনকে ছাটাই করেছিলেন। নিয়োগের টাকা হাসপাতালের সাবেক পরিচালকের পকেটেও ঢুকতো বলে সূত্রটির দাবি।

কর্মচারীরা জানান, বর্তমান পরিচালকের কঠোর অবস্থানের কারণে সুবিধা করতে পারছেন না রাসেল। যে কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে গালমন্দ ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। সম্প্রতি গালিগালাজ করে ফেসবুকে আজেবাজে মন্তব্য করেছেন তিনি। ফলে হাসপাতালে তাদের ভেতরে আবারও চরম উত্তেজনা শুরু হয়েছে। যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা। একজন কর্মচারী বলেন, ‘সবাই রেগে আছে। যে কেনো মুহূর্তে রাসেলের গায়ে হাত উঠতে পারে।’

এ বিষয়ে চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী সমিতি রামেক হাসপাতাল ইউনিটের সভাপতি মোজাহার আলী বলেন, চাকরিতে যোগদানের পর থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত রাসেল কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আসছে। তার আচরণবিধিটাই হলো খারাপ। উনাকে এখান থেকে অপসারণ করার দাবি জানিয়েছি আমরা।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে অভিযুক্ত ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এ সময় তিনি বলেন, আমি ৩ বছর ধরে এখানে চাকরি করি। আমি মূলত ষড়যন্ত্রের শিকার। মারাত্মক লেভেলের ষড়যন্ত্রের শিকার। এ হাসপাতালের একটা গ্রুপ আছে, তাদের উদ্দেশ্য একটাই- আমাকে চাকরি করতে দেবে না। এবং গত তিন বছর ধরে বিভিন্নভাবে আমাকে হেনস্থা করছে।

রাসেল আলী বলেন, যে অভিযোগটা তারা দিছে, কর্মচারীদের যে স্বাক্ষর নিছে, ওখানে ১৫১ জন কর্মচারীর সিগনেচার দেখাচ্ছে। তারা ভুল কথা বলে সিগনচোর নিছে। মোজাহার ও সুমন কাউকে বলেছে- আমরা গ্যারেজের টেন্ডারের বিষয়ে কথা বলবো, মিটিং আছে, সই করো। কাউকে বলেছে, পোশাকের ব্যাপারে সই করো। প্রতিবছর শীতের পোশাক দেওয়া হয় সেজন্য। কাউকে বলেছে, আমাদের সামনে নির্বাচন, মিটিং করবো- এই বিষয়ে এভাবে সিগনেচারগুলো নিয়েছে। যারা ফোর্থ ক্লাস কর্মচারী বা ক্লিনার, তারা কিন্তু স্বল্প শিক্ষিত। তারা ওভাবে বোঝেও না। তারা কিন্তু সিগনেচার দিয়ে দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এটা করেছে সর্দার মইন, মোজাহার এবং সুমন। আরও সাইডে দু-তিন জন থাকতে পারে। এখন এই সিগনেচারগুলো তারা কিন্তু ওই পারপাসে দিয়েছে, মিটিং পারপাসে। সিগনেচার কিন্তু দিয়েছে সাদা কাগজে। এরপর ওরা জালিয়াতি করেছে, এক নম্বর জালিয়াতি করেছে। জালিয়াতি করে তারা হেডিং বসিয়েছে অন্য। সুমন ও মোজাহার জালিয়াতি করে এটাচ করে দিয়ে পরিচালক মহোদয়ের কাছে দরখাস্ত দিয়েছে। মূলত বড় ধরণের অন্যায় করছে। ১৫১ জন মানুষের স্বাক্ষর জালিয়াতি করেছে তারা এবং এক কথা বলেছে, কাজ করেছে অন্য।

উল্টো কর্মচারী সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধেই অভিযোগের স্বরে রাসেল আলী বলেন, মোজাহার নারীঘটিত কারণে জেল খাটা মানুষ। দুই নম্বর হলো- সে একসময় চুরি করেছে, জেলে ছিল। তিন নম্বর হলো, ওর প্রভাবের কারণে আরও মানুষ অবজেকশন দিয়েছে। যেগুলোর কোনো সুরাহা হয়নি। এরকম একটা লোক, এক জায়গার সভাপতি। এটা ক্যামনে হয়? কাজেই এরা যে কাজটা করছে, এটা আমার সাথে গত তিন বছর ধরে করে যাচ্ছে। এবং এটার একটা কারণ আছে। তা হলো- মেডিকেলের বিভিন্ন কাহিনীর সাথে জড়িত, অনিয়মের সাথে জড়িত। গ্যারেজের লক্ষ লক্ষ টাকা তাদের কোনো হিসাব নাই ইত্যাদি ইত্যাদি।

হাসপাতালের এ ওয়ার্ড মাস্টার বলেন, আমরা নতুন মানুষ। তিন বছর হচ্ছে চাকরির। একটা মেডিকেল চিনতেই ছয় মাস লাগে। তারা বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দিয়ে বলছে, চাকরি ছাড়ো না হলে জীবন বাঁচাও। আমাকে চাকরি করতে দেওয়া হবে না। বিভিন্নভাবে প্রেশারাইজ, আমাকে ফোনে হুমকি দিয়েছে। এই করবো সেই করবো, ফেসবুকে আমার বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা গালিগালাজ দুই বছর ধরে চলছে। লোকাল মাস্তান দিয়ে, শেষ পর্যন্ত আমাকে মারধর করাইছে। আমার বাসাতে এসে হামলা করিছে। বিভিন্ন লোককে উস্কানি এরাই দিয়েছে। তিন-চার মাস আগে সাইকেল গ্যারেজের সামনে আরিফ নামে একটা ছেলে আমাকে মেরেছে।

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা উল্লেখ করে রাসেল আলী বলেন, আমি নিরাপত্তা হুমকিতে আছি। আমাদের সাবেক সভাপতির ছেলে অনিক মাহমুদ, সে হাসপাতালে চুরি করে ধরা পড়েছে। পরে তাকে ডাইরেক্টর স্যার বদলি করেছেন। কয়েকদিন আগে ঘোড়া চত্বরে রাত ১১টা ২৩ মিনিটে অফিস থেকে আসছিলাম, সে আমাকে দাঁড় করিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়েছে। এই আশঙ্কাতে আছি। এসবের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানান, ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে সব বের হয়ে আসবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *