খেলার খবর

‘টাকার পেছনে ছুটব না, দেশের হয়ে খেলব’

ডেস্ক রিপোর্ট: শামার জোসেফ। ক্রিকেট সম্পর্কে খোঁজখবর রাখলে নামটা গত কয়েকদিন হয়ত অনেকবার শুনেছেন আপনি। শুনবেন আরও অনেক দিন। অনেক বছর। তার টেস্ট ক্যারিয়ারের বয়স ১৫ দিনের বেশি হবে না, খেলেছেন মাত্র দুই টেস্ট। অথচ এর মধ্যেই তাকে ক্রিকেটে সবচেয়ে অভিজাত ফরম্যাট টেস্টের ‘ত্রাণকর্তা’ ভাবা হচ্ছে। আর এই ভাবনাটা যেনতেন কোনো ব্যক্তির হলে আমলে না নিলেও চলত। কিন্তু কথাটা যে ব্রিসবেন টেস্টে বিজিত অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবং দলটির সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর, তখন সেটা ‘সিরিয়াসলি’ নেয়া ছাড়া উপায় আছে!

দুই ম্যাচ খেলেই টেস্ট ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’ বনে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। তবে সেটাই করে দেখিয়েছেন জোসেফ। অ্যাডিলেডে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই তার রাজসিক আবির্ভাব। স্মিথ-লাবুশেনদের ঘোল খাইয়ে তুলে নেন ৫ উইকেট। ব্যাট হাতেও দলের ত্রাতা হন প্রথম ইনিংসে, ১১ নম্বর ব্যাটার হিসেবে খেলেন দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ রানের ইনিংস। তবু অপূর্ণতা ছিল, অমন রাজসিক অভিষেকের ম্যাচটা যে দল জিততে পারেনি।

ব্যক্তিগত অর্জনে তো খুশি হওয়ার পাত্র নন জোসেফ। এবার শুধু নিজে ভালো করলেই চলবে না, দলকেও যেভাবেই হোক বিজয়ী করতে হবে – সে ইস্পাতদৃঢ় মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে নামলেন ঐতিহাসিক গ্যাবায়। এবারের চ্যালেঞ্জটা কঠিন, সিরিজ বাঁচানোর। হারলেই শুন্য হাতে ফিরতে হবে দেশের। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে একটা টেস্ট জয়ের ২৭ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা হবে দীর্ঘতর।

নাহ, তরুণ জোসেফ সে অপেক্ষা দীর্ঘ হতে দেননি। ব্যাটিংয়ের সময় মিচেল স্টার্কের আগুনে গতির বলে পায়ের আঙুল নড়ে উঠলেও সে নাজুক অবস্থাতেই করলেন বোলিং। সম্ভবত গত দুই দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সাদা পোশাকের ক্রিকেট সেরা বোলিংটা করলেন চোটসঙ্গী করেই।
৬৮ রানে ৭ উইকেট নিয়ে চূর্ণ করলেন অজিদের দম্ভ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পান করল বিজয়সুধা। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই যেন অমরত্বের স্বাদ পেলেন ২৪ বছর বয়সী পেসার।

এরপর তাকে নিয়ে শুরু হয়ে গেছে বন্দনা। টেস্ট হেরে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এবং বর্তমান ক্রিকেটাররাও জোসেফকে প্রশংসায় ভাসাতে কার্পণ্য করেননি। স্টিভ ওয়াহ তো তাকে ক্রিকেটের কুলীন ফরম্যাটের ত্রাণকর্তাই বলে দিলেন।

স্টিভ ওয়াহদের হতাশ করছেন না জোসেফ। টেস্ট জয়ের পরপরই জানিয়ে দিলেন, টি-টোয়েন্টি যত টাকার বস্তা নিয়েই হাজির হোক না কেন, দেশের হয়ে সাদা পোশাকে খেলাকেই সবসময় প্রাধান্য দেবেন, ‘যত টাকার হাতছানিই আমার সামনে আসুক না কেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে আমি সবসময়ই প্রস্তুত থাকব।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটা পুরো প্রজন্ম যেখানে টি-টোয়েন্টির প্রলোভনে দেশের হয়ে খেলাকে গৌণ জ্ঞান করেছেন, তখন জোসেফের এমন আশার বাণী ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে আবার প্রাণ সঞ্চার করবে, তা বলাই বাহুল্য।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ ডট কম-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *