সারাদেশ

নারী প্রশিক্ষনার্থীদের ল্যাপটপ বিতরণে ফেনী যাচ্ছেন পলক

ডেস্ক রিপোর্ট: লোকসানের কারণেই বন্ধ হয়েছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-রোম ফ্লাইট। ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল শেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা হয় এই রুটে। রুটটিতে ফ্লাইট প্রতি লোকসান ছিল এক কোটি টাকা। ফ্লাইট প্রতি কেবিন ফ্যাক্টর ছিল ৪০ শতাংশ। বিমান চলাচল ব্যবসায় কেবিন ফ্যাক্টর ৭৫ শতাংশের কম হলে ওই ফ্লাইটে লাভ করা সম্ভব নয় অথচ এই রুটের ফ্লাইটসমূহে কেবিন ফ্যাক্টর অর্ধেকও ছিল না।

২০১৩ সালের মার্চে কেভিন স্টিল বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগদানের পর কিছুদিন বন্ধ থাকে রোম ফ্লাইট। একই সঙ্গে ৮ বছর বন্ধ থাকা ফ্রাঙ্কফুর্ট রুটও চালু করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। ওই সময় বিমানের পরিচালনা পর্ষদ থেকে লোকসানি এই দুটি রুট চালুর বিরোধিতা করা হয়। তবে কেভিন স্টিল কারো মতামতই আমলে নেননি। বরং ঢাকা-রোম ও ঢাকা-ফ্রাঙ্কফুর্ট রুট চালুর পাশাপাশি ঢাকা-মিলান রুটও চালু করেছিলেন। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচারণা চালিয়ে এসব রুট চালু করা হলেও পরে যাত্রী ছিল না বেশিরভাগ ফ্লাইটে। বিশেষ করে ঢাকা-ফ্রাঙ্কফুর্ট রুটে প্রতি ফ্লাইটে ২৫ থেকে ৩০ জনের বেশি যাত্রী মিলতো না। ঢাকা-ফ্রাঙ্কফুর্ট রুটের সর্বশেষ ফ্লাইটেও যাত্রী ছিলেন মাত্র ২৯ জন।

বিমানের একজন কর্মকর্তা বলেন, ৪১৯ আসনের বিশাল বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজে যদি ২৯ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করে তাহলে কীভাবে বিমান লাভজনক হবে! ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিমানের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে যোগদানের পরপরই কাইল হেউড পরিচালনা পর্ষদকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, এ ধরনের লোকসানি রুট চালু রেখে বিমানকে লাভজনক করা সম্ভব নয়। ওই সময় ইতালি প্রবাসী একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এই রুট বন্ধের বিরোধিতা করেছিলেন।

২০০৯ সালেও বিমান এই রুটটি বন্ধ করেছিল। এখন প্রশ্ন উঠছে, এই ধরনের লোকসানের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও বিমান কেন ফের এই রুট চালু করতে চায় আর চালুর পরেও কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। চালুর পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে। ইতালিতে নিয়মিত বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা এখন এক লাখ ৫০ হাজার ৬৯২ জন, যা ২০০২ সালে ছিলেন মাত্র ২২ হাজার। তাছাড়া ইতালিতে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা এবং বাংলাদেশ থেকে যাওয়া-আসা করা মিলিয়ে বছরে এই সংখ্যাটা ৩ লাখের বেশি হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ একাধিকবার যাওয়া-আসা করেন।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলছেন, সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালালেও এই বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে আনা-নেওয়া করা যাবে না। এটি একদম রেডি মার্কেট।

তাছাড়া বিমান ওই সময় পুরনো ও ভাড়া করা উড়োজাহাজেই যাত্রী পরিবহন করতো। এখন যেহেতু ব্র্যান্ড নিউ উড়োজাহাজ ব্যবহার করবে, তাই এই রুট লাভজনক করা সহজ হবে বলে মনে করছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা।

বিমানের এক মার্কেটিং কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, লাভ করার জন্য অনেক কাজ করতে হয়। শুধুমাত্র বাংলাদেশি যাত্রীকে টার্গেট করলে ওই রুট লাভজনক করা যাবে না। বিশেষত রোমের মতো ফ্লাইটে। অতিরিক্ত লাগেজ, কম ভাড়া দিয়ে হয়ত বাংলাদেশিরা আকৃষ্ট হবেন। তবে বিদেশি যাত্রীদেরকেও আকৃষ্ট করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন অনটাইম ফ্লাইট, উন্নত সেবা এবং সর্বোপরি কানেক্টিভিটি।

তার মতে, নিরবচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি থাকতে হবে। সপ্তাহে দুটি বা তিনটি ফ্লাইট দিয়ে এই রুট লাভজনক করা যাবে না বরং সাতদিনই ফ্লাইট থাকতে হবে। সেই সাথে ঢাকা থেকে কলকাতা, কাঠমান্ডু, ইয়াঙ্গুন, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর যেতে কানেক্টিং ফ্লাইট থাকা চাই, যাতে করে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওইসব গন্তব্যে ইউরোপীয় যাত্রীরা যাতে যেতে পারেন। নেটওয়ার্ক এয়ারলাইন্স না হলে, ওই এয়ারলাইন্স টিকে থাকতে পারে না।

তিনি বলেন, খুব ভালো খাবার দিলেন। বেশি লাগেজের সুবিধা দিলেন অথচ অনটাইম ফ্লাইট না, তাহলে ইউরোপীয় যাত্রীরা আর ওই এয়ারলাইন্সে উঠবেন না। ওইসব যাত্রীদের নেতিবাচক রিভিউয়ের কারণে অন্য যাত্রীরা এই এয়ারলাইন্সকে এড়িয়ে চলবেন।

বর্তমানে বিমান ১৯টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে অথচ এর চেয়ে অনেক কম উড়োজাহাজ থাকা সত্ত্বেও বিমান ২৬টি রুটে ফ্লাইট চালিয়েছে, এমন যুক্তির বিষয়ে বিমানের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আগে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক রুটে বিমান সপ্তাহে একটা, দুটি সর্বোচ্চ তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করতো আর এখন দোহা, ব্যাংকক, আবুধাবি, শারজাহ, কাঠমান্ডুসহ ৮টি রুটের সপ্তাহের সাতদিনই ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। তাই, বেশিসংখ্যক উড়োজাহাজকেই কিন্তু সঠিকভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *