সারাদেশ

জাবিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েও গণরুমেই নবীনদের ঠাঁই, প্রতিবাদে মানববন্ধন

ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে গণরুম বিলুপ্তির নানা আশ্বাসের পরেও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে ঠাঁই হওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে ‘নবীনদের সাথে প্রহসন বন্ধ কর’, ‘হল প্রশাসন কী করে?’, ‘নবীনরা গণরুমে কেন?’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায়।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সদস্য সচিব হাসিব জামানের সঞ্চালনায় বক্তারা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে তোলার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ ব্যাচের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী কনৌজ কান্তি রায় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার গণরুম বিলুপ্তি করার কথা বললেও তারা এখনো সেটা করতে পারেনি। এই প্রশাসন গণরুমকে জাদুঘরে পাঠানোর কথা বলেছিল। আজ তাদের নাকে ডগায় গণরুম চলছে। তাই আমরা বলতে পারি, এই প্রশাসন একটি ব্যর্থ ও অযোগ্য প্রশাসন।’

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক আহসান লাবিব বলেন, ‘গণরুম কালচারের কারণে যে শিক্ষার্থী কখনো মাদক ধরে নাই তারাও একসময় মাদকে আসক্ত হয়ে যায়। গণরুমে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের কারণে একজন নবীন শিক্ষার্থীর মেধা নষ্ট করে দেয়া হয়।’

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের (একাংশ) আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘গণরুম প্রথা জিইয়ে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই দায়ী। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে। তাই ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরেও যখন কোন ছাত্রলীগ নেতা হলে অবস্থান করে তখন তাদেরকে কিছুই বলে না প্রশাসন। অছাত্রদের হল থেকে বের না করার কারণে এই কৃত্রিম আসন সংকট দেখা দিয়েছে।’

এছাড়া মানববন্ধনে বক্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রতিবাদে আগামী সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে আজ।

এর আগে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হলের আসন বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করা হয়। গতানুগতিক ধারায় এবারেও শুধু হলের নাম উল্লেখপূর্বক আসন বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

এদিকে নবীন শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাস শুরুর উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে আসলে দেখা যায় বিপরীত চিত্র। আবাসিক হলগুলোতে আসন সংকটের কারণ দেখিয়ে হল প্রশাসন গণরুমগুলোতেই নবীন শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, অন্যান্য বারের মতো বড় গণরুম না থাকলেও মিনি গণরুম নামে ৪ জনের কক্ষে গাদাগাদি করে থাকার ঠাঁই মিলে নবীন শিক্ষার্থীদের। হল ভেদে প্রতিটি ২ বা ৪ জনের কক্ষে সর্বনিম্ন ৮-১৫ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছে।

গণরুম সংস্কৃতি বিলুপ্ত করে নবীন শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে সিট বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এতোদিন অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল প্রশাসন। তবে কিছুদিন আগে ২০২৩-’২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয় প্রশাসনকে। এরই প্রেক্ষিতে সশরীরে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্তে এসে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস শুরুর ঘোষণা আসে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *