সারাদেশ

মিয়ানমার সরকারের শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ: রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কতদূর?

ডেস্ক রিপোর্ট: মিয়ানমার সরকারের শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ: রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কতদূর?

ছবি: বার্তা২৪.কম

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান থাকা অবস্থায় গাজায় ইসরাইলের নৃশংস হামলা শুরু হয়েছে আর একই সাথে বাড়ছে নিরীহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। সারা বিশ্বের মনোযোগ এখন গাজার নির্মম ভয়াবহতার দিকে। এভাবেই পৃথিবীতে শান্তির বদলে একের পর এক প্রাকৃতিক ও মানুষ সৃষ্ট দুর্ভোগ লেগেই রয়েছে। দিন দিন দুর্ভোগের তীব্রতা বেড়েই যাচ্ছে কিন্তু আগের চলমান সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে না। এর ফলে একটু পুরানো হয়ে যাওয়া সমস্যা নতুন সমস্যার পেছনে চলে যাচ্ছে ও সেসব সমস্যা মনোযোগ ও গুরুত্ব হারাচ্ছে। মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতা চলমান এবং বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকটে বিপর্যস্ত। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এগুলো নতুন সমস্যার আবর্তে পিছিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হওয়ার আগে বিশ্বকে তা কোন ভাবেই ভুলতে দেয়া যাবে না।

মিয়ানমারের সামরিক সরকার পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং চলমান সংঘাতের মধ্যে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সাথে শান্তি স্থাপনের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৫ অক্টোবর মিয়ানমার সামরিক সরকার বহু পক্ষীয় যুদ্ধ বিরতি চুক্তি (এনসিএ) স্বাক্ষরের অষ্টম বার্ষিকী উপলক্ষে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানায়। ২০২১ সালের ১ফেব্রুয়ারি অংসান সুচি’র নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর এই অনুষ্ঠানটি ছিল সামরিক সরকার এবং জাতিগত সংখ্যালঘু নেতাদের সাথে প্রথম এই ধরনের আনুষ্ঠানিক সমাবেশ৷

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে থেকে বহু জাতিগত সেনাবাহিনী তাদের অঞ্চলের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য জাতিগত ভামার সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। মিয়ানমারে সরকারের সাথে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সমঝোতার ফসল এনসিএ সহজে অর্জিত হয়নি। শান্তি আলোচনার জন্য দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো থেকে এর সমাপ্তিতে ১৪৫০ দিন লেগেছে। এইদিন গুলিতে,  ছোট ছোট আলোচনা ও সমঝোতাসহ ৫০০০টিরও বেশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই প্রায় ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমার অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাতের শিকার এবং তা এখনও চলমান।

২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে আটটি জাতিগত সশস্ত্রগোষ্ঠী এনসিএ স্বাক্ষর করে, পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আরো দুটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী অং সান সু চির বেসামরিক সরকারের অধীনে যুদ্ধ বিরতিতে যোগ দেয় ও সবমিলিয়ে ১০ টি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্রোহের অবসানের একটি পদক্ষেপ হিসাবে চুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছিল। মিয়ানমারের সামরিক সরকার গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বিরোধীদের থেকে দেশব্যাপী সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছে। জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির একটি জোট চীন সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় সামরিক লক্ষ্যবস্তু দখল করতে উত্তর-পূর্ব মিয়ানমারে একটি সমন্বিত আক্রমণ শুরু করেছে। সামরিক বাহিনীও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলোতে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।

এই অনুষ্ঠানে ডেমোক্র্যাটিক কারেন বৌদ্ধ আর্মি, কেএনইউ/কেএনএলএপিস কাউন্সিল, ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, আরাকান লিবারেশন পার্টি, শান স্টেটের রিস্টোরেশন কাউন্সিল, নিউ মনস্টেট পার্টি, লাহু ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নসহ সাতটি স্বাক্ষরকারী গোষ্ঠী তাদের প্রতিনিধি পাঠায়। তবে বর্তমান সেনা সমর্থিত শাসনের বিরোধিতাকারী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন, চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এবং অল বার্মা স্টুডেন্টস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, এই তিনটি স্বাক্ষরকারী দল এই অনুষ্ঠানটি বয়কট করে।

এই অনুষ্ঠানকে সফল করার লক্ষ্যে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার সামরিক শাসন বিরোধী জোটকে দুর্বল ও বিভক্ত করার জন্য ২০২২ সালের মে মাস থেকে জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর নেতাদের সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে একের পর এক শান্তি আলোচনার আয়োজন করে। মিয়ানমারে ২১টি প্রতিষ্ঠিত জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে, এর মধ্যে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি এবং ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মিসহ কয়েকটি বড় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠী যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে সমর্থন করেনি। এই তিনটি দল গণতন্ত্রপন্থী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পি ডি এফ) সাথে জোট করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সামরিক বাহিনীর সাথে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এই তিনটি গ্রুপ একটি যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা করেছে যে চুক্তিটি আর বৈধ নয় এবং সরকার চলমান সহিংসতা বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা এনসিএ শান্তি আলোচনায় যোগ দেবে না। এর কারণ হিসেবে তারা জানায় যে সামরিক বাহিনী চুক্তির মূল নীতিগুলিকে অগ্রাহ্য করে বারবার বেসামরিক এলাকা দখল ও বেসামরিকদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার, ফেডারেল গণতন্ত্র বাস্তবায়ন এবং দেশের সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার দাবি জানায় এবং তাদের দাবি পূরণ না হলে সংলাপ হবে না বলে জানায়।

সামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০২২ সালের মে মাস থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দশটিই এ ও’র সাথে তিন দফা শান্তি সংলাপ আহ্বান করে এবং এই শান্তি আলোচনার ফলে চারটি সাধারণ চুক্তিহয়। দেশব্যাপী যুদ্ধ বিরতি চুক্তির অষ্টম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রাজ্য প্রশাসনিক পরিষদের চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় ঐক্য ও শান্তি প্রক্রিয়া কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান, প্রতিরক্ষা বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ সিনিয়র জেনারেল মিন অংহ্লাইং তার বক্তব্যে আট বছ রআগে এনসিএতে অংশ নেয়া জাতিগত নেতাদের যারা চুক্তি স্বাক্ষরে অবদান রেখেছিলেন তাদের সবাইকে আন্তরিক ও উষ্ণ শুভেচ্ছা জানায়। এ নসিএ অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের ৩৫ জন সদস্য, বেসরকারি সংস্থার ১১ জন কর্মকর্তা এবং ৩২ জন কূটনীতিক অংশগ্রহণ করে। থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী, ভারতের উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বিক্রম মিসরি এবং এশিয়ান বিষয়ক চীনের বিশেষ দূত দেং জিজুন এই চুক্তির পক্ষে সমর্থন মূলক মন্তব্য করেছিলেন। থাইল্যান্ড মিয়ানমারের জাতীয় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ও এই চুক্তিটিকে মিয়ানমারের জন্য শান্তি প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করে। থাইল্যান্ড বিশ্বাস করে যেকোনও দেশে শান্তির পথ তার নিজস্ব জনগণ দ্বারা নির্ধারণ করা উচিত এবং মিয়ানমারের সবপক্ষকে এই পথে চলার জন্য থাইল্যান্ড আহ্বান জানায়।

প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও চায় মিয়ানমারে শান্তি ফিরে আসুক এবং একই সাথে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হউক। বাংলাদেশের কক্সবাজারের ক্যাম্প গুলোতে আশ্রয় নেয়া সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার পাশাপাশি প্রতি বছর ৩৩ হাজার করে রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে। গত ছয় বছরে প্রায় দুই লাখ শিশু জন্ম নিয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন, অপহরণসহ সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে দেড় শতাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সক্রিয় রয়েছে।২০১৯ সাল থেকে এপর্যন্ত ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে আরসার সদস্য করা হয়ে ছিল যাদের অধিকাংশই এখন আরসা ছেড়ে আসছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে ৭৩ জন আরসার অস্ত্রধারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হওয়ায় আশ্রয় শিবিরের রোহিঙ্গা তরুণ-যুবকেরা মাদক চোরাচালান, সন্ত্রাসে জড়াচ্ছে, যা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার মধ্যদিয়েই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। বর্তমানে চীনের মধ্যস্থতায় পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফে পাঁচটি ট্রানজিট কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে কেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলে ডিসেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। ক্যাম্প থেকে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের প্রথমে ট্রানজিট কেন্দ্রে আনার পর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তাদেরকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হবে। নিরাপদ বসবাসের নিশ্চয়তা পেলে মিয়ানমারে ফিরতে রাজি অধিকাংশ রোহিঙ্গা। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানায় যে, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে যেকোনো সময় এই প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে এবং স্থলপথ ও নাফ নদী পথে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলবে ।

যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সংকটে সহায়তা প্রদানে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী আফরিন আক্তার ১৭ অক্টোবর উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শন করে জানা য়যে, যুক্তরাষ্ট্র জোর করে প্রত্যাবাসনে আগ্রহী নয়। মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ তৈরির পরই কেবল স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন সম্ভব। জোর করে কিংবা বাধ্য করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চায় না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করছে।

মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে রাখাইনে নিরাপদে থাকার নিশ্চয়তা পেলে রোহিঙ্গারা দ্রুত মিয়ানমারে ফিরতে চায়। কিন্তু এখন যে প্রক্রিয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু হতে যাচ্ছে, তাতে ১২ লাখ রোহিঙ্গার মিয়ানমারে ফিরে যেতে বহু বছর লাগবে। রোহিঙ্গারা এক সঙ্গে বড় দলে ফিরলে রাখাইনে ভালভাবে থাকতে পারবে বলে মনে করে অনেক রোহিঙ্গা। ভবিষ্যতে যাতে তাদের কেনি পীড়নে শিকার হয়ে পুনরায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে না হয়, সেই নিশ্চয়তাও চায় রোহিঙ্গারা। চলমান প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও গ্রহণযোগ্য করতে এর সাথে ইউএনএইচসিআর ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোকেও সম্পৃক্ত করা দরকার বলে অনেকে মনে করে।

মিয়ানমারে গণতন্ত্র ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে গণতন্ত্রকামী দলগুলো এবং প্রতিবেশী দেশ ও আঞ্চলিক সংস্থাগুলোকে সাথে নিয়ে গঠনমুলক ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া গেলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। বাংলাদেশ সব সময় মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক এটাই চায়। একই সাথে বাংলাদেশ আশা করে যে, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে রাখাইনে তাদের স্থায়ী ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করার মাধ্যমে এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় অবদান রাখবে।

অগ্নিগর্ভ রাজনীতি: ‘এই ধ্বংসের দায়ভাগে আমরা দুজনে সমান অংশীদার’

অগ্নিগর্ভ রাজনীতি: ‘এই ধ্বংসের দায়ভাগে আমরা দুজনে সমান অংশীদার’

‘কে সংঘাতপ্রবণ’, এই বিচার করতে করতে দেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে পড়েছে। বিপুল সমাবেশকে শান্তিপূর্ণ রাখতে না পেরে সংঘাতের ফাঁদে পা গলিয়েছে বিএনপি। তাদের দীর্ঘ বছরের লালিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এখন সরকার কর্তৃক আরোপিত ‘সন্ত্রাসমূলক’ অভিযোগে বিদ্ধ। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজনীতির অবসান ঘটছে ২৮ অক্টোবর প্রদোষকালে। পরবর্তীতে তরমা লাগানো হয়েছে ‘ক্রাইম সিন’-এর।

মুদ্রার আরেক পিঠে ২৮ অক্টোবরের শক্তি ও সংঘাতের রাজনীতির প্রলম্বিত ছায়াপাত ঘটেছে। পরবর্তীতে হরতালসহ বিএনপির তিন দিনের অবরোধে জ্বালাও পোড়ায়ের ঘটনা ঘটে চলছে। বিপুল গ্রেফতার আর প্রচুর মামলা ছাড়াও পুলিশের গুলিতে প্রাণহানি হয়েছে। আওয়ানী লীগ মাঠে আছে সরবে। নির্বাচন ও সুষ্ঠু রাজনীতির জন্য ফলপ্রসূ সংলাপ ও সমঝোতার পথের দিকে না গিয়ে বিএনপিকে ঠেকাতে সংঘাতের ফাঁদে যদি ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগও পা দেয়, তাহলে কার লাভ? তখন কে কাকে অভিযুক্ত করবে?

এদিকে, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকায় সংঘটিত সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতারও দাবি জানিয়েছে দেশটি। অনুরূপভাবে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমাবেশকে ঘিরে সহিসংতা ও প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্থোনিও গুতেরেস। তিনি সব পক্ষকে সহিংসতা, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বা নির্বিচারে আটক করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যথারীতিভাবে, লজ্জা ও পরিতাপকে সর্বাঙ্গে জড়িয়ে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ এখন পর্যন্ত মৌনব্রত পালন করছেন। হাজার হাজার মাইল দূর থেকে শান্তির পক্ষে ও সংঘাতের বিরুদ্ধে কথাবার্তা চললেও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বু্দ্ধিজীবীদের মুখে কুলুপ। মাঠে, ময়দানে, এমনকি বিবৃতি বা কলাম থেকেও তারা নিরাপদ দূরত্বে রয়েছেন। অথচ এরাই বাণী ও বচনে দেশের প্রধান মিডিয়ার কাঁধে বসে জাতিকে জ্ঞান দেন।

একমাত্র ব্যতিক্রম অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। যিনি তার সহপাঠী, আটক বিএনপি নেতা মীর্জা ফখরুলের প্রসঙ্গ টেনে বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন। তাঁর সামান্য তৎপরতায় কথিত বুদ্ধিজীবীদের প্যাসিভ চরিত্র পাপমুক্ত হয় না। পাপ অবশ্য এদের থেকে মুক্ত হতে পারে না। বরং খোদ ‘পাপ’কেই হজম করে ফেলতে পারেন না। বাংলাদেশের রাজনীতির মতোই বুদ্ধিবৃত্তিক বলয়ে চলছে নৈরাজ্য।

ফলে সঙ্কট সমাধানে সততার সঙ্গে কেউ এগিয়ে আসার মনোবল দেখাতে পারেন না। সমঝোতার জন্য মাঝখানে দাঁড়ানো হিম্মত দেখানোর ঘটনা তো অকল্পনীয় ও দূরস্থিত। এমনকি ‘উটপাখি’ কবিতায় সুধীন্দ্রনাথ দত্ত’র মতো এতটুকু বলার সাহসও কারো নেই: “আমি জানি এই ধ্বংসের দায়ভাগে/আমরা দুজনে সমান অংশীদার।”

অতএব, বরাবরের মতো বিদেশিদের নসিয়ত আমাদের শুনতে হচ্ছে। আর ভবিষ্যতে সবকিছু শান্ত ও স্বাভাবিক হলে শুনতে হবে ধেড়ে, পাতি ও সিকি বুদ্ধিজীবীর বাগাড়ম্বর!

ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

;

বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টা: সাবধান, সামনে অনাহুত!

বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টা: সাবধান, সামনে অনাহুত!

২৮ অক্টোবর বহুল আলোচিত দিনের নানা ঘটনাপ্রবাহের পর এক রহস্যময় ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলন করে গেলেন বিএনপির কার্যালয়ে। নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘উপদেষ্টা’ দাবি করা ওই ব্যক্তি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে রেখে কথা বললেন। জানালেন, দিনের সবকিছু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানেন। প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানালেন, আওয়ামী লীগ সরকার আর কতদিন ক্ষমতায় থাকবে সেটাও।

বিষয়টি কৌতূহলোদ্দীপক। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা বিএনপির কার্যালয়ে এসে এভাবে কথা বলবেন, এটা ছিল ধারণারও বাইরে। শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ্য হয়েছে। জানা যাচ্ছে, তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা নন। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে ওই ব্যক্তির সম্পৃক্ততার বিষয়কে ‘মিথ্যা’ বলে মন্তব্য করেছে। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আরাফি নামে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি বাংলাদেশ নেই। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কোনো তৎপরতার বিষয়টি গুজব, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুল’।

রোববার জো বাইডেনের কথিত ওই উপদেষ্টা ঢাকায় আটক হয়েছেন। বাংলাদেশ ত্যাগের সময়ে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরাফি শনিবার বিএনপি কার্যালয়ে যখন সংবাদ সম্মেলন করছিলেন তখন উৎসুক চোখগুলো তাকে ঘিরে রেখেছিল। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যে বক্তব্য দিয়েছেন সেগুলোও বিএনপির চাওয়ার সঙ্গে মিলে যায়। একবার নয়, দুই-দুইবার কথা বলেছেন তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনই কেবল নন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীও ছিলেন কার্যালয়ে। আরাফি বলেছেন, ‘শনিবার যা হয়েছে তার আগাগোড়া আমেরিকা জানে। বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করার পেছনে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেওয়া হবে’। তার দাবি কিংবা পূর্বাভাস, ‘৩ নভেম্বরের পর আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না’!

রহস্যময় ওই ব্যক্তি আসলে কে—এ এনিয়ে সন্দেহ আর প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। কীভাবে তিনি বিএনপি কার্যালয়ে গেলেন, কীভাবেই বা তিনি সংবাদ সম্মেলনের সুযোগ পেলেন—এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা জরুরি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন, ‘এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না‘। যে রুহুল কবীর রিজভী মিঞা আরাফির সঙ্গে ছিলেন বিএনপি কার্যালয়ে তিনিও জানেন না কিছু দাবি করছেন। যে ইশরাক হোসেন মিঞা আরাফির পাশে বসা ছিলেন, তিনিও এখন তাকে না চেনার ভান করছেন। বলছেন, ‘সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ওই ব্যক্তির সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় তাদের পাশে বসা ছাড়া তার প্রত্যক্ষ কোনো অংশগ্রহণ ছিল না।’ ওই ব্যক্তির আসল পরিচয় ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে কারো জানার আগ্রহ থাকলে নিজ উদ্যোগে খোঁজখবর নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন ইশরাক।

জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরাফিকে এখন বিএনপির কেউ চিনতে পারছে না। অথচ কী আশ্চর্য বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় পেয়ে তারা তার পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টাই করেনি। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা অবাকই করেছে আমাদের। কেউ এসে কিংবা কেউ কাউকে নিয়ে এসে বাইডেন কিংবা অন্য কারো উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়াই কি যথেষ্ট? এমন না যে বাংলাদেশে আমেরিকা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কোন মাধ্যম নেই। তারা ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত, এবং অথবা অনলাইন মাধ্যমের সহায়তা নিতে পারত।

বিএনপি কি নিজেদের মতো করে আমেরিকাকে ভেবেছে? তাদের ‘চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা’ নামে অগণন উপদেষ্টার মতোই আমেরিকার প্রেসিডেন্টেরও অগণন উপদেষ্টা? আর জো বাইডেনের অবস্থা কি এতখানি খারাপ হয়েছে যে তার কোন উপদেষ্টাকে সংবাদ সম্মেলন করতে বিএনপির কার্যালয় পর্যন্ত ছুটে যেতে হয়? দেশের নানা প্রান্তে নানা বয়সের বয়েসিরা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হয়ে রয়েছেন, জো বাইডেনের উপদেষ্টাদের অবস্থাও কি তাই? হাস্যকরই কেবল নয়, বিএনপির মতো বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দলের নাজুক বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থায় উদ্বিগ্নও। বিএনপির নেতারা যদি ‘সরল বিশ্বাসে’ বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরাফিকে গ্রহণ করে থাকেন, তবেও কথা থাকে; কারণ সারল্যেরও সীমা থাকে! দেশের রাজনীতিতে আমেরিকার প্রভাব নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সময়ে জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়ের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এমন অমনোযোগিতা অপ্রত্যাশিত।

মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরাফির পরিচয় নিয়ে নানা কথার সময়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘একজন ব্যক্তিকে ধরে এনে জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে তাকে দিয়ে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে। গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে দিয়েছে, কথা বলেছে। পাশে আবার তাদের বড় বড় নেতারা বসেছিল। মার্কিন দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে বলেছে, সে সরকারের কেউ নয় এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবও বলেছেন এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। কিন্তু এখানে স্পষ্টত বিএনপি একটি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে’। মন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘আমাদের কাছে যে খবর আছে, সেই ব্যক্তিটি হচ্ছে ইসরায়েলের একজন এজেন্ট, এটি বিভিন্ন সূত্র বলছে। ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত কিছু বলেনি। এজন্য ইসরায়েল বিএনপির ওপর সন্তুষ্ট। অনেকে বলছে, একজন ইসরায়েলি এজেন্টকে তারা পাঠিয়েছে, যাকে নিয়ে কালকে (শনিবার) তারা সভা করেছে।’

তথ্যমন্ত্রী জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়ে সামনে আনা ব্যক্তিকে বিএনপির ‘জালিয়াতি’ বলছেন। তার এই বক্তব্যকে যদি আমরা স্রেফ রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে না দেখি, তবে এটা সত্য সত্যই জালিয়াতি, বড়ধরনের জালিয়াতি। এই জালিয়াতির মাধ্যমে বিএনপি কি সারাদেশে এই বার্তা দিতে চাইছে যে, সরকারের আর বেশিদিন নেই, আগামী ৩ নভেম্বরেই সরকারের পতন হয়ে যাবে। এই জালিয়াতির মাধ্যমে কি বিএনপি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে এই বার্তা দিতে চাইছে যে, আমেরিকার স্যাংশন আসছে?

জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়ে সামনে আনা ব্যক্তিকে দিয়ে বিএনপি কি তবে ২৮ অক্টোবরে রাজনৈতিক ব্যর্থতা আড়াল করতে চাইল? মহাসমাবেশের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত এই বিশ্বাস ছিল যে ২৮ অক্টোবরেই সরকারের পতন হয়ে যাবে। বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সে উচ্চাশা নিয়েই ঢাকা গিয়েছিল, আগ্রাসী হয়েছিল। আর ফিরেছে ব্যর্থ হয়ে। এমন অবস্থায় তাদের হৃত বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে কি এই জালিয়াতি করতে হলো তাদের?

আমরা এখনো জানি না, জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়ে সামনে আনা ব্যক্তিটির কী ছিল উদ্দেশ্য? মিথ্যা পরিচয়ে কেন তাকে গণমাধ্যমের সামনে এনেছিল বিএনপি? মিথ্যা পরিচয় প্রকাশ্য হয়ে যাওয়ার পর এখন কেন সবাই দায় নিতে চাইছে না? তবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনাহুত এই অনুপ্রবেশকারীর উদ্দেশ্য এবং তার সঙ্গীয়দের পরিচয় সামনে আনতে পারবে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তৃতীয় শক্তিকে সামনে আনার দুরভিসন্ধির এই সময়ে অনাহুতদের সম্পর্কে সতর্ক থাকা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি এই পথ বন্ধের ব্যবস্থা করা।

;

২৮ অক্টোবরের ফলাফল চর দখলের রাজনীতির ব্যর্থ মহড়া?

২৮ অক্টোবরের ফলাফল চর দখলের রাজনীতির ব্যর্থ মহড়া?

অনেক বড় ক্ষতি হতে পারতো লক্ষ লক্ষ মানুষের উতপ্ত উপস্থিতির কারণে। ভিন্ন ভিন্ন মতের এতো বিপুল জনসমাগম সামগ্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ হবে বলে অনেকেই আশা করেনি। তারপরেও বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্যের দুঃজনক মৃত্যু হয়েছে। আরও কিছু বিচ্ছিন্ন নাশকতার ঘটনা ঘটলেও বড় কোনও বিপদ হয়নি। এটাই আপাতত স্বস্তিকর। তবে, আশঙ্কার বিষয় হলো, ২৮ অক্টোবর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরীক্ষিত পন্থা আলাপ, আলোচনা, সংলাপ ও সমঝোতার বদলে চর দখলের রাজনীতির একটি ব্যর্থ মহড়া দিয়ে গেলো।

১৭ বছর আগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের দুঃসহ স্মৃতিকে বিবেচনায় নিলে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর হাল্কার উপর দিয়ে গিয়েছে। যদিও ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে আশঙ্কা ছিল জনমনে। ছিল টানটান উত্তেজনা। উৎকণ্ঠা। অনিশ্চয়তা।

তবে এবারের ঘটনাপ্রবাহে ছিল বিদেশি দেশগুলোর পরোক্ষ তৎপরতা। বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নজর রাখছে মনে করে দলগুলো ছিল কৌশলী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল তুলনামূলক সংযত। ফলে সব মিলিয়ে ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি নিরাপত্তার বিবেচননায় ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে।

ভালোর মধ্যেও কিছু মন্দ এড়ানো সম্ভব হয়নি কোনও কোনও পক্ষের অতিউৎসাহী আচরণের কারণে। সারাদিন উত্তেজনার মধ্যেও যখন সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, তখন বেলা দুইটার দিকে নয়া পল্টনে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। পাশের কাকরাইলে, বিজয়নগরে খণ্ড খণ্ড সংঘর্ষ ছড়িয়ে যায়। কিছু ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ উপর্যুপরি টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে বিএনপির জমায়েত।

বরাবরের মতোই কী কারণে সংঘাত শুরু হলো তার পরিষ্কার কোনও ভাষ্য পাওয়া যায়নি। বদলে পারস্পরিক দোষারোপের পালা শুরু হয়। বিএনপি বলেছে, আওয়ামী লীগ তাদের আগে ধাওয়া দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ বলেছে, বিএনপি প্রথমে আক্রমণ করেছে। পুলিশ বলেছে, বাধ্য হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে তারা অ্যাকশনে যেতে বাধ্য হয়েছে।

বিএনপিকে এমতাবস্থায় ভাঙা সমাবেশে সন্তুষ্ট হয়ে কর্মসূচি গুটিয়ে নিতে হয়েছে। মাঠদখলের এতো আয়োজন করে এবং এতেগুলো মানুষকে ঢাকায় ডেকে এনে দলটি কি পেলো? এসব কথা তো তারা সাংবাদিক সন্মেলন ও দলীয় সভা থেকেই বলতে পারতেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতির আরও অনেক শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে দাবি আদায়ের পথে এগিয়ে যেতে পারতো বিএনপি। বিশাল আয়োজন সামাল দিতে না পারায় এবং যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপি নেতৃত্বের প্রতি কর্মী-সমর্থকদের আস্থায় ভাটা পড়তে পারে। ভবিষ্যতে দলের ডাকে লোকজন কতটুকু উৎসাহ দেখাবে, তাও বলা মুস্কিল।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় সন্ত্রাস ও শক্তি প্রয়োগের ঝুঁকি নেয় নি। সফলভাবে নিজেদের কর্মসূচি সম্পন্ন করে সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনসমর্থনের প্রমাণ রেখেছে। দলীয়ভাবে বিরূপ সমালোচনার সম্মুখীন হওয়ার বিষয়গুলোকে সচেতনভাবে এড়িয়ে যেতে সফল হয়েছে আওয়ামী লীগ।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সুচতুর আচরণ করেছে জামায়াতে ইসলামী। অনুমতি না পেলেও বু্দ্ধিমত্তার সঙ্গে সমাবেশ করেছে তারা। শক্তি প্রদর্শন ও সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার অবস্থা থেকে গা বাঁচিয়ে আগেভাগে সমাবেশ শেষ করে নির্বিঘ্নে সরে গেছে জামায়াত। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের রক্তপাতের মতো কোনও দায় এবার তারা তাদের কাঁধে সচেতনভাবেই নেয়নি।

ফলে মূল চাপ গেছে বিএনপির উপর দিয়ে। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে রেখে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশই শেষ করতে পারেনি দলটি। তারা সংঘর্ষ করেছে নাকি সংঘর্ষের উস্কানি বা ফাঁদে পা দিয়েছে, সে প্রশ্নের চেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে সফলভাবে কর্মসূচি সমাপ্ত করতে না পারার ক্ষেত্রে বিএনপির ব্যর্থতার বিষয়টি।

মোদ্দা কথায়, ২৮ অক্টোবরের যাবতীয় রাজনৈতিক তৎপরতার ফলাফল চর দখলের রাজনীতির ব্যর্থ মহড়া হয়ে থাকলো। গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে কোনও ইতিবাচক বার্তা বহন করতে পারলো না। ফলে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন যে চর দখলের রাজনীতির পথে সফলতা পাবে না, সংলাপ-সমঝোতা-আলোচনার মাধ্যমেই লাভবান হবে, এই সত্যটিই আরেকবার স্পষ্টতর হল।

লুৎফে আলি মহব্বত: বিশ্লেষক। কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম।

;

ফিলিস্তিন নিরাপদ না হলে ইসরায়েলও অনিরাপদ থাকবে

ছবি: বার্তা২৪.কম

এখনকার যুগে যুদ্ধের কৌশল ও গতি-প্রকৃতি বদলে গেছে। যোদ্ধা ও যুদ্ধাস্ত্র বিষয়টিও সম্পর্কেও নবতর ধারণার সংযোজন ঘটেছে। রক্তমাংসের যোদ্ধা বা সৈনিকের পরিবর্তে রোবট চালিত স্বয়ংক্রিয় যোদ্ধার প্রচলন অনেক আগেই শুরু হয়েছে। সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত আধুনিক যন্ত্রসৈনিক মোতায়েন করে অনেকে স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে অহমিকা নিয়ে দিন ক্ষেপণ করে চলেছেন। তবে এ সবকিছুতে নিরাপত্তা ও শান্তি মনে করে ক্ষান্ত দিয়ে অবকাশ দেবার ফুরসৎ কোথাও নেই। কারণ প্রযুক্তি নিয়ত পরিবর্তনশীল। প্রযুক্তির পরিবর্তনের এই প্রবণতা এত বেশি দ্রুততার সাথে সংঘটিত হচ্ছে তা অনেক আধুনিক যুদ্ধবেত্তাদের নিকটও বোধগম্য নয়। তার প্রমাণ দেখা গেছে ইসরায়েলের আয়রন ডোমের অসাড়তার বেলায়।

হামাসের স্বল্পপাল্লার রকেটে প্রতি সেকেন্ডে ক্ষেপণগতি ও ক্ষেপণসংখ্যা কিছুটা বাড়ানোর ফলেই কুপোকাত হয়ে গেছে আয়রন ডোম। এতদিনের নির্ভরশীল মনে করা আয়রন ডোম চতুর্মুখী রকেট আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে বাঁক ঘুরতে না ঘুরতেই সেই ফাঁকে শত শত রকেট সামনে এগিয়ে গেছে। সজোরে আঘাত হেনেছে লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে। ইরাক যুদ্ধের সময় আমেরিকার অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ও স্কাড খুব ভয়ংকর অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। কারণ সেটা প্রতিহত করার মতো ইরাকের কোন নিরাপত্তা বলয় ছিল না। এখন ঘাড়ের মধ্যে বহনযোগ্য রকেট ছুঁড়েই অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমানকে ঘায়েল করা হচ্ছে। এসব অস্ত্র পুরনো বিবেচনা করে পশ্চিমা যুদ্ধবাজ দেশগুলো সেগুলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বিনামূল্যে সরবরাহ করে যাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, সেগুলোর কিছু অংশ হামাস ও হিজবুল্লাহর হস্তগত হয়ে সম্প্রতি ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলো দিয়ে শত্রæপক্ষ ছাড়া হামলাকারীরাও হতাহত হয়ে থাকেন। তাই এসব এখন সেঁকেলে অস্ত্র। মানুষ এখন বিলাসী হয়েছে। বিশেষ করে সৈনিকদের আয়াসী জীবন-যাপন করার ব্যবস্থা প্রতিটি দেশেই স্বীকৃত। তারা একটু র্যাংক পেলেই শুধু অধঃস্তনদের নির্দেশ দিয়ে যুদ্ধ করতে পছন্দ করেন।

এছাড়া নিজেরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে নিজেরা বেঁচে থেকে যুদ্ধে জয়লাভ করে আরো বেশিদিন পৃথিবীকে উপভোগ করতে চান। এজন্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত মারণাস্ত্র তৈরির বাজেট বাড়ানো হয়েছে। তাই দেশে দেশে কৃত্রিম বুদ্ধিনির্ভর আরো অত্যাধুনিক অস্ত্র বানানোর জোর প্রচেষ্টা চলছে। অনেক বৃহৎ শক্তিধর দেশ এ ব্যাপারে সফলতার দাবি করে চলেছে। তাহলে আজ থেকে ৪০-৫০ বছর পূর্বে যেসব পারমাণবিক ওয়্যারহেড তৈরি করে নিজেকে মহাশক্তিধর হিসেবে জাহির করে আস্ফালণ চলছে সেগুলো কি গতির নিকট দুর্বল হয়ে ঘুমিয়ে আছে? নাকি হামাসের হাতে নিক্ষেপ করা রকেটের গতির নিকট পরাজিত হয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পূর্বে আকাশেই গুঁড়িয়ে দেয়া সহজ? কারণ তৈরিকৃত সেসব পারমানবিক অস্ত্র কেউ ব্যবহার অথবা ধ্বংস করেছেন বলে শোনা যায়নি। বিপজ্জনক এসব পারমাণবিক অস্ত্রের ভাগ্যে তাহলে কি ঘটবে?

নাকি বর্তমানে সেগুলো ব্যবহারের জন্য কেউ কেউ নিশপিশ করছেন? ইতোমধ্যে গাজা উপত্যকা থেকে সাড়ে এগার লক্ষ্য ফিলিস্তিনিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্যত্র সরে যাবার কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে ঘৃণ্য আক্রমণ চালাচ্ছে ইসরায়েল!

পশিচমারা ইসরায়েলের ব্যাপারে একপ্রকার অন্ধ মায়া দেখায়। তারা ইসরায়েলের অন্যায় দখলদারিত্বকে কোন অন্যায়-অবিচার মনে করে না। সেখানে মানবতাবিরোধী ভূমিকা নিয়ে নৌবহর পাঠিয়ে হুমকি দিচ্ছে গণহত্যা সাধনের। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশে দূত বা টিম পাঠিয়ে মানবতা রক্ষা করার জন্য মিটিং করে চলেছে। ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর তাদের এই বৈপরিত্য ও অবিচার কেয়ামত পর্যন্ত চলবে বলে অনেকে মনে করছেন। অক্টোবর ২৮, ২০২৩ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে সাত হাজার এবং আহতের সংখ্যা অগণিত সংখ্যায় দাঁড়িয়েছে।

ইসরায়েলিরা ভুলে গেছে যে তারা কয়েক দশক আগেও পৃথিবীতে নিজভূমিহারা হয়ে যাযাবর হয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছিল একটি বড় পাপের ফলে। তারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্যকারী ও গোঁয়ার্তুমির জন্য বেপরোয়া ঘৃণিত জাতি হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কোরআনে তাদের ওপর মহান আল্লাহ বলেন, তাদের চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফরী এবং অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করার কারণে আল্লাহ তাদের অন্তরে গোমরাহির সিল মেরে দিয়েছেন। (সূরা নিসা : ১৫৫)। উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর প্রিয় নবীদের হত্যা করার জঘন্য তৎপরতা চালিয়ে তারা প্রমাণ করেছে, তাদের স্বার্থের পরিপন্থী যে কোনো লোককে হত্যা করা তাদের দ্বারা সম্ভব। নিষ্ঠুরতা ইহুদিদের প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি। তারা ২ জন নবীকে হত্যা করেছে এবং আরেকজনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়। হযরত যাকারিয়া (আ:) এবং হযরত ইয়াহ ইয়া (আ:) – কে হত্যা করেছে। তাদের এই পৈশাচিক মনোভাব এখনও বিদ্যমান। তারা হযরত ইয়াহইয়া (আ:)-কে হত্যা করে তার ছিন্ন মস্তক তাদের বাদশাহর রক্ষিতাকে উপহার দেয়। স্বয়ং মুসা (আ:)-এর ওপর তারা ভীষণ নির্যাতন চালিয়েছে। হযরত ঈসা (আ:)-কে তারা ক্রশে বিদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছে। নাম না জানা আরো অনেক নবীকে তারা হত্যা করেছে।’

যুগে যুগে ইহুদিরা পৃথিবীর দেশে দেশে অশান্তি ও গোলযোগ সৃষ্টি করে থাকে। মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মধ্যে ঢুকে কুমন্ত্রণা দিয়ে তাদের বিভিন্ন সমস্যায় নিক্ষেপ করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালায়। এ ব্যাপারে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, যখনই তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালায়, আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন এবং তারা যমীনে ফিতনা ফাসাদ ও গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না।’(সূরা মায়েদা : ৬৪)।

ইহুদীরা শেষ নবী এবং রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সা:) কে একাধিক বার চেষ্টা করেছিল। একবার আলচনার জন্য বসিয়ে রেখে পাথর ছুড়ে হত্যা করার চেষ্টা, আরেকবার মেহমানদারির মধ্যে বিষ যুক্ত খাবার পরিবেশন, আবার যাদু করা (এই প্রেক্ষিতে সুরা ফালাক ও সুরা নাস নাজিল হয়) । অত্যন্ত অপরাধ প্রবণ এই জাতি। পুরো আল কোরআনে এ একবারের জন্যও হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ শব্দটি আসেনি। কিন্তু অনেকবার বনী ইসরায়েল ও ইহুদী এসেছে। বনী ইসরায়েল হযরত মুসা (আ:) কেও অনেক কষ্ট দিয়েছে।’

আল্লাহ ইহুদিদের ওপর স্থায়ীভাবে লাঞ্ছনা, অপমান ও নির্যাতন নির্ধারিত করে দিয়েছেন। যুগে যুগে, ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে তাদের লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেছেন। মিসরের ফেরআউন শাইশাক জেরুসালেম দখল করে এবং ইহুদিদের তাড়িয়ে দেয়। তারপর ব্যাবিলনের রাজা বখতে নসর জেরুসালেম দখল করে ইহুদিদের বন্দি করে নিয়ে আসে এবং তাদের দাস বানিয়ে রাখে। পরে পারস্য সম্রাট ইহুদি দাসদের সেখানে ফেরত পাঠান সত্য, কিন্তু তখন পারস্য সম্রাটেরই অধীন ছিল। ৬৬ খ্রি. রোমান সম্রাট তাইতুস জেরুসালেম দখল করে এবং ইহুদিদের ব্যাপক হারে হত্যা করে। উপরন্তু ৭০ খ্রি. রোমান বাহিনী হাজার হাজার ইহুদিকে বন্দি করে নিয়ে যায় এবং তাদের দাস বানায়। এডলফ হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ইহুদিদের হত্যা করেছিলেন। হিটলারের ইহুদিদের প্রতি ঘৃণার কারণ হিসেবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের জন্য ইহুদিদের দায়ী করার কথা বলা হয়।’

তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে গজবপ্রাপ্ত জাতি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী তাদের ধ্বংস অনিবার্য। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবে না যতক্ষণ না মুসলিমদের সঙ্গে ইহুদিদের যুদ্ধ হবে। মুসলিমরা ইহুদিদের হত্যা করতে থাকবে। তখন তারা (ইহুদিরা) পাথর ও গাছের পেছনে লুকিয়ে আশ্রয় নেবে। তখন পাথর ও গাছ বলবে, হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা, এই তো ইহুদি আমার পেছনে লুকিয়ে আছে। এসো, তাকে হত্যা করো।’(সহীহ মুসলিম)।

যা তারা জেনেও না জানার ভান করে আস্ফালণ করে থাকে। ১৯৪৮ সাল থেকে অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি দখল করে হাজার হাজার নিষ্পাপ ফিলিস্তিনি নারী-শিশুদের অন্যায়ভাবে হত্যা করে তারা ক্রমাগত পাপাচারে লিপ্ত হয়েছে। তারা হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, শরণার্থী শিবির মসজিদ ইত্যাদির উপর নিষিদ্ধ বোমা বর্ষণ করে তিন হাজার হত্যা ও সাড়ে চারলক্ষ ফিলিস্তিনিকে ইতোমধ্যে উদ্বাস্তু করেছে। পানি, ওষুধ, খাদ্য প্রবেশের মূল রাস্তা বন্ধ। এগুলো কি চরম মানবিক অধিকার হরণ নয়?

ন্যাটো একতরফা ইসরায়েলিদের পক্ষ নিয়েছে। জাতিসংঘ চেষ্টা করছে যুদ্ধ থামাতে কিন্তু পশ্চিমাদের কারণে পেরে উঠছে না। রাশিয়া ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলছে। ইরান, ইরাক, পাকিস্তান, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্ব ইসরায়েলিদের এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে জোরালো প্রতিবাদ শুরু করেছে।

ইসরায়েল যুদ্ধবন্ধ না করলে অথবা ন্যাটো দ্বিচারিতা বন্ধ না করলে ফিলিস্তিনিদের নির্মম হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে যে কোন পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাহলে অচিরেই সারাবিশ্বে মহাগোলযোগ শুরু হতে পারে। বিশ্বযুদ্ধের পাকানো সলতের মধ্যে কেউ আগুন ধরিয়ে দিলে গর্জে উঠবে চারদিক। যে যুদ্ধে কেউ জয়লাভ করবে না। যুদ্ধবাজরা বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করার সময় পাবে না। ফিলিস্তিন যতদিন নিরাপদ হবে না ততদিন ইসরায়েল অনিরাপদ থেকেই যাবে। কেউ বিজয় উল্লাসে ফেটে উঠার আগেই মানবতার চরম পরাজয় সাধিত হয়ে সবকিছু নিথর হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে।

*লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডীন। E-mail: [email protected]

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *