সারাদেশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে ৩ কোটি টাকার স্বর্ণ জব্দ

ডেস্ক রিপোর্ট: গল্প শুনতে কার না ভালো লাগে? গল্প শব্দটি উচ্চারিত হলে প্রথমেই মনে আসে গল্প শোনার কথা। দাদু-নানুর মুখে, মায়ের মুখে গল্প শোনা প্রতিটি বাঙালির চিরায়ত স্মৃতির অংশ। সুতরাং, গল্প শুনতে পছন্দ করে সকলেই। এখন প্রশ্ন গল্প- সে আসবে কোথা থেকে? বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলে আর কতটুকুই মজা পাওয়া যায়। সে জন্য চাই গল্পের ভাণ্ডার। তারও কি অভাব আছে আপামর বাংলার সংস্কৃতিতে, সাহিত্যে? একদমই নয়। রাশি রাশি লেখা হয়েছে গল্প। ছোট গল্প, বড় গল্প, গল্পের সমাহার। লেখা হয়েছে উপন্যাস হাজারে হাজার। 

তো? সেসব তো লেখা! তার সাথে গল্প শোনার বা বলার সম্পর্ক কোথায়? সেই প্রশ্নেরই এক দারুণ উত্তর নিয়ে হাজির হয়েছে কাহিনীক! উত্তরাধুনিক যুগে মানুষ যখন আর বই ধরে পড়ার অভ্যাস থেকে সরে দাঁড়িয়েছে; যখন তার হাতে একটি গল্পের বই কিংবা উপন্যাস স্থান হারিয়ে, স্থান করে নিয়েছে একটি মিনি স্ক্রিন অর্থাৎ মোবাইল ফোন; কিংবা আরও সব ডিভাইসে মানুষের সময় কাটে; চোখের দুটো মনি আটকে থাকে একটি আলোয় ভরা স্ক্রিনে; তখন তারা দেখে এটা কিংবা ওটা; দেখে কিংবা শোনে। কেউ গান শোনে, কবিতা শোনে, কিংবা শোনে অন্য কিছু। 

তাহলে তারা কি গল্প শুনতে পারে না? হ্যাঁ পারে। নিশ্চয়ই পারে। সেখানেই কাহিনীক কানেক্ট করছে কান ও কণ্ঠকে। কেউ একজন পড়ে শোনাচ্ছে গল্প। আর শ্রোতা তা মুগ্ধ হয়ে শুনছে। সেই গল্প নতুন বানানো গল্প নয়। বাংলা সাহিত্যের সম্মৃদ্ধ ভাণ্ডার থেকে বাছাই করা শত শত লেখক-সাহিত্যিকের হাজার হাজার গল্প। সে সবই ধীরে স্থান করে নেবে কাহিনীক-এ।

কিভাবে? কাহিনীক একটি অ্যাপ বানিয়েছে! আগেই বলেছি উত্তরাধুনিকের সবশেষ আবিষ্কারকেই কাহিনীক তার গল্প শোনানোর কাজে লাগিয়ে, বাংলা সংস্কৃতির অতি পুরাতন গল্পটিকেও পৌঁছে দিচ্ছে শ্রোতার কর্ণকুহরে। 

কাহিনীক’র অ্যাপটি অতি সহজে আপনি ডাউনলোড করে নিতে পারেন, আপনার হাতের ডিভাইসে। অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইওএস যে কোনো অপারেটিং সিস্টেমে। আর এরপর কিছুই না। পছন্দের বইটি বেছে নিন আর শুনতে থাকুন। ঠাকুরমা যেমন তার গল্পের ঝুলি থেকে একটি একটি গল্প বের করে শোনাতেন কিংবা আরব্য রজনীর শেহেরযাদের গল্প শুনে শুনে শাহরিয়ার যেমন কাটিয়ে দিয়েছিলেন এক হাজার এক রাত, তেমন এক সম্মৃদ্ধ গল্পের ভাণ্ডার এরই মধ্যে তৈরি করে ফেলেছে কাহিনীক। যা শুনতে শুনতে কাটতে পারে আপনার সময়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কাহিনীক নিজে কাহিনী বানাচ্ছে না, অনেক তৈরি কাহিনী সে শোনাচ্ছে গল্পপ্রেমী বাঙালিকে। 

নিউইয়র্কে সম্প্রতি কথা হচ্ছিলো কাহিনীকের রূপকার ইফতেখার আলম ইভানের সঙ্গে। তার কাছেই প্রথম শোনা কাহিনীকের কথা। দ্রুত মোবাইল ফোনটি নিয়ে ডাউনলোড করে দিলেন ‘কাহিনীক’ অ্যাপটি। এরপর বাংলা সাহিত্যের সম্মৃদ্ধ ভাণ্ডারটি যেনো হাতের মুঠোয় চলে এলো। 

ঢুকতেই বাংলাপ্রিয় মানুষের প্রাণের কথা, ডঃ সুজিতকুমার বিশ্বাস-এর গানের কবিতা “আমি বাংলাকে ভালোবাসি, আমি তারই হাত ধরে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আসি।” বাংলাকে ভালোবেসে বাংলা বই পড়তে চাই আমরা সবাই। কাহিনীক’র কথা হচ্ছে- পড়বো? সে সময় কোথা। কিন্তু শোনার জন্য কিছুটা সময় আমরা সত্যিই বের করে নিতে পারি। কারণ আমরা কাজ করতে করতেও শুনতে পারি। যেমন করে গান শুনি, কিংবা শুনি কবিতা পাঠ। তেমনি আমরা গল্পও পাঠও শুনতে পারি। 

ইভান বললেন, সবচেয়ে মোক্ষম সময়টি হচ্ছে গাড়ি চালানোর সময় শোনা। ধরুন আপনি লং রুটে ছুটছেন একা একা। গাড়িতে আপনার সহযাত্রী আছেন কিংবা নেই। অনায়াসেই আপনি গাড়িতে তুলে নিতে পারেন রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র কিংবা হালের হুমায়ুন আহমেদ, সৈয়দ হককে। তাদের লেখা গল্প শোনা যাবে গাড়ির সাউন্ড সিস্টেমে। আর তা যদি শুনতে পান আসাদুজ্জামান নুর কিংবা আরও কোনো মধুর কণ্ঠের কণ্ঠস্বরে। তাহলে তো কথাই নেই!

সেটাই সম্ভব করে তুলেছে কাহিনীক। তারা এখন বাংলার গল্পকার। এক অডিওবুকে এরই মধ্যে শতাধিক বইয়ের সমাহার ঘটিয়েছে। এখন শুধুই শোনা ও সাহিত্য রসের আস্বাদন নেওয়া। ৪০ জন লেখকের বই এরই মধ্যে স্থান করে নিয়েছে কাহিনীকের অ্যাপে। ধীরে ধীরে আরও আসবে। আর বাড়তে থাকবে। 

এ জন্য যথাযথ প্রক্রিয়াটিই অনুসরণ করছে কাহিনীক, বলেন ইভান। বইগুলোর প্রকাশক কিংবা লেখকের নিজের কিংবা পরিবারের অনুমতি নিয়েই তারা একেকটি বই অডিওবুকে পরিণত করছেন। সেরা কণ্ঠের বাচিক শিল্পীদের সাবলীল সুন্দর কণ্ঠে কাগজের পাতার বইগুলো হয়ে উঠছে অডিও বুক। 

গুণগত মানকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি, বলেন ইভান। তার সঙ্গে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি যারা এর গ্রাহক কিংবা ভোক্তা হবেন তাদের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি ও সহজ ব্যবহার উপযোগী করে তোলার উপর। 

প্রযুক্তিগত দিকটি ইভানের নখদর্পণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স গ্রাজুয়েট ইফতেখার আলম ইভান যুক্তরাষ্ট্রের একজন স্বনামধন্য আইটি বিশেষজ্ঞ। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যেসব নতুন নতুন ধারা বিশ্বে এখন প্রচলিত, তার কোনো কোনোটির আর্কিটেক্ট টিমেরই সদস্য, এখন যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রধানসারির ব্যাংকের অন্যতম কর্তাব্যক্তি এই ইভান ইফতেখার। সে গল্প হয়তো আরও কোনো লেখায় তুলে ধরা যাবে। এখন আমরা তার কাহিনীক নিয়েই কথা বলি। 

ইভান বলছিলেন, ২০২৩ সালের বিজয় দিবসে কাহিনীক তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। তবে এমন একটি প্ল্যাটফর্মের স্বপ্ন তিনি দেখে আসছেন আরও আগে থেকে। অতি ব্যস্ততার মাঝে সময় বের করে তিনি এই কাহিনীক’র যাত্রা এগিয়ে নিয়েছেন, এখনো নিচ্ছেন। এই কাজে তার সঙ্গী হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান রেখে চলেছেন তার স্ত্রী শেহলা যামানী ইফতেখার। প্রতিষ্ঠাতা দলে রয়েছেন কো-ফাউন্ডার মামুন আকবর এবং বাংলাদেশ টেলিভিশেনের অতি পরিচিত মুখ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ। আরও রয়েছেন ইমরাদ জুলকারনাইন, মিজানুর রহমান ভূঞা। 

অমর একুশে বইমেলায় অসংখ্য বাংলা বই প্রকাশিত হচ্ছে, তবে তারই পাশাপাশি প্রতিদিনই সম্মৃদ্ধ হচ্ছে কাহিনীক। যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন বই। কাহিনীক বড় হোক বাংলার সাহিত্য ভাণ্ডারের সমান হয়ে, এমনটাই প্রত্যাশা।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *