সারাদেশ

আরও বাড়ল এলপি গ্যাসের দাম, ১২ কেজি ১৪৭৪ টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট: সম্প্রতি কিছু বিশেষায়িত ব্যাংকের তারল্যসংকট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে দিচ্ছে মর্মে জোরাল বিতর্ক চলছিল। জনমনে এ নিয়ে নানা বিভ্রান্তিও ছড়িয়ে পড়তে দেখছি। যদিও অর্থনীতির মত স্পর্শকাতর বিষয়ে সম্যক ধারণা ও নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়া যে কোন বিতর্ক বা আলোচনা সমীচীন নয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সম্প্রতি গণমাধ্যমে যে তথ্য দিয়েছেন, আমরা তাতে আস্থা রাখতে চাই।

এখানে বলা দরকার যে, অর্থ ছাপানোটা কিন্তু অর্থনীতিরই বিষয়। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি থেকে একসময় বলা হয়েছে, দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ও বাজেট বাড়াতে হলে প্রয়োজনে অর্থ ছাপানো যেতে পারে। এখন যেটি বলা হচ্ছে, এটি একটি রুটিন ওয়ার্কের মতো, পলিসি ইনেশিয়েটিভ। কিন্তু দেদারসে টাকে ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়েছে বলে যে দাবি সম্প্রতি করা হচ্ছিল প্রকৃতঅর্থে সঠিক তথ্য নয়। সাম্প্রতিককালে শ্রীলঙ্কার যে অর্থনৈতিক সংকটটা ছিল সেই সংকটে নতুন যে গভর্নর আসলেন, তিনি এসেই বললেন-আমি এক টাকাও ছাপাব না। হয়ত অনেকে মনে করছে, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো তাহলে কিভাবে সামলাচ্ছে? তারা মনে করছে, হয়ত বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপাচ্ছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্রের বক্তব্যে এটি নিশ্চিত হলাম যে, রুটিন ওয়ার্কে যতটা পড়ে (পলিসি ইনেশিয়েটিভ) ততটা করা হয়েছে। 

কিন্তু সংকটের বিবরণ দিয়ে যে গুজব-প্রোপাগান্ডা চালানো হল- জনমনে যে বিভ্রান্তি ছড়াল তা কিভাবে লাঘব হবে? শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়াত্বের ব্যাপারটা যখন ঘটল, তখন বাংলাদেশেও একটা জোরাল আতঙ্ক সৃষ্টির প্রচেষ্টা করা হল। তখন আমরা দেখতে পেলাম, কুষ্টিয়ায় এক দিনে ১৫০ কোটি টাকার মত অর্থ আমানতকারীরা উঠিয়ে নিয়েছে। এ ধরণের আতঙ্ক যদি সমাজে থাকে তখন ব্যাংকগুলো পতিত হওয়ার একটা প্রবণতা সৃষ্টি হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ আমেরিকার সিগনেচার ব্যাংক ও সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল এমনি কিছু কারণে। যদিও আমি দৃঢভাবে মনেকরি মনে করি বাংলাদেশে সেই অবস্থা আসে নি। যা করা হচ্ছে তা সক্ষমতার মধ্যেই করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতিতে এর প্রভাব পড়বে না।

মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি অর্থের সরবরাহজনিত কারণে হয় না। সংকট পরবর্তী কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যদিও আমরা মনেকরি এতে বেশ বিলম্বই হয়েছে। বিশেষ করে নীতিসুদহারের মত পদক্ষেপগুলো যদি এক বছর আগে শুরু করা যেত তাহলে আরও ভাল হত। অন্যান্য যেসব সমস্যা রয়েছে, তার জন্য বিবিধ কারণও রয়েছে। যেমন-ঋণ খেলাপি, অর্থপাচার, বিশেষ করে আমাদের যে রাজস্বনীতি আছে, সেই রাজস্বনীতির কিছু দুর্বলতার কারণে এখনকার ক্রাইসিসগুলো দেখা দিচ্ছে। তাই একেবারে ঢালাওভাবে মন্তব্য না করে তথ্যভিত্তিক কথা বলা উচিত।

মনে রাখা প্রয়োজন, অর্থনীতি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। রাজনীতির মতো বিষয় এটি নয়, যেখানে কেউ একজন একটি মন্তব্য করে বসল, অন্যজন আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে মন্তব্য ছুঁড়ে দিল! সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং বিষয়াবলী নিয়ে যেসব বিতর্ক হচ্ছে সেখানে অবশ্যই দায়িত্বশীলতার ঘাটতি আছে বলেই মনে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের চিন্তায় বিষয়টি নিতে হবে যে আসলে দেশটা তো আমাদের সবার। সুতরাং দেশে কোন ধরনের সংকট সৃষ্টি হয় বা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে এমন কথা কারো বলা উচিত নয়। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে তো তা আরও বলা অনুচিত। কিন্তু আমরা দেখলাম, বাস্তবে তাই ঘটেছে। এখানে পক্ষ-বিপক্ষ আছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর কিছু আলোচনা আমরা মাঝেমধ্যে দেখি।

পূর্বেই উল্লেখ করেছি, যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি ব্যাংক যখন বন্ধ হল এবং শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হল তখন অনেকেই বলেছিল বাংলাদেশও এখন দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। যেকোনো সময় একই ধরনের সংকটে আমরাও পড়তে পারি। সেটাও তো প্রায় এক বছর হয়ে গেলো, কিন্তু অর্থনীতিতে তেমন কিছু ঘটেনি। এবার যেটা আমরা দেখছি, তা হল-সরকার সংকটগুলোকে চিহ্নিত করেছে। এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে  আশার কথা। আমরা যদি ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারের দিকে তাকাই তবে দেখব,  সরকার মূল্যস্ফীতিকে সর্বাগ্রে রেখেছেন। এ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী একাধিক সভায় সাধারণ মানুষের দূর্ভোগের কারণ ও সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের কৈফিয়ত তলব করেছেন।  সাধারণ মানুষের কাছে এই ইতিবাচক খবরটি যাওয়া উচিত । প্রধানমন্ত্রীকে আমরা সংশ্লিষ্ট অনেক উর্ধ্বতনকে সতর্ক করতে দেখেছি। আমার ধারণা, মুনাফাখোরী ব্যবসায়ীরা এতে সতর্ক হয়ে যাবেন; তাই সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয় এমন কথা দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বলা উচিত নয়। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি, সরকারের অনেক দায়িত্বশীল মন্ত্রীও এমন অনেক কথা বলেছেন যা তাদের বলার কথা নয়। শুধু অর্থনীতিই নয়, জাতীয় জীবনের সবকিছুই কিন্তু এখন স্পর্শকাতর। বিশ্বব্যাপি আমরা ভিন্ন একটা অবস্থানের মধ্যে আছি-এটা আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন। বিদেশিদের কাছে, বিশেষ করে বিনিয়োগকারীদের কাছে আস্থাহীনতার সংকট সৃষ্টি করা আমাদের উচিত নয়।

আমরা যদি আরও পেছনে দৃষ্টি ফেরাই তবে দেখব, বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি কিভাবে টিকে আছে, এর সঞ্জীবনী শক্তিটাইবা কি? এক্ষেত্রে বলা যাবে, আমাদের অর্থনীতির কাঠামোটা অনেক শক্তিশালী। যদি আমরা কৃষির কথা বলি, বলতে হবে এটিই আমাদের স্থিতিশীলতার অন্যতম নিয়ামক। 

করোনা অতিমারীর মাঝেও কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় কোন প্রভাব পড়েনি। আমাদের কর্মিষ্ট কৃষকরা তাদের উৎপাদন চালিয়ে গেছেন নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অনেক গৌরবের এক বিষয়। এই কৃষিই আমাদের অর্থনীতির প্রধানতম শক্তিশালী ভীত। এরপরই আসবে রেমিটেন্সের কথা। আমাদের অফিসিয়ালি প্রায় দেড় কোটি লোক বিদেশে আছেন। তারা যদি পঞ্চাশ ভাগ রেমিটেন্স পাঠায় সেটা অর্থনীতির বিরাট চালিকা শক্তি। বিশেষ করে রপ্তানি খাত আরেকটি শক্তিশালী স্তম্ভ। তৈরি পোশাক রপ্তানির কথা উল্লেখ করতেই হবে। এই তিন-চারটি স্তম্ভের উপর আমাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে। কেবলমাত্র সঠিক পরিচালন সক্ষমতার জানান দিয়ে আমাদের বাংলাদেশের অর্থনীতির এই স্তম্ভগুলোকে সচল রাখতে হবে। করোনার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

দেশের অর্থনীতিকে সংকট ও সম্ভাবনা নিরিখে কোন উপায়ে পরিচালনা করা উচিত সেই বিষয়ে অর্থনীতি সমিতি বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। যেমন-ওভারসিস যে ব্যাংকগুলোর ডলার ফ্লু বাড়ানোর জন্য যত ট্যাক্স ছিল তা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেমিটেন্সের বিষয়ে, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোকে আরও সহজীকরণ করা উচিত। আরেকটি বড় সমস্যা হল কার্ব মার্কেটের সঙ্গে ডলারের সরকারি রেটটা বড় গ্যাপ আছে। সে কারণে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে, রেমিটেন্স আসলেও তা যথাযথ চ্যানেলে আসছে না। এই জায়গাতে আরও কঠোর হওয়া উচিত। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সঙ্গে বসে সহজ কি করা যায় তা দেখা উচিত। আগে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো প্রচুর রেমিটেন্স নিয়ে আসত। আমাদের রেমিটাররা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেশে-বিদেশে যথাযথ ট্রিটমেন্ট পান না। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সরকারও চেষ্টা করছে। কিন্তু যাদের দিয়ে নীতিগুলো বাস্তবায়িত হবে সেই জায়গাতে নিশ্চয়ই কোন দুর্বলতা আছে। রেমিটেন্স কিছু বাড়ছে আবার কমছে-এটা হবেই। কিন্তু আমাদের যে পরিমাণ রেমিটাররা আছেন সে অনুযায়ী ফ্লুটা আসছে না। এই জায়গা আরও সুনির্দষ্টভাবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সব সংকটে গবেষণার মাধ্যমেই সমস্যা চিহ্নিত করা উচিত।

আমরা অর্থনীতি সমিতির পক্ষ থেকে জাতীয় বাজেটের আগে একটি বিকল্প বাজেট দিয়ে থাকি। যদিও সেখানে ফিগারটা বড় থাকে কিন্তু সেখানে সবগুলোর ইস্যুর একটা গাইডলাইন আছে। সেই গাইডলাইনটা আমরা এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গাতে দিই। তাতে অনেকগুলো সুপারিশ আছে-তাতে কালো টাকা কিভাবে সাদা করা যাবে, মানি লন্ডারিং কিভাবে কমানো হবে। খেলাপি ঋণের কথাও আমরা বলি। ৩শ’ পৃষ্টার বিকল্প বাজেট দিয়ে থাকি। অনেক সময় এসব সুপারিশের কিছু কিছু প্রতিফলিতও হয়। যেমন ধরুন-৭-৮ বছর আগে থেকে আমরা সার্বজনীন পেনশন স্কিমের কথা বলছি, সেটা গত বছর এসে ইমপ্লিমেন্ট হল। এখন আমরা বলছি, প্রতিটি জেলা ও বিভাগে যেন হিতৈষি সেন্টার করা হয়। আমরা এখন ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্টের সুবিধাটা পাচ্ছি। এটা শেষ হবে ২০৩০ বা ৩৫ সালের দিকে, তারপরে কিন্তু আমাদের বয়স্কদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তাদের কথা চিন্তা করে আমরা বলেছি হিতৈষি সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা কিছু মন্ত্রণালয়কে বিকেন্দ্রীকরণ করতে বলেছি। ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম-দূষণ ইত্যাদি কারণে কথাগুলো বলেছি আমরা। সরকার কতটুকু মানবেন বা মানবেন না সেটা সরকারের বিষয়। আমরা প্রেশার গ্রুপ নই। আমরা কেবলমাত্র আইডিয়া দিতে পারি, গতিবিধিটা নিয়ে কথা বলতে পারি।   

আমরা একাডেমিয়া ও প্রশাসনের মাঝে একধরণের সুসমন্বয়ের তাগিদ দিয়ে থাকি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটারি পলিসি যা প্রতি ৬ মাস পর পর করা হয়, পূর্বে এটি তারা নিজেরাই প্রণয়ন করতো। এখন কিছু একাডেমিশিয়ানকেও তাতে যুক্ত করা হয়, এটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। আমরা বলতে পারি, ধীরে ধীরে সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন আসছে। যদিও গ্যাপটি এখনও আছে। এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ থাকবে, যেই ব্যক্তি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাকে খোঁজে সেখানে কাজে লাগানো। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায়োগিক ক্ষেত্রে একাডেমিশিয়ানদের যুক্ত করা হলে তাতে গবেষণালব্ধ জ্ঞান কাজে লাগানোর বিষয়টি প্রধান্য পাবে। বাংলাদেশের ব্যাংকের পলিসি নির্ধারণী কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধানকে অন্তর্ভূক্ত করাও একটি অগ্রগতি বলব।   এছাড়া যে বিষয়টি আমরা বার বার জোর দিয়ে আসছি তা হচ্ছে, যথাযোগ্য ব্যক্তিকে যথাস্থানে পদায়ন করা; যেমন-অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষজ্ঞদের বসানোটা জরুরি। তবেই সম্ভাবনার সবগুলো ক্ষেত্রকে আমরা আমরা বিকশিত ও সম্প্রসারিত করতে পারব।  

আমাদের ভাবতে হবে কেন আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, আজ বাংলাদেশকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে? তার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ এখন বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্টের ভার্জিন। আমাদের অবকাঠামোর যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, বিশেষ করে- চট্টগ্রামে টানেল, পদ্মাসেতু-এগুলো হওয়ার কারণে বৈশ্বিক ট্রেড সেন্টারে পরিণত হওয়ার মতো অবস্থা তৈরী হয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে অনেকগুলো দেশ ইতিমধ্যে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব কিছুই যদি বাস্তব হয় তাহলে বাংলাদেশ কোন অবস্থায় চলে যাবে ভাবা যায়? আমাদের বিনিয়োগকারীদের ভূমিকাও সেখানে কম নয়। ইতিমধ্যে ১০-১২টি দেশ বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে। এই বিনিয়োগবান্ধব জায়গাগুলোকে যদি আমরা আরও বেশি তৈরি করে রাখতে পারি তাহলে তো আমাদের বিনিয়োগ আরও বাড়বে। আমরা যা ভাবছি তার চেয়েও বেশি আমরা আশা করতে পারি। এর জন্যই আমাদের দেশের স্থিতিশীলতা ও উজ্জ্বল ভাবমূর্তি খুবই প্রয়োজন। বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোও বন্ধ হওয়া জরুরি।

আরেকটি জায়গায় আমরা বিশেষ জোর দিতে চাই তা হচ্ছে-মানবসম্পদ উন্নয়ন ও তা যথাস্থানে কাজে লাগানোর নীতি চূড়ান্ত করা। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে- চার/পাঁচ বছর পড়ে ডাক্তারি পাস করার পরে একজন গ্রাজুয়েট গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হলেন, কিংবা বাংলা বিষয়ে পড়ে সে গিয়ে এনবিআরে চাকরি নিল। দেখা যাচ্ছে-গ্রাজুয়েটদের মধ্যে এই প্রবণতাটা ক্রমেই বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা এখন বিসিএসের জন্য তার একাডেমিক পড়াশোনা প্রায় বাদ দিয়ে দিয়েছে। এই জায়গাগুলোতে যদি আমরা নজর না দেই তাহলে কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ভালো ফল দিবে না। এগুলোর জন্য নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে যে, বিশেষায়িত যে বিষয়গুলো রয়েছে সেই বিষয়ক চাকুরির ব্যবস্থা করা। কেউ কৃষিতে পাস করে এসে যখন ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছেন তখন এটি আমাদের রিসোর্সের অপচয়। এই জায়গাতে যারা পলিসিমেকার আছেন, তাদেরই ভাবতে হবে যাতে রাইটপার্সনকে রাইট পজিশনে বসানো হয়।

বিশেষায়িত ব্যাংক বিশেষ করে, ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর কথা যদি বলি, তবে দেখব রেমিটেন্স আহরণসহ নানা ক্ষেত্রে এই ব্যাংকগুলো খুবই ভালো পারফর্ম্যান্স করছে, এখন আমাদের ভাবতে হবে এগুলোকে আরও গতিশীল করতে কি কি করার আছে। এক্ষেত্রে বলতে হবে, নানা রকম ইন্টারভেনশনের ফলে এই ব্যাংকগুলোকে ঘিরে যে আস্থাহীনতার সংকট তৈরি হয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে হবে। এগুলোর রাষ্ট্রেরই ব্যাংক। সুতরাং ভেবে দেখতে হবে, একটি উদীয়মান ব্যাংকে যখন ইন্টারভেনশন হয়, তখন সেই ব্যাংকটির ভালো নাকি মন্দ হয়? এই সব ব্যাংককে যাঁরা খারাপ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন- তাদের যদি আইনের আওতায় আনা হয় এবং জনগণের কাছে এটি সন্দেহাতীতভাবে যদি আস্থাহীনতার সংকট দূরীভূত করা যায় তবেই পুরো দৃশ্যপট বদলে যাবে।

ব্যাংকগুলো ভালোভাবে চলুক, সেই পরামর্শ-দিকনির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই দেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে আমি যদি তার গতিবিধি বাধাগ্রস্ত করতে কোন ব্যবস্থা নিই, তাহলে তো উল্টো হয়ে গেল। যে ব্যাংবগুলো ভালো চলছে, সেই ভালো চলাকে কিভাবে আরও গতি বাড়াতে পারি সেই পরামর্শ দেব বা সুযোগ সৃষ্টি করব। কিন্তু সেই জায়গাতে তা করা হচ্ছে না। যদিও আমি আশাবাদী সমস্যাাগুলো গণমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞদের কল্যাণে চিহ্নিত হয়েছে, এখন এটাকে কিভাবে সমাধান করবে, তা নিয়ে সরকারের কমিটমেন্ট দরকার। সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর গেল ক’দিন যেসব তৎপরতা আমি দেখছি, যদি এটি অব্যাহত থাকে তাহলে আমরা ভালো দিকে যাবো। বিশেষ করে বৈদেশিক যে সংকট চলছিল তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব। 

আমাদের সংবিধানে আছে, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। এটাকে ভিত্তি ধরে আমাদের অর্থনৈতিক কুটনীতি ও ভূ-রাজনীতিকে সমান্তরালে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা মনে করি, আমাদের সেই সক্ষমতা আছে। আর বাংলাদেশ নিজেই একটি স্বকীয় অবস্থানে আছে, বিদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রাখার বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব যতখানি আছে, তাদেরও তেমনি দায়িত্ব আছে। অন্যদেশের সঙ্গে সামাজিক, অর্থনৈতিক, কুটনৈতিক ভাবে সম্পর্ক উন্নয়ন করার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। বৈশ্বিক ভরকেন্দ্র কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে। অনেক কিছুই এখন ইউরোপ-আমেরিকা থেকে এশিয়ার দিকে ধাবিত। আমাদের পররাষ্ট্র নীতিতেও এ বিষয়ে নতুন চিন্তাভাবনা করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা এক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করছে। যতই হতাশার কথা বলা হোক না কেন, বিশেষ করে বাণিজ্য ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে সংকটগুলো বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠবে। নির্বাচনটা চলে গেল। এখন যদি সংসদটা কার্যকর হয়, জনগণের মধ্যে যদি আস্থাটা ফিরে  আসে, তখন বিদেশের আস্থাও ফিরে আসবে। তারাও মনে করবে দেশটা ভালো ভাবে চলছে। এখানে সবার স্বার্থ আছে। আমাদের অর্থনীতি ভালো ভাবে চললে তাদের স্বার্থ আছে। এখানে স্থিতিশীলতা থাকলে তাদের রপ্তানি-আমদানি বাড়বে। নির্বাচনের আগে আমরা অনেক কথা শুনেছি, নির্বাচনের পরে কিন্তু নির্বাচনের পর অনেকের অবস্থানই পরিবর্তন হয়েছে। এটাই তাদের পলিসি। আমরা নিজেরা যদি ঠিক থাকি, সরকার যদি সুশাসনটা নিশ্চিত করতে পারে- সুশাসনটা দেশের জন্য যতখানি দরকার ভাবমূর্তির জন্যও দরকার। সুশাসন, অর্থপাচারসহ কয়েকটি বিষয়ে খুবই কঠোর হওয়া প্রয়োজন। সেইসঙ্গে অতিঅবশ্যই অপতথ্যের আগ্রাসন এবং দায়িত্বহীন মন্তব্য বন্ধ করতেই হবে।

লেখক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *