খেলার খবর

কটিয়াদীতে মাঠের দ্বন্দ্বে প্রাণের ঝুঁকিতে দুই গ্রামের বাসিন্দারা

ডেস্ক রিপোর্ট:  

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার সশ্রম-ধুলদিয়া ইউনিয়নের সতেরদ্রোন ও রায়খলা দুটি গ্রামের মধ্যে একটি খেলার মাঠ। মাঠ খেলার হলেও এটা থেকেই সমানে চলে বিবাদ, আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব। মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে দুই গ্রামের ছোটদের দ্বন্দ্বের বিস্তার ঘটে বড়দের মাঝেও। সংঘর্ষে ঘটে হতাহতের ঘটনাও।

মাঠে সৃষ্ট পূর্ব-বিরোধের জের ধরে গত বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে নয়টার দিকে সহশ্রাম ধুলদিয়া ইউনিয়নের গচিহাটা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে কাছারিপাড়া মোড়সংলগ্ন এলাকায় কুপিয়ে নয়ন নামের একজনের দুই হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেয় দুর্বৃত্তরা। তিনি এখন ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন।

আহত নয়ন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি। তার পিতা শাহজাহান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান। তারা সতেরদ্রোন গ্রামের বাসিন্দা।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) কটিয়াদী থানায় হত্যাচেষ্টা ও অঙ্গহানির অভিযোগে মামলা করেন নয়নের ভাই শফিকুল ইসলাম। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে ১৯ জনকে। প্রধান আসামি উপজেলার সহশ্রাম ধুলদিয়া ইউনিয়নের রায়খলা গ্রামের আবু বক্কর মিয়া। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত।

মামলার বেশির ভাগ আসামি রায়খলা গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন সুরুজ মিয়া (৪৫), আলামিন মিয়া (২৬), শহিদুল ইসলাম (২৪) ও শাকিব মিয়া (২৪)। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গচিহাটা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আকতারুজ্জামান। তিনি জানান, তদন্তের স্বার্থে মামলার সব আসামির নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ, এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পেশিশক্তি, আধিপত্য বিস্তার, গ্রাম্য ও গোষ্ঠীগত বিরোধ ও ভিলেজ পলিটিক্সের প্রভাব রয়েছে যথেষ্ট। দেড়বছর আগে সতেরদ্রোন স্কুল মাঠে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সতেরদ্রোন এবং রায়খলা গ্রামের ছেলেদের সাথে ঝগড়ার বাঁধে। এ ঝগড়া ছড়িয়ে পড়ে রায়খলা ও সতেরদ্রোন গ্রামে। এর জের দুই গ্রামবাসীর মধ্যে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে রায়খলা গ্রামের মো. হুমায়ুন নামে একজনের মৃত্যু হয়। আহত হয় উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন। কটিয়াদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ৩১ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।

মো. হুমায়ুনের মৃত্যুর পর তার ভাই মামুন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় নয়নের বাবা শাহজাহান মিয়াকে প্রধান আসামি করা হয়। নয়ন মামলার ২ নম্বর আসামি। তবে অভিযোগপত্র থেকে দুজনের নাম বাদ পড়ে। বাদী এই বিষয়ে আপিল করেন। দেড় বছর আগের ঘটনা নিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা এখনো চলমান। নয়নের ওপর হামলার পর বিষয়টি নতুন করে সামনে আসছে।

আহত নয়নের মামাতো ভাই মো. ফয়সাল বর্তমানে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে নয়নের সঙ্গে রয়েছেন। ফয়সাল জানান, নয়ন এখনো কথা বলতে পারছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে এখনো পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নন তিনি। তার হাতের বাকি অংশ রক্ষা করা সম্ভব না–ও হতে পারে।

আহত নয়নের বক্তব্যের বরাত দিয়ে মো. ফয়সাল জানান, হামলাকারীদের একজন নয়নের হাত ধরেন, অন্য একজন কোপান। হামলাকারীদের কয়েকজনকে তিনি চিনতে পেরেছেন। এসব তথ্য পুলিশকেও জানানো হয়েছে।

হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, হামলার কারণ জানা জরুরি। প্রথমে কারণ বের করার চেষ্টা চলছে।’

কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ জানান, ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তার করার জন্য জোর চেষ্টা চলছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ ডট কম-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *