আন্তর্জাতিক

বিএসএফের বাধায় বন্ধ কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণের কাজ

ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধার মুখে এক সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে বেনাপোল স্থলবন্দর কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালের একাংশের নির্মাণ কাজ। ৩৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে বেনাপোল বন্দর ভেহিকেল টার্মিনালের নির্মাণ শুরু হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুনের মধ্যে। এ পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৬৫ শতাংশ। 

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনো জটিলতা না কাটায় নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে ও নকশা অনুযায়ী কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। 

বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারতের ২৪ পরগণায় অবস্থিত পেট্রাপোল বন্দর আধুনিকায়নে ২০১৬ সালে সীমান্ত ঘেঁষে মাত্র ১০ মিটার জায়গা ছেড়ে ১৫০ গজের মধ্যেই ৪২ একর জমিতে সু-সংহত চেকপোস্টের   নির্মাণ কাজ শেষ করে ভারত। যেখানে বাণিজ্য নিরাপত্তায় রয়েছে শতাধিক বিএসএফ সদস্য।

পরে আলোচনা সাপেক্ষে ৮ বছর পর একই নিয়মে জায়গা ছেড়ে বাংলাদেশ অংশে ২০২২ সালে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর সম্প্রসারণে ৪১ একর জমিতে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করে। তবে গত ২৫ জানুয়ারি হঠাৎ করেই ৪১ একরের মধ্যে ১৬ একর জায়গায় ইয়ার্ড নির্মাণের চলমান কাজে  বাধা দেয় বিএসএফ। পরে ১৫০ গজ জায়গা ছাড়তে  হুমকি দিয়ে নির্মাণাধীন কাজ বন্ধ করে নির্মাণ সামগ্রী আটকে দেয়। একপর্যায়ে অসহায়ের মতো  ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ  ১৫০ গজ জায়গা ছেড়ে লাল পতাকা উড়িয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।

বর্তমানে এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ভয় ও সীমান্তে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএসএফের বাধায় কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালের ৩৯ হাজার ৬২২ মিটার জায়গা হাতছাড়া হয়েছে। এতে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে ও নকশা অনুযায়ী কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, ভারত তাদের ১৫০ গজ সীমানার মধ্যে স্থায়ী নির্মাণ কাজ করতে পারলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কেন একই ধরণের নির্মাণ কাজে বাধা সৃষ্টি হবে?  রাষ্ট্রিয়ভাবে এ সমস্যা দ্রুত মোকাবিলা করে উন্নয়ন কাজ চালুর দাবি জানান তারা।

কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালের নির্মাণ কাজের সাব ঠিকাদার মোজাম্মেল হোসেন বার্তা২৪.কম’কে জানান, গুলি করার ভয় দেখিয়ে কাজ বন্ধ করেছে বিএসএফ। নির্মাণ সামগ্রীও আটকে দিয়েছিল।

সীমান্তবাসী জানান, বাংলাদেশ সীমানায় ১৫০ গজের মধ্যে বিএসএফ কাউকে যেতে দিচ্ছে না। এতে বর্তমান অবস্থা নিয়ে গ্রামবাসীও আতঙ্কে রয়েছি।

কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালের নির্মাণ কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসএস আর গ্রুপের প্রজেক্ট ম্যানেজার মন্নু বিশ্বাস বার্তা২৪.কম’কে জানান, ভারত ১০ মিটার জায়গা ছেড়ে পেট্রাপোল বন্দরের স্থাপনা নির্মাণ করেছে। আমরা পেট্রাপোল বন্দরকে জানিয়ে করে ১০ মিটার জায়গা ছেড়ে কাজ করছিলাম। হঠাৎ বিএসএফের বাধায় কাজ বন্ধ আছে। এতে নিদিষ্ট সময়ে উন্নয়ন কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি।

বেনাপোল আমদানি রফতানি-সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বার্তা২৪.কম’কে জানান, প্রতিবছর বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্যে হয়ে থাকে। উন্নয়ন কাজে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। এখানে বাধা আসা দুঃখজনক।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল বার্তা২৪.কম’কে জানান, ভারত ১০ মিটারের মধ্যে তাদের নির্মাণ কাজ অবাধে শেষ করেছে। তাহলে বাংলাদেশকে একই সীমানায় উন্নয়ন কাজে কেন ১৫০ গজ ছাড়তে হবে? এটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বিএসএফের। বন্দরের উন্নয়ন কাজের স্বার্থে চলমান সংকট নিরসনে আশা করছি। ভারত অতীতের মতো তার বন্ধুত্বের পরিচয় দেবে।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বার্তা২৪.কম’কে জানান, বর্তমানে বিএসএফের বাধায় চলমান ১৬ একরের কাজ বন্ধ আছে। আইনি প্রক্রিয়ায় যাতে নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারি তার সহযোগিতার  জন্য বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে চিঠিতে অবগত করা হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *