সারাদেশ

সীমান্তে চলছে সংঘর্ষ, ১০৬ বিজিপি সদস্য প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে

ডেস্ক রিপোর্ট: বিতর্কিত প্রকৌশলী সুদীপ বসাককে ফের চসিকে ফেরানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তাকে চসিকে পুনরায় পদায়নের অনুরোধ জানিয়ে গত ২০ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের কাছে চিঠি দিয়েছেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। সেই চিঠির একটি কপি বার্তা২৪.কমের হাতে এসেছে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, সড়ক মেরামত/রক্ষণাবেক্ষণ এবং সড়কবাতি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। এসব নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের যান-যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে যান্ত্রিক শাখা পরিচ্ছন্ন বিভাগ ও প্রকৌশল বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ-শাখাকে সহযোগিতা করে থাকে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘যান্ত্রিক শাখার শাখা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সুদীপ বসাককে গত ২০২২ সালের ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বদলি করা হয়। তার জায়গায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সিলেট বিভাগ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকবর আলীকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করা হয়।’

‘তবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আকবর আলী ২০২৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর অবসর-উত্তর ছুটিতে (পিআরএল) ছুটিতে যাবেন। বিধিমতে এক বছর পূর্বে তাকে তার নিজের বিভাগে তথা এলজিইডিতে ফেরত যেতে হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কর্মরত যান্ত্রিক শাখার একজন নির্বাহী প্রকৌশলী ইতোমধ্যে পিআরএল ছুটিতে আছেন এবং অপর নির্বাহী প্রকৌশলীও এ বছর পিআরএল ছুটিতে যাবেন। ফলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যান্ত্রিক শাখায় বড় ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হবে এবং নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও জনভোগান্তি দেখা দিতে পারে।’

সুদীপ বসাককে পুনরায় একই পদে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এ অবস্থায় ভোগান্তিযুক্ত নাগরিক সেবা প্রদান, পরিচ্ছন্ন আধুনিক নগরী গঠন এবং সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যান্ত্রিক শাখায় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত মো. আকবর আলীকে বদলি করা হোক। আর তার স্থলে এই করপোরেশন হতে ইতঃপূর্বে বদল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অ.দা.) সুদীপ বসাককে পুনরায় বর্ণিত পদে পদায়ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ভাড়া আত্মসাৎ এবং বেআইনিভাবে দোকান বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ উঠে প্রকৌশলী সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে। পরে তাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বদলি করা হয়।

তবে সুদীপ বসাককে পুনরায় ফিরিয়ে আনার এই প্রস্তাব নিয়ে চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তারা বলছেন, বিতর্কিত ও দুর্নীতির অভিযোগের পর বদলি হওয়া এক কর্মকর্তাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার অর্থ অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দেওয়া।

২০০৬ সালে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে যোগ দিয়েছিলেন সুদীপ বসাক। এর এক পর্যায়ে পান মেকানিক্যাল বিভাগের অতিরিক্ত সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব। ২০১৫ সালের পর থেকে চসিকে তার প্রভাব বাড়তে থাকে। একের পর এক পদোন্নতি, একের পর দায়িত্ব নিয়ে চসিকে বেশ প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে দুদক ও মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, চট্টগ্রাম আয়োজিত এক শুনানিতে সুদীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন চসিকেরই সাবেক এক কর্মকর্তা।

ওই গণশুনানিতে সিটি করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী শামসুল হুদা ছিদ্দিকী অভিযোগ করেন, ট্রলি সংস্কার দেখিয়ে মেসার্স মাসুম এন্টারপ্রাইজের নামে ভুয়া বিল তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক ও অন্যরা। এ ছাড়া সাগরিকায় নতুন অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টে ১২৯ জন লোক নিয়োগ দিয়েছেন তারা। এরপর তার বিরুদ্ধে অন্যরাও মুখ খুলতে শুরু করেন। যদিও সবসময় অভিযোগ অস্বীকার করে গিয়েছেন সুদীপ বসাক।

২০২২ সালে সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে আবারও নানা অভিযোগ সামনে আসে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ভাড়া আত্মসাৎ এবং বেআইনিভাবে দোকান বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ২০২২ সালের ১৫ মার্চ চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও সেই প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনি।

যদিও তদন্ত কমিটি গঠনের সেই আদেশে বলা হয়েছিল, দুই বছর ধরে প্ল্যান্ট, রোলার ও মরদেহ পরিবহন ভাড়া সিটি করপোরেশনের তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া নগরের পাঁচলাইশে শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিজের সামনে বেআইনিভাবে দুটি দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

তবে সুদীপ বসাককে ফেরানোর উদ্যোগের বিষয়ে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্য কোনো কর্মকর্তাও এই বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *