সারাদেশ

জাটকা আহরণে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা

ডেস্ক রিপোর্ট: দলীয় সরকার না নির্দলীয় সরকার, কীভাবে হবে জাতীয় নির্বাচন তা নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে চলছে চরম উত্তেজনা। বিএনপিসহ কয়েকটি বিরোধীদল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। বড় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মাঠে মুখোমুখি অবস্থানের মধ্য সংবিধানের বাধ্যবাধকতা থাকায় শুরু হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণ গণনা। সে অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংবিধান অনুয়ায়ী সরকারের মেয়াদের সবশেষ ৯০ দিনের মধ্য হতে হবে নির্বাচন। সেই হিসবে আজ পহেলা নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে দ্বাদশ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা।

নির্বাচন আয়োজনে ইসি এরইমধ্য সব কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। ইসি থেকে নির্বাচনের ব্যয়, সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ, প্রস্তুতি, বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে তাদের প্রস্তুতির জানান দিচ্ছে। সাংবিধানিক পথে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপও ইতোমধ্যে তৈরি করেছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন পুনর্বিন্যাস, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও সারাদেশের তিনশ সংসদীয় আসনে ৪২ হাজার ৩৫০টি পোলিং সেন্টারের খসড়া তালিকাও সম্পন্ন করেছে ইসি। নভেম্বরে প্রথম আর্ধে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করবে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র ও ভোটার সংখ্যা……..

দেশে বর্তমান মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ জন। আর নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৮৩৭ জন। তরুণ ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করায় এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে প্রায় ১০ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।  নির্বাচন আয়োজনে ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১০৩টি।  এতে ভোটকক্ষ রয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজারের মতো।

নির্বাচন আয়োজনে ব্যয়………

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়।  ইসি সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং কর্মকর্তাদের দুই দিনের সম্মানী ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে তাদের এক দিনের ভাতা দেওয়া হতো। পাশাপাশি জ্বালানি খরচও এবার আরও বাড়বে। নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন ৯ লাখের বেশি সরকারি–বেসরকারি কর্মকর্তা। নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা, নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভাতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভাতা মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এর বাইরে নির্বাচনী প্রশিক্ষণে খরচ হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি। যদিও প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হলে মোট খরচ আরও বাড়বে। সশস্ত্র বাহিনী সাধারণত মোতায়েন করা হয় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। এবার সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। নির্বাচনে  সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হলে এ খাতে ব্যয়ও আরও বাড়বে।

নির্বাচনী সরঞ্জাম…..

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শতাধিক আসনে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবগুলো আসনে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করা হবে। সেই জন্য যেসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লাগে যেমন স্বচ্ছ ব্যালট বক্স, সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, অমোচনীয় কালি, অফিসিয়াল সিলসহ ৯২ ধরনের সরঞ্জামের ক্রয়পত্রও তৈরি করছে। যার মধ্য বেশীরভাগের সরঞ্জাম কমিশনের হাতে এসে পৌঁছেছে।  

এরই মধ্য নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য সচ্ছ ব্যালট বক্স ও ব্যালট পেপারসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম আঞ্চিলক নির্বাচন অফিসে পাঠানো হয়েছে। আওঞ্চলিক অফিস থেকে নির্বাচনের আগে মাঠ পর্যায়ের অফিস গুলোতে পাঠানো হবে। এইসব সরঞ্জাম। এরই মধ্য নির্বাচনী সরঞ্জাম ও মাঠ পর্যায়ের অফিসের নিরাপত্তায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণায়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ব……….

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের  প্রশিক্ষণ দেওয়ার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। ধাপে ধাপে বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনওদের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ এরই মধ্য শেষ পর্যায়ে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে এই সময় বেশ কিছু বার্তাও দেওয়া হয়। এদিকে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন কর্মকর্তারা একটি বৈঠকে ইসির কাছে দাবি করেছিলো জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে যেন রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়। এই বিষয়ে এখনো ইসি থেকে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি ভোট কারচুপি ঠেকাতে ভোট গ্রহণের জন্য ব্যালট পেপার ও বক্স কেন্দ্র গুলোতে ভোটের দিন সকালে পাঠানোর চিন্তা করচে ইসি।

নির্বাচনে পর্যবেক্ষক……….

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে ৬৬ স্থানীয় পর্যবেক্ষক ও সংস্থাকে অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপিয় ইউনিয়নের চার সদস্যর একটি পর্যবেক্ষক টিম আসবে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিদেশি আরও পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি………

নির্বাচন আগে পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকও করেছে। বৈঠকে নির্বাচন আয়োজনে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন প্রতিবন্ধকতা নেই বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে গতকাল বিএনপি’র ডাকা হরতাল আগামী তিনদিনের অবরোধের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্বের সাথে তদরকি করছে। এই বিষয়ে তারা সতর্ক থাকবেন বলে কমিশনকে আশ্বস্ত করেছেন।

নির্বাচন আয়োজনে সংবিধানে কি বলা হয়েছে………

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।

চলতি একাদশ সংসদের প্রথম বৈঠক বসেছিল ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সেই হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ বহাল রেখে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে এর পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যে কারণে, আজ ১ নভেম্বর থেকে সেই ৯০ দিন গণনা শুরু হয়েছে।  সাধারণত ভোটগ্রহণের দিনের আগে ৪২ থেকে ৪৫ দিন সময় হাতে রেখে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে থাকে নির্বাচন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে। এই সময় ধরেই নভেম্বরের প্রথম আর্ধে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে পারে ইসি।

গতকাল মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্ধারিত পদ্ধতির মধ্যে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেই ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে অবস্থানে আছি।  পরিবেশ প্রতিকূল হলে নির্বাচন করা হবে না, এই ধরনের কোন ভুল বোঝাবোঝি যেন জনগণের মধ্যে না থাকে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন নির্ধারিত পদ্ধতির মধ্যে এবং সময়ে মধ্যে অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেই ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে অবস্থানে আছি।”

তিনি আরও, আমাদের হাতে কোন অপশন নেই। নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন অপশন থাকে। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেও পারে, আবার নাও করতে পারে। তারা এককভাবে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারে, আবার জোট করেও নির্বাচন করতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বিভিন্ন ধরনের অপশন আছে কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সেই ধরনের কোন অপশন নেই।

নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নানান মতবিরোধের মধ্য জাতীয় নির্বাচনের খন শুরু নিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বার্তা ২৪.কমকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন হবে, না অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে এটাই বড় বিষয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আজকেও ইসির সাথে বৈঠক করে বলেছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সমঝোতার এবং শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, দেখুন কমিশনের হাত-পা বাঁধা। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। নির্বাচনের তাদের ক্ষণ গণনা শুরুর নূন্যতম ১৫ দিন হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করতেই হবে।  এটা সে মাজামাঝি হোক, প্রথমদিকে হোক, নভেম্বরে শেষে হোক। কারণ ভোট সম্পূর্ণ্য করার ডেড  লাইন হল জানুয়ারির ২৪,  ফলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এতে কোন ব্রেকথ্রো  ঘটে কিনা। মীমাংসা হতে পারে কিনা নাকি ১৫ ফেব্রুয়ারির মত একটি অবস্থাও পর্যবেষ্টিত হতেও পারে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *