আন্তর্জাতিক

নকশায় ত্রুটি সারানোর টাইমলাইন মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে বোয়িং!

ডেস্ক রিপোর্ট: বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স এর সার্টিফিকেশনের আগে এন্টি-আইস সিস্টেমের পুনঃনকশাকরণে (রি-ডিজাইন) ১২ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে বলে জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক অ্যারোস্পেস কোম্পানি বোয়িং। এদিকে, বিশেষ এই এয়ারক্র্যাফটটি কখন সার্টিফিকেশন পেতে পারে সে সম্পর্কেও পাওয়া যাচ্ছে না সুনির্দিষ্ট তথ্য।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহীরা বলছেন, ম্যাক্স-৭ এর ইঞ্জিন এন্টি-আইস সিস্টেম কার্যকরভাবে চালু করতে আরো এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। তবে আপাতদৃষ্টিতে সেই টাইমলাইনটিও দীর্ঘায়িত হতে পারে এমনটাই ধারণা করছেন এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা। কারণ বোয়িং নিজেই এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট টাইম লাইন দিতে নারাজ। বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) হাতে ঝুলে রয়েছে বলে জানাচ্ছে এয়ারক্র্যাফট প্রস্তুতকারক সংস্থাটি।

যদিও বোয়িং আশা করেছিলো ২০২৩ সালের মধ্যে ৭৩৭ ম্যাক্স ৭ এর সার্টিফিকেশন পেয়ে যাবে। এবং ম্যাক্স ৭ এর নতুন উড়োহাজাজ সরবরাহের কাজ ২০২৪ এ শুরু করতে পারবে। কিন্তু গত বছর বোয়িং ইঞ্জিনের অ্যান্টিআইস সিস্টেমে ওভারহিটিং সংক্রান্ত সমস্যার কারণে বেশ কিছু উড়োজাহাজ উড্ডয়ন যোগ্যতা হারায়।  এ অবস্থায় সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া যাতে আটকে না যায় সে জন্য গত নভেম্বরে বিধানটি থেকে সাময়িক অব্যহতি চায় বোয়িং। আইনটি থেকে ২০২৬ সালের মে পর্যন্ত এই অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বলা হয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বরং এসব কারণে সার্টিফিকেশনের প্রক্রিয়াটিই ঝুলে যায়।

বোয়িং বলছে, তারা সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানে কাজ করছে। তবে পুরো বিষয়টি এতটা ঘোট পাকিয়েছে যে সমস্যাটি ম্যাক্স-৭ এর টাইমলাইনে প্রভাব ফেলবে কি না, তা স্পষ্ট হওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এফএএ’র কাছে বাড়তি সময় প্রার্থণার মধ্য দিয়ে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, কোম্পানিটিকে নিজেকে প্রস্তুত করতে আরও সময় লাগবে।  

অপর একটি খবর বলছে, গত ২৯ জানুয়ারি, বোয়িং তার অনুরোধ প্রত্যাহার করে নেয় এবং সার্টিফিকেশন চাওয়ার আগে নকশাটি ঠিক করবে বলে জানিয়ে দেয়। তার পেছনে রাজনৈতিক চাপ কাজ করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে উঠে আসে। বলা হয়েছে, কোম্পানিটি এসময় যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে এভিয়েশন সাব-কমিটির চেয়ার সিনেটর ও সাবেক পাইলট ট্যামি ডাকওয়র্থের কড়া  চাপের মুখে পড়ে। তাতে ডার্কওয়র্থের সাথে দেখা করতে বাধ্য হন বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী।

গত ৩১ জানুয়ারি বোয়িংয়ের ২০২৩ উপার্জন সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট দেওয়ার সময় প্রধান নির্বাহী ডেভিড ক্যালহাউন নিজেই বিষয়টি জানান। তিনি বলেন যে তিনি সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে ডাকওয়ার্থের সাথে দেখা করেন। তিনি সিনেটরকে বলেছেন, ৯ মাসের মধ্যে সমস্যাটির প্রকৌশলগত একটি সমাধান তারা নিশ্চিত করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

একটি খবরে বলা হয়েছে, ডাকওয়ার্থ সে সময় ক্যালহাউনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, সার্টিফিকেশনের পরে নয়, আগেই এন্টি-আইস সিস্টেমের পুনঃনকশাকরণের কাজ শেষ করতে হবে বোয়িংকে। আর তাদের সেফটি সার্টিফিকেশন স্ট্যান্ডার্ড থেকে সাময়িক অব্যহতিদানের আবেদনটিও প্রত্যাহার করে নিতে হবে। যা পরে একটি বিবৃতিতে নিজেই জানান ডার্কওয়র্থ।  তিনি বলেন, বোয়িং নিশ্চিত করেছে তারা  আবেদনটি প্রত্যাহার করবে এবং ত্রুটিমুক্ত হওয়ার আগে বোয়িং এর ৭৩৭ ম্যাক্স ৭ অপারেশনে যাবে না। এ ধরনের অপারেশন যাত্রী নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এসময় ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকেও বোয়িংএর আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানান এই সিনেটর।

৩১ জানুয়ারি বোয়িংয়ের ওই কর্মসূচিটি থেকে এর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ব্রায়ান ওয়েস্টও কথা বলেন। তিনি বলেন, এক বছরের পুনঃনকশাকরণের কাজ শেষ হতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ তিনি উল্লেখ করতে পারেন নি। বোয়িংয়ে কর্তাব্যক্তিরা সেদিন এফএএ ম্যাক্স পরিবারের সবচেয়ে বড় সদস্য ম্যাক্স ১০ কবে নাগাদ সার্টিফিকেট পেতে পারে সে বিষয়টি নিয়েও আনুমানিক টাইমলাইন উল্লেখ করতে অস্বীকার করেন। অথচ ২০২৩ এর শেষ কোয়ার্টারেই শুরু হয় ম্যাক্স ১০ এর সার্টিফিকেশন সংক্রান্ত ফ্লাইট টেস্ট কর্মসূচি।

ওয়েস্ট বলেন, এফএএ যখন সিদ্ধান্ত নেবে তখনই এর প্রত্যয়ন মিলবে।

ওভারহিটিং এর এই বিষয়টির সাথে বোয়িং ও এফএএ উভয়ই পরিচিত। সমস্যাটির কারণে ইঞ্জিন ব্যারেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  বোয়িংয়ের যতগুলো মাক্স ভেরিয়েন্ট রয়েছে সবগুলোতেই এই ওভারহিটিং ইস্যু রয়েছে। ২০২৩ সালে বোয়িংয়ের দুটি চালু ম্যাক্স মডেল- ম্যাক্স-৮ এবং ম্যাক্স-৯ এর ঝুঁকির কথা জানিয়ে উড্ডয়ন যোগ্যতা বিষয়ক নির্দেশনা পাঠায় এফএএ। ওই নির্দেশনায়ও ম্যাক্স এর বেশ কিছু অপারেশন নিষিদ্ধ করা হয় এবং বৈমানিকদের কখন এন্টি আইস সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে তা সুনির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হয়। 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *