সারাদেশ

জনবল সংকটে ফেনীতে কমেছে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান

ডেস্ক রিপোর্ট: দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে হুট করেই বেড়ে যায় যে কোনো একটি পণ্যের দাম। ভোক্তাদের দাবি এমতাবস্থায় প্রয়োজন নিয়মিত বাজার মনিটরিং। কিন্তু ফেনীর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভুগছে জনবল সংকটে। ফেনীতে নেই কোনো নিয়মিত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। নোয়াখালীর সহকারী পরিচালক ফেনীতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। যার ফলে কমেছে বাজার পর্যবেক্ষণ।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে  সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ৯ মাসে মাত্র ৫৬ দিন অভিযান পরিচালনা করে হয়েছে। যার মধ্যে ১১০ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা হয়েছে ৮ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা। ৯ মাসে অভিযোগ ছিল ৩৮টি যার মধ্যে কিছু অভিযোগ অভিযোগকারীরা উগ্র করেছেন এবং বাকিগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে। এতে কোনো জরিমানা করা হয়নি। অন্যদিকে ২০২২ সালে  জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০৩ দিন অভিযান পরিচালনা করে ১৬১টি  প্রতিষ্ঠানকে ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এতে দেখা যায় বিগত বছরের ১২ মাসে যে অভিযান হয়েছিল চলতি বছরের ৯ মাস শেষ হওয়ার পথে থাকলেও গতবছরের কাছাকাছি ও যাওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জেলাপ্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, প্রতিমাসে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ জেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। আমি ফেনীতে এসে সভা করতে গিয়ে জানতে পেরেছি ফেনীতে নিয়মিত কর্মকর্তা নেই। গত সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বর্তমানে যিনি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন তিনি নোয়াখালী জেলায় ৩ কর্মদিবস করে ফেনীতে ২ কর্মদিবস কাজ করবেন। সে অনুযায়ী তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং এ দুদিন বাজার পর্যবেক্ষণ করবেন। পাশাপাশি নির্ধারিত কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে ফেনীতে যাতে নিয়মিত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় এবং তা দ্রুত সামাধান হবে।

বাজার পরিদর্শনের বিষয়ে তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বাজার পর্যবেক্ষণ অব্যাহত আছে। হোটেল মালিকদের সাথে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে বাজার দর অনুযায়ী হোটেলের পণ্যের দাম সমন্বয় করার জন্য। তারা এতে রাজি হয়েছেন। বাজার দর অনুযায়ী কিছুটা কমিয়ে আনবেন যা ইতোমধ্যে কয়েকটি হোটেল বাস্তবায়ন করেছেন।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যর বাজার স্থিতিশীল রাখতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং সবসময় অব্যাহত থাকবে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ফেনীর সহকারী পরিচালক ( অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ কাওসার মিয়া বলেন, নিয়মিত কর্মকর্তা না থাকার অভিযানের সংখ্যা অনেক কমেছে এটি সত্য। নিয়মিত একজন কর্মকর্তা থাকলে ফেনীতে আরও বেশি অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১৩ থেকে ১৭ টি জেলায় নিয়মিত কর্মকর্তা নেই। এটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যে জনবল রয়েছে আমরা সেটি দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি বাজার পর্যবেক্ষণ করার জন্য। আমি ফেনীতে ২ দিন অভিযান পরিচালনা করি এবং নোয়াখালীতে ৩ দিন করি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে হেড অফিসে কথা হয়েছে। কর্মকর্তা নিয়োগ হলে সর্বপ্রথম ফেনীতে নিয়োগ দেয়া হবে।

উপজেলা পর্যায়ে ভোক্তার অভিযান পরিচালনার বিষয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনগনের জন্য ভোক্তা অধিকারের ১০০ জন অফিসার রয়েছে। যার ধারা সারাদেশ নিয়ন্ত্রণে আনা কখনোই সম্ভব না। নিয়মিত তদারকি করতে হলে অফিসার বাড়ানো লাগবে এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা লাগবে। এতে করে উপজেলা ব্যাপী অভিযান করা সম্ভব হবে। জনবল বাড়লে তদারকি আরও ভালো হবে।জেলাপ্রশাসন এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করে কিন্তু তাদের অনেক কাজ থাকে। ভোক্তা অধিকারের জনবল বাড়ানো হলে সাধারণ জনগণ উপকৃত হবে।

অন্যদিকে বাজার পর্যবেক্ষণ বাড়ানোর জোর দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষরা। তারা বলছেন, সিন্ডিকেট করে হুট করে দ্রব্যে মূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। ১ সপ্তাহ সেটি অব্যাহত থাকলেও ভোক্তার পকেট থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। নিয়মিত যদি বাজার পর্যবেক্ষণ করা হয় সেক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীরা এমন কাজ করার সুযোগ পাবে না।

রহিম উল্ল্যাহ নামে একজন ক্রেতা বলেন, যেটা কিনতে যাব সেটির দাম বেশি। এক দুই দিনের মাথায় আকাশ ছোঁয়া দাম হয়ে যায়। সংকট দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। এসব কিছু নিয়ন্ত্রণের জন্য অভিযান পরিচালনার বিকল্প নেই। আইনের আওতায় আসলে ব্যবসায়ীরা সাবধানী হবে। জবাবদিহিতা না থাকলে বাজারের দশা আরও খারাপ হবে।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকলে ব্যবসায়ীদের জন্যও ভালো। অন্যথায় বেশি দাম দিয়ে কিনে এনে পরে দেখা যায় অভিযান করলে দাম কমে যায়। এতে আমাদের লোকসান গুনতে হয়। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনার কথা জানান তারা।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *