সারাদেশ

আইডিএলসি’র সব সেবা মিলবে নগদ অ্যাপে

ডেস্ক রিপোর্ট: মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরতিহীন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এই কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ সীমান্তও। প্রতিদিন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে আসছেন বাংলাদেশে। ওপার থেকে মাঝে মাঝে মর্টার শেলও এসে পড়ছে এপারে। সেই মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশিসহ দুজন নিহত হওয়ার পর আতঙ্কিত স্থানীয়দের অনেকেই সরে পড়েছেন ঘরবাড়ি ছেড়ে।

প্রতিবেশী দেশটিতে চলমান এই যুদ্ধের প্রভাব শুধু সীমান্তে নয়, কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরেও পড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি ৯০ শতাংশ কমে গেছে। এ কারণে একদিকে যেমন পণ্য আমদানি রফতানি হচ্ছে না অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার। মিয়ানমারের যুদ্ধপরিস্থিতি দীর্ঘ হলে সেই সংকট আরও ঘনীভূত হবে।

টেকনাফ স্থল বন্দরের সঙ্গে মূলত পণ্য আমদানি-রফতানি হয় মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর হয়ে। রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে পড়েছে এই আকিয়াব বন্দর। টেকনাফের উল্টো পাশে নাফ নদীর ওপারেই মংডুর অবস্থান। টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে শহরটির দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। কিন্তু যুদ্ধের কারণে সেটিই হয়ে দাঁড়িয়েছে বহু দূরত্বের। টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় অচল হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন এ বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা।

গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে রাখাইনের উত্তরাঞ্চল ও পাশের চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরে জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। এই পরিস্থিতিতে ১৪ নভেম্বর থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যের অচলাবস্থা শুরু হয়। ওই সময় ২১ দিন পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। এরপর ৫ ডিসেম্বর মংডু শহর থেকে কয়েকটি পণ্যের চালান নিয়ে চারটি ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে আসে। আমদানি-রফতানির এই দূরাবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

টেকনাফ স্থল বন্দরের কর্মকর্তা আর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় বন্দরের জেটি ফাঁকা পড়ে আছে। আগের মতো কার্গো ট্রলার বা জাহাজও নেই। বন্দরে কর্মরত শ্রমিকেরাও অনেকটা অলস সময় পার করছেন। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরের প্রধান ফটকে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের জটলা দেখা গেলেও এখন সেই চিত্র নেই। নাফ নদীতেও নেই পণ্যবোঝাই ট্রলার-জাহাজ।

৯০ শতাংশ পণ্য আমদানি-রফতানি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুরও।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা এখন কিছুই করতে পারছি না। নতুন করে কোনো পণ্য আমদানি-রফতানির উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। যেগুলো আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে সেই পণ্যগুলো অনেক ঝুঁকি নিয়ে পাঠাচ্ছে সেখানকার রফতানিকারকেরা। তাও আমরা বারবার তাদের চাপ দিয়ে যাচ্ছি বলে।’

মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে ব্যবসা একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে এহতেশামুল হক বাহাদুর আরও বলেন, ‘আমাদের অ্যাসোসিয়েশনে প্রায় ১০০জন আমদানিকারক আছেন। এখন যদি মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি করতে না পারি, তাহলে আমরা সবাই বিপদে পড়ে যাব। গত কয়েকমাস ধরে মাঝে মাঝে সামন্য পণ্য আসছে-যাচ্ছে। কতদিন আর এভাবে টেনে নেওয়া যাবে।’

স্বাভাবিক সময়ে অন্তত ১২ থেকে ১৫টি ট্রলার পণ্য নিয়ে মংডু থেকে টেকনাফে আসে। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা দাড়িয়েছে ১-২টিতে। টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানিকারক ওমর ফারুক সিআইপি বলেছেন, ‘বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) তিনটা ট্রলারে পণ্য এসেছে। আগেরদিন মঙ্গলবার সেই সংখ্যা ছিল ১টি। সোমবার এসেছিল দুটি ট্রলার। মালামাল আসছে বটে, তবে তা আগের চেয়ে অনেক কম।

আমদানি যে একেবারেই কমে গেছে সেটি বোঝা যাবে বন্দরের আমদানির হিসেবটা সামনে আনলে। টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে মূলত মিয়ানমারের পণ্যই বেশি আসে। বাংলাদেশ থেকে প্লাস্টিক অ্যালুমিনিয়াসহ কয়েক ধরনের পণ্য রফতানি হয়। বিপরিতে মিয়ানমার থেকে মাছ, শুটকি, আচার, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয়।

বন্দরের শুল্ক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে এই বন্দর দিয়ে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টনের বেশি পণ্য আমদানি হয়। সেই চিত্র বদলাতে শুরু করে নভেম্বর মাস থেকে। ওই মাসে বাণিজ্য কম হওয়ায় ৪ হাজার ৯৩৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। ডিসেম্বর মাসে সেটি আরও কমে এসে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৩৬ টনে। জানুয়ারিতেও প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে তাও কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে স্বাভাবিক সময়ে এই বন্দর থেকে গড়ে প্রতিদিন তিন কোটি রাজস্ব আয় হতো সরকারের। এখন পণ্য পরিবহন কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ও শূন্যের কোটায় নামার উপক্রম হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে টেকনাফ স্থল বন্দরের একজন কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এখন বাংলাদেশ থেকে সেখানে কোনো পণ্য রফতানি হচ্ছে না। সেখান থেকে মাঝে মধ্যে কিছু পণ্য আসছে। তাও অনেক ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারগুলো আসছে। সেজন্য বলতে গেলে আমদানি-রফতানি বন্ধের পথে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা যেমন লোকসানে পড়ছেন, তেমনি রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতি কবে শান্ত হবে-সেই দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া ব্যবসায়ীদের সামনে আর বিকল্প পথও নেই।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *