সারাদেশ

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মার্চে আন্তর্জাতিক দরপত্র

ডেস্ক রিপোর্ট: সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মার্চেই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করার কথা বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বার্তা২৪.কমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারেই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, আমরা মার্চেই দরপত্র উন্মুক্ত করতে চাই। বিড ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য ৬ মাস সময় দেওয়া হবে। নভেম্বর বা ডিসেম্বরে পিএসসি (উৎপাদন ও বন্টন চুক্তি) চূড়ান্ত করতে চাই। এর আগে বিভিন্ন দেশে রোড-শো করা হবে।

আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল ও শেভরনের মতো কোম্পানি যারা আগে আগ্রহ দেখিয়েছেন তাদের বিষয়ে কি ভাবা হচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেছেন, আমরা প্রতিযোগিতামূলক দরের দিকে যাচ্ছি। এখানে যে কোম্পানির প্রস্তাব সুবিধাজনক হবে এবং যাদেরকে যোগ্য মনে করা হবে তারাই কাজ পাবে। সবার আগে দেশের স্বার্থ।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিসহ অনেক ছাড় দিয়ে মডেল পিএসসি-২০১৯ (উৎপাদন ও বন্টন চুক্তি) সংশোধন করা হয়েছে। গত বছরের ২৬ জুলাই ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয় পিএসসি-২০২৩। এরপর নির্বাচনী ডামাডোলের কারণে পিছিয়ে যায় দরপত্র।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্যই আকর্ষণীয় করা হয়েছে পিএসসি। আগের পিএসসিগুলোতে গ্যাসের দর স্থির করা দেওয়া হলেও এবার গ্যাসের দর নির্ধারিত করা হয়নি। ব্রেন্ট ক্রডের আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে উঠানামা করবে গ্যাসের দর। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রডের ১০ শতাংশ দরের সমান। অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রডের দাম ৮০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ৮ ডলার। যা বিদ্যমান পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ডলার ও ৭.২৫ ডলার স্থির দর ছিল। ব্রেন্ট ক্রডের দামের ক্ষেত্রে সারা মাসের দর গড় হিসাব ধরা হবে।

দামের পাশাপাশি সরকারের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের অনুপাত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর কমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠানামা করবে। তবে ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের দুই বছরের মধ্যে কূপ খনন করে গ্যাস না পেলে কিংবা, বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য না হলে শর্তসাপেক্ষে যথাক্রমে ১ ও ২ শতাংশ হিস্যা বাড়ানোর সুযোগ থাকছে। গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে প্রথম প্রস্তাব পেট্রোবাংলাকে দিতে হবে, পেট্রোবাংলা নিতে না চাইলে তৃতীয়পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুযোগ পাবে বিদেশি কোম্পানি।

আন্তর্জাতিক আদালতে ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। এক দশক পেরিয়ে সেই সমুদ্র সীমার সফলতা কোনই কাজে আসেনি, বিশেষ করে খনিজ সম্পদের ক্ষেত্রে। নতুন দরপত্রের মাধ্যমে সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দেশের ভয়াবহ জ্বালানি সংকটের স্বস্তিকর সমাধান এই বিশাল জলরাশির নিচে লুকায়িত বলে মনে করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। কারণ বাংলাদেশের ব্লকের পাশেই মিয়ানমার বিশাল গ্যাসের মজুদ পেয়েছে। সাগরে দরপত্র আহ্বান করেও খুব একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। বাংলাদেশের পিএসসি-২০১৯ আকর্ষণীয় নয়, বহুজাতিক কোম্পানির এমন অভিযোগে হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে (আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়)।

অন্যদিকে বিশাল সমুদ্রসীমায় একটি পূর্ণাঙ্গ বহুমাত্রিক জরিপ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে নাম দিয়ে ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। নরওয়ের কোম্পানি টিজিএস এবং ফ্রান্সের স্লামবার্জার কনসোর্টিয়াম তাদের রিপোর্ট গুছিয়ে এনেছেন বলে পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, মডেল পিএসসি আকর্ষণীয় করার কারণে অনেক বড় বড় বিদেশি কোম্পানি সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

২০০৮ সালের গভীর সমুদ্রের ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ নম্বর ব্লক ইজারা পেয়েছিল আমেরিকান কোম্পানি কনোকো ফিলিপস। কোম্পানিটি দুই বছর অনুসন্ধান করার পর চুক্তি সংশোধন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির দাবি জানায়। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় ব্লক দুটি ছেড়ে দিয়ে চলে যায় ২০১৪ সালে। অন্যদিকে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক দরপত্রে গভীর সমুদ্রের ডিএস-১২, ডিএস-১৬ ও ডিএস-২১ এই তিন ব্লকের জন্য যৌথভাবে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছিল কনোকো ফিলিপস ও স্টেট অয়েল। পরবর্তী সময়ে কনোকো নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ব্লকগুলো ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। একই সময়ে অগভীর সমুদ্র্রের ব্লকগুলোর জন্য ভিন্ন একটি দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। ওই দর প্রক্রিয়া এসএস ১১ নম্বর ব্লক সান্তোস ও ক্রিস এনার্জি এবং এসএস ৪ ও এসএস ৯ নম্বর ব্লক ভারতীয় দুটি কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ (ওভিএল) ও অয়েল ইন্ডিয়া (ওআইএল) ইজারা নিয়েছিল। সান্তোস এসএস-১১ ব্লকে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপ করার পর কূপ খনন না করেই বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। ওএনজিসি দুই ব্লকে থ্রি-ডি ও টু-ডি সাইসমিক জরিপ চালানোর পর ৪ নম্বর ব্লকে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করে, কিন্তু গ্যাস মেলেনি। তারা আরও দুটি কূপ খনন করবে বলে জানা গেছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *